
যুগের নারায়ণগঞ্জ:
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের বিএনপির মনোনয়ন ঘিরে দীর্ঘদিনের নাটকীয়তা ও টানাপোড়েনের অবসান ঘটেছে। আলোচিত ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক বিতর্কিত চরিত্র মাসুদুজ্জামান ওরফে মডেল মাসুদের সব চেষ্টা, কৌশল ও ব্যয়বহুল তৎপরতা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ করে দিয়ে বিএনপির দলীয় প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান।
শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) রাতে বিএনপির কেন্দ্রীয় একাধিক বিশ্বস্ত সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করলেও এখনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি দলটি।
‘গিরগিটির রাজনীতি’ ও বিতর্কের কেন্দ্রে মাসুদুজ্জামান
আওয়ামী লীগ শাসনামল থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক সুবিধা আদায়ের লক্ষ্যে একাধিকবার অবস্থান বদলের অভিযোগ রয়েছে মাসুদুজ্জামান ওরফে মডেল মাসুদের বিরুদ্ধে। কখনো আওয়ামী ঘরানার ঘনিষ্ঠতা, কখনো বিএনপির ছায়ায়—ক্ষমতার পালাবদলে নিজের রং পাল্টানোই যেন তার রাজনৈতিক পরিচয় হয়ে দাঁড়ায়।
বিএনপির মনোনয়ন পেতে তিনি বিপুল অর্থ ব্যয়, প্রভাবশালী মহলের তদবির এবং দলের ভেতরে বিভাজন তৈরির কৌশল অবলম্বন করেন বলেও রয়েছে অভিযোগ। এমনকি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত টিকিট ‘ছিনিয়ে আনার’ চেষ্টা চালালেও দলীয় নীতিনির্ধারকদের আস্থায় তিনি টিকে থাকতে পারেননি।
দলীয় সূত্র বলছে, রাজনৈতিক আদর্শের চেয়ে ব্যক্তিস্বার্থ প্রাধান্য দেওয়া, অতীতের বিতর্কিত ভূমিকা ও বিশ্বাসযোগ্যতার সংকটই শেষ পর্যন্ত তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়।
শেষ পর্যন্ত আস্থার প্রতীক সাখাওয়াত
এর বিপরীতে দীর্ঘদিনের ত্যাগী নেতা হিসেবে পরিচিত অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান দলীয় আন্দোলন, সাংগঠনিক অভিজ্ঞতা ও মাঠপর্যায়ের জনপ্রিয়তার কারণে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের আস্থা অর্জনে সক্ষম হন।
মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, “আমি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, তারুণ্যের অহংকার জনাব তারেক রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমাকে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে ধানের শীষের প্রতীকে মনোনীত করায় আমি সম্মানিত বোধ করছি। এই মনোনয়ন জনগণের প্রতি আমার দায়িত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফার আলোকে আগামীর নারায়ণগঞ্জ ও বন্দর গড়তে আমি জনগণের পাশে থাকতে চাই।”
রাজনৈতিক অঙ্গনে চাঞ্চল্য
এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। দলীয় নেতাকর্মীদের বড় একটি অংশ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও, মাসুদুজ্জামানপন্থীদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ স্পষ্ট।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, “এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বিএনপি একটি বার্তা দিয়েছে—গিরগিটির মতো অবস্থান বদল নয়, বরং ত্যাগ ও সাংগঠনিক বিশ্বাসযোগ্যতাই মনোনয়নের মূল মানদণ্ড।”
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে এখন সব নজর বিএনপির আনুষ্ঠানিক ঘোষণার দিকে। তবে প্রাথমিক মনোনয়নেই স্পষ্ট—রং বদলের রাজনীতি এবার টিকল না, শেষ হাসি হেসেছেন সাখাওয়াত হোসেন খান।