যুগের নারায়ণগঞ্জ:
গত ০৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর পাল্টে গেছে নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গন। এখানে বিএনপি অভ্যন্তরীণ কোন্দল, গ্রুপিং ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। ফলে সংগঠনটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। অপরদিকে, জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের মধ্যে ফুরফুরে আমেজ বিরাজ করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে রূপগঞ্জে স্কুল ছাত্র রোমনকে গুলি চালিয়ে হত্যার মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। তার অনুসারি আওয়ামী লীগের শীর্ষ স্থানীয় নেতাকর্মীরাও রয়েছেন এলাকা ছাড়া। সাবেক মন্ত্রী গাঁজীকে কারাগারে প্রেরণ করা হলেও বিষয়টি নিয়ে তার অনুসারিদের মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। ক্ষমতায় থাকাকালীন বিভিন্ন সময় গোলাম দস্তগীর গাঁজীর কাছ থেকে সুযোগ সুবিধা নেওয়া নেতাকর্মীরাও গা ঢাকা দিয়েছেন।
এছাড়াও ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বেরশাসক হাসিনা সরকারের পতনের খবরে নারায়নগঞ্জে প্রভাবশালী ওসমান পরিবার এবং তাদের দোসররাসহ সকল এমপি ও তাদের চামচা চামুন্ডারাও দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। এর পরেই স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা নারায়ণগঞ্জের রাজনীতির মাঠ দখলে নিয়ে নেন।
আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাড়ি ঘরে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট, হাট-বাজার, ঝুঁট সেক্টর ও পরিবহন সেক্টর দখল করে অনেকটা বিতর্কের মুখে পড়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। পুনরায় বিএনপির ভাবমূর্তী ফিরিয়ে আনতে ইতিমধ্যেই জেলা বিএনপির কমিটিকে বিলুপ্তিসহ বিতর্কিত অনেক নেতাকেই দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আরও অন্তত ডজনখানেক নেতা শাস্তির তালিকায় রয়েছেন বলে জানা গেছে।
অবশ্য সাম্প্রতিককালের শৃংখলা বিরোধী কাজে যতটা বিতর্কীত বিএনপি তার চেয়েও কয়েকগুন বেশী আলোচনা হচ্ছে দলটির অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিয়ে। দীর্ঘদিন ধরেই জেলা বিএনপি একাধিক ধারায় বিভক্ত। একটি গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন সদ্য বিলুপ্ত হওয়া জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি গিয়াস উদ্দিন ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন এবং অপর একটি গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছে জেলা বিএনপির সবেক সভাপতি কাজী মনির ও সাবেক সাধারন সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ। শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর এই গ্রুপের অনুসারীরা পৃথকভাবে জেলার সর্বত্র সভা সমাবেশ ও শোডাউন করে আসছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তৃণমূলের একাধিক নেতা বলেন, অনেক বছর ধরে চলা এই কোন্দলের কারণে দল অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন আর এই কোন্দল জিইয়ে রাখার সুযোগ নেই। দলকে সুসংগঠিত করতে হলে এই মুহুর্তে ঐক্যর কোনো বিকল্প নেই। কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-আন্তজাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ বলেন, ঐক্যের জন্য আমি উদ্যোগ নিয়েছি। ইতিমধ্যে পৃথক ভাবে সবার সঙ্গে প্রাথমিক বৈঠক করেছি। আশা করছি খুব শিগগিরই কোন্দল নিরসন হবে।
জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল আমিন সিকদার বলেন, ‘কিছু সুবিধাবাদী টাইপের নেতা দলের নেতৃত্বে থাকায় কোন্দল নিরসন হচ্ছে না। দলীয় শৃখংলা বিরোধী কাজের সঙ্গে জড়িত থাকায় একাধিক নেতাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ২/৪ জন রাঘববোয়ালকে অব্যাহতি দেওয়া হলে দলকে সুসংগঠিত করা সম্ভব।
এদিকে, শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর জেলা ও মহানগর জামায়াতে ইসলামী নেতাকর্মীদের মধ্যে ফুরফুরে আমেজ বিরাজ করছে। দীর্ঘ ১৭ বছর পর নারায়ণগঞ্জে দলীয় কার্য্যালয়ে জামায়াতের নেতৃবৃন্দ একাধিক বৈঠক করেন এবং সাংগঠনিক কার্য্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন।এছাড়াও, বিভিন্ন ইউনিয়নে বর্তমানে জামায়াতের সদস্য সংগ্রহ অভিযান চলছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা জামায়াতের আমির মমিনুল হক সরকার বলেন, জামায়াতে ইসলামী দুর্নীতি, সন্ত্রাস আর লুটপাটে জড়িতদের প্রশ্রয় দেয় না। জনগণের ভালোবাসা নিয়েই জামায়াতে ইসলামী এগিয়ে যেতে চায়। দীর্ঘ ১৭ বছর রাজনৈতিক ভাবে জুলুম নির্যাতন সহ্য করেও জনগণের পাশে থেকে সেবা সহযোগীতা দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। এই মুহুর্তে নির্বাচন হলে জামায়াতে ইসলামী শতকরা ৮০ ভাগ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
মহানগর জামায়াতের আমির মাওলানা মোহাম্মদ আব্দুল জব্বার বলেন, জামায়াত শিবির একটি পরিচ্ছন্ন রাজনৈতিক দল। জনগনের উন্নয়ন এবং সেবা নিশ্চিত করাসহ দেশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশের মাধ্যমে দেশকে উন্নয়নের ধারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়াই আমাদের লক্ষ্য। এছাড়াও, জানায়াত শিবির কোন লুটপাট কিংবা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডকে প্রশ্রয় দেন না। এই মুহুর্তে নির্বাচন হলে জামায়াত শিবির শতকরা ৮০ ভাগ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হবেন বলেও তিনি আশাবাদ করেন।
দলীয় কোন্দলের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, জামায়াত শিবির একটি পরিচ্ছন্ন রাজনৈতিক দল।যোগ্যতার ভিত্ততে নেতা নির্বাচিত হয় আমাদের দলে এবং আমাদের উদ্দেশ্যই হচ্ছে সেবা। তাই কোন্দল বিষয় নিয়ে আমরা অভ্যস্ত নই।