যুগের নারায়ণগঞ্জ:
৫ই আগষ্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় স্বেরাচারী দোসরদের প্রধান আওয়ামী সভানেত্রী শেখ হাসিনা। দলীয় প্রধানের পলায়নের পর পরই সারা দেশের ন্যায় নারায়নগঞ্জের রাজনীতিতে আওয়ামীলীগের এমপি থেকে শুরু করে দলের বিতর্কিত নেতৃবৃন্দও দলীয় প্রধানের পথকে অনুসরন করে তারাও দেশে ছেড়ে আবার অনেকে আত্মগোঁপনে চলে যান।
এরপর থেকেই আওয়ামীলীগের দখলে থাকা বিভিন্ন অবৈধ সেক্টর গুলো বিএনপির নেতৃবৃন্দ দখলে নিয়ে নেয় বলেও অভিযোগ উঠে আসছে। আর সেক্টর দখল করাকে কেন্দ্র করে কয়েক দফা সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। এমনকি, বিভিন্ন মসজিদ মাদ্রাসাগুলোর কতৃত্বও বিএনপির নেতৃবৃন্দ তাদের দখলে নিয়ে নেন। এক্ষেত্রে স্থানীয় মুসলীদের মতামতকে গুরুত্ব না দিয়ে যোগ্যতাহীন ব্যক্তিকে মসজিদ কমিটিগুলোর গুরুত্বপূর্ণ পদ দখলে রাখতে দেখা গেছে।
তবে পরিতাপের বিষয়, গত ১৬ বছর আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতৃবৃন্দকে ম্যানেজ করে যেভাবে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে আসছিল ঠিক একি ভাবে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে স্বেরচারী সরকারের পতন ঘটলে এলাকার পদ পদবী বহন করা বিএনপির প্রভাবশালী নেতৃনৃন্দের আশ্রয়ে সেই পুরানো রূপেই আবিভূত হয়ে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে আসছে সেই আওয়ামী দোসররাই। এমনই গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে ফতুল্লার ভোলাইল গেউদ্দার বাজার বায়তুল জামে মসজিদের কমিটির ক্ষেত্রে। স্থানীয় প্রভাবশালী বিএনপি নেতা জাহিদুল ইসলাম জাহিদের ছত্রছায়ায় আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত নজরুল ইসলাম রনিকে উক্ত মসজিদ কমিটির সাধারন সম্পাদক পদে অদিষ্ট করার পর থেকে সাধারন মুসল্লিদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রীয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
অবশ্য বিএনপি নেতা জাহিদের দাবি, মসজিদ কমিটির সাধারন সম্পাদক নজরুল ইসলাম রনির আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে কখনো জড়িত ছিলেন না। উল্টো উক্ত মসজিদ কমিটির সাবেক সাধারন সম্পাদক বদিউল আলম বদু ছিলেন স্বের শাসকদের দোসর। মসজিদ কমিটিকে স্বেরাচার দোসরদের অবাঞ্চিত ঘোষনা করে যোগ্য নেতৃত্বের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে।
এদিকে, বিএনপি নেতা জাহিদের বক্তব্যকে দ্বিমত পোষন করেছেন ভোলাইল গেউদ্দারবাজর এলাকার সাধারন মুসল্লিরা।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক মুসল্লিরা জানান, বর্তমান মসজিদ কমিটির সাধারন সম্পাদক আওয়ামীলীগ নেতা সাইফউল্লাহ বাদলের রাজনীতির সাথে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত ছিলেন। ১৫ই আগষ্ট থেকে শুরু করে আওয়ামীলীগের প্রতিটি প্রোগ্রামে তাকে নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে। এমনকি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়া ছাত্রদের উপর হামলার নেতৃত্ব দিয়েছে বর্তমান মসজিদ কমিটির সেক্রেটারী রনি।
তাছারা, নজরুল ইসলাম রনির ফ্যামিলি ব্যাকরাউন্ডের খোঁজ নিলে দেখা যাবে, তার পরিবারের প্রতিটি সদস্য আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে সরাসরি জড়িত। এমনকি গত ১৬ বছরে মুজিবকোর্ট পরিহিত ব্যতিত তাদের পরিবারের কাউকেই দেখা যায়নি।
অথচ, এই রনি নাকি বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত! তাছাড়া, স্বেরাচারী দোসর মুক্ত মসজিদ কমিটি মুক্ত হলেও এখনোতো বিএনপি নেতা জাহিদের শেল্টারে আরেক স্বেরাচারী দোসর রনির নিয়ন্ত্রনেই চলে গেল মসজিদ কমিট! স্থানীয় এলাকায় যোগ্য মানুষ এবং মুরুব্বী থাকা স্বত্ত্বেও পুচকো একটা ছেলের নিয়ন্ত্রনে মুরুব্বীরা থাকবে বিষয়টি সত্যিই দুঃখ জনক।
তাই এলাকাবাসী, স্বেরাচারী দোসরদের প্রেত্বত্ত্বা রনির কবল থেকে মসজিদ কমিটিকে মুক্ত করার জন্য জেলা বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এলাকাবাসী আরো অভিযোগ করেন, বিএনপি নেতা জাহিদ একজন পরীক্ষিত নেতা। দলের জন্য তার অবদান রয়েছে এটা আমরা বিশ্বাস করি। তবে, ৫ই আগষ্টের পর পরই আমরা তার অন্য একটি রূপ প্রত্যক্ষ করি। এলাকায় প্রভাব বিস্তারসহ আওয়ামী দোসরদের পূর্নবাসনের চেষ্টা করে আসছে জাহিদ। এমনকি, আওয়ামীলীগের মিছিল মিটিংয়ে সরাসরি নেতৃত্ব দেয়া এমন লোকনজনকেও বিএনপির তকমা লাগিয়ে দিচ্ছে জাহিদ। এখন আওয়ামীলীগের লোকজনই নব্য বিএনপি নেতা বনে গিয়ে ভোলাইল এলাকায় প্রভাব বিস্তারসহ সব কিছুই তাদের দখলে নিয়ে নিচ্ছে। অনুপ্রবেশকারীদের বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারনে বদনাম হচ্ছে বিএনপির।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির যুগ্ন আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব বলেন, ভোলাইল এলাকার জাহিদ বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। দলের জন্য তার অনেক ত্যাগ রয়েছে। যত কিছুই হউক না কেন দলের নাম ভাঙ্গিয়ে কেউ কোন অপকর্মের সাথে জড়িত থাকলে আমরা কাউকেই ছাড় দিব না। ইতিমধ্যেই আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘোষনা দিয়ে দিয়েছি, আমি সবাইকে চিনি না। দলীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অনেকেই আমার পাশে দাড়িয়ে ছবি তোলেন এবং প্রচার করেন। এর মধ্যে বিতর্কিত অনেকেই থাকতে পারে। কিন্তু, আমরা এ দায়ভার নিব না।
তাই, সকল নেতাকর্মীকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে বিতর্কিতরা জানে স্টেজে কিংবা দলের বদনাম না করতে পারেন সেদিকে সজাগ থাকার জন্য।
তাছাড়া, দেশনায়ক তারেক রহমানও বহিরাগতদের বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন। এরপরেও যদি দলের নাম ভাঙ্গিয়ে অপকর্ম করেন তাদেরকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়া হবে না বলেও তিনি হুশিয়ারী উচ্চারন করেন।