যুগের নারায়ণগঞ্জ;
হঠাৎ করেই বদলে গিয়েছিল পুরো দৃশ্যপট। ৫ আগষ্ট সকালেও যে আওয়ামীলীগ ছিলো ফুরফুরে মেজাজে সেই দলই ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিপাকের মধ্যে পড়ে গেছে। আর গত ১৬ বছর ধরেই দৃশ্যত চাপে তাপে বিপর্যন্ত থাকা বিএনপি এখন উল্টো ফুরফুরে মেজাজে। ক্ষমতায় না এসেও ক্ষমতার সুবাস ছড়াচ্ছে দলটির নেতাকর্মীরা। দীর্ঘদিনের চাপা যন্ত্রনা ভুলে যেনো মুুক্তির নিঃশ্বাস নিচ্ছে তারা। দলীয় কার্যক্রমে বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। প্রতিদিন মিছিল সমাবেশে মুখর বিএনপি অফিস চত্বর। শুধু অফিসই নয়,শহরজুরেই রমরমা অবস্থা বিএনপির, প্রাণোচ্ছল নেতাকর্মীদের মুখরতায়।
জেলা বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ বলেছেন, মনে হচ্ছে অবরুদ্ধতার প্রাচীর থেকে মুক্তি পেয়েছি, রাতের পর রাত নির্ঘুম কেটেছে,ঠিকমতো ঘুমাতে পারেনি,কখন পুলিশ আসে। অনেক সময় বাসায়ও থাকতে পারিনি। নিজের টেনশন,নেতাকর্মীদের টেনশন। দলীয় কর্মসূচীও ঠিকঠাক মতো পালন করতে পারতাম না। পুলিশের নজরদারি,চাপ,বের হতে না দেয়াসহ নানা কারণে। গত ৫ আগষ্ট বিকেলে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে মনে হচ্ছে মুক্তি পেয়েছি এক অসহনীয় অবস্থা থেকে। সারাক্ষণ ভয়,ভীতি নিয়ে জীবন কাটাতে হতো আমাদের,এখন মুক্ত,স্বাধীন।
সাবেক ছাত্রদল নেতা রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরী বলছেন, ‘আমার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দেয়া হয়েছে। আমার বাড়ী ঘরে হামলা হয়েছে। কখনো ঢাকায়,কখনো নারায়নগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপনে থাকতে হয়েছে। রাতে বাসায় থাকতে পারতাম না। রাতের পর রাত এর বাসায়,ওর বাসায় ঘুমাতে হত। ৫ আগষ্ট বিকাল থেকে মুক্তি। জীবনে ফিরেছে স্বাভাবিক ছন্দ। জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল আমিন সিকদার বলছেেন,মনে হচ্ছে দুঃসহ যন্ত্রনা থেকে মুক্তি মিলেছে। কী ভয়াবহ ছিলো আমাদের নেতাকর্মীদের জীবন এটা বলে বোঝানো যাবেনা। এখন স্বস্তি।
বিএনপি নেতাদের এমন মুক্তির আনন্দের মধ্যে একেবারেই বিপরীত চিত্র ১৬ বছরের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের। ৫ আগষ্ট আগের দিনের ফুরফুরে মেজাজে থাকা দলটির নেতাকর্মীরা এখন বেশিরভাগই পলাতক। জেলা আওয়ামীলীগের কার্যালয় পুড়িয়ে নিঃস্ব করে দেয়ার পাশাপাশি জেলা শহরের বিভিন্নস্থানে হামলা হয়েছে দলটির নেতাকর্মীদের বসতঘর,ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও। তবে শহর ছাড়িয়ে সবচেয়ে বেশি আক্রমন ও হামলা হয়েছে আড়াইহাজারে। আড়াউহাজার উপজেলা
আওয়ামীলীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীর বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়। পুরো ঘটনায় বিপর্যস্ত আওয়ামীলীগ ও সহযোগি সংগঠনের নেতারা।
মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে নিরাপদস্থানে রয়েছি। তবে, এ দুঃসময় থাকবে না। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সমস্যা কাটিয়ে উঠব। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা সবাইকে অনুসরন করার জন্য অনুরোধ করেছেন তিনি।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রাফেল প্রধানের সাথে হোয়াটস এ্যাপে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এমন ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই আমরা হতোদ্যম কিছুটা। তবে নেতাকর্মীদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করছি। কিন্তু নেতারা এখনো কোন নির্দেশনা দেয়নি, ফলে আমরাও দ্বিধায় আছি,পরবর্তী করণীয় নিয়ে।
জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মীর সোহেল আলী বলেন, আওয়ামীলীগের দুঃসময় এবারই প্রথম নয়। জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পরও আমাদের ভয়াবহ অবস্থা হয়েছিলো। ক্ষমতার বাহিরে একুশ বছর থেকেও আমরা আবার ফিরে এসেছি। এবার দলের ভয়াবহ এই বিপর্যয়ের পরও আবার আমাদের দল ঘুরে দাঁড়াবে, এই বিশ্বাস আমাদের আছে।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক জেলা আওয়ামীলীগের এক সিনিয়র নেতা বলেন, আসলে এমন একটি ঘটনার পর এখনো দল গোছানোর মত পরিস্থিতি এখনো তৈরি হয়নি। কেন্দ্র থেকেও কোন নির্দেশনা পাইনি। আমরা এখনো জানিনা,ভারপ্রাপ্ত কাউকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে কিনা। আপাতত নেতাকর্মীদের প্রতি সতর্ক ও নিরাপদে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের অবস্থা এতটাই শোচনীয় পর্যায়ে গেছে যে, দলীয় অনুষ্ঠানও তাদের পালন করতে দেখা যায়নি।একদিকে বিপর্যস্ত দল,অন্যদিকে নিরাপত্তাহীনতায় থাকা নেতাকর্মীদের পাশে নেই কেউই। পতনের আগের আর পরের জীবনের পার্থক্য যেনো হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন দলটির নেতাকর্মীরা।