1. admin@jugernarayanganj.com : jugernaraya nganj nganj : jugernaraya nganj nganj
  2. multicare.net@gmail.com : যুগের নারায়ণগঞ্জ :
মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ০২:১৩ পূর্বাহ্ন

অয়নের ক্যাডার কাউসার ইস্যুতে ক্ষুব্ধ বিএনপি!

প্রতিবেদকের নাম:
  • প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৫
  • ১০৮ বার পড়া হয়েছে

যুগের নারায়ণগঞ্জ:
অয়ন ওসমানের ক্যাডার কাউসার ওরফে আহমেদ কাউসার ইস্যুতে বিএনপি নেতাদের মাঝে তোলপাড় চলছে। গণঅভ্যুত্থানে শামীম ওসমান ও অয়ন ওসমানের পাশে থেকে আন্দোলনকারীদের উপর প্রকাশ্যে গুলি চালালেও সদর থানায় তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা রুজু না হওয়া কিংবা মামলার এজাহারগুলোতে তার নাম না আসায় বিএনপি অঙ্গনে তোলপাড় চলছে। ক্ষোভ প্রকাশ করছেন বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের দায়িত্বশীল নেতারা।

জানা গেছে, এই শহরে এক সময়ে ত্রাসের রাজত্ব কয়েম করেছিলো ওসমান পরিবার। এই পরিবারের আশির্বাদে বহু চুনোপুটি রাঘোব বোয়ালে পরিণত হয়েছিলো। তেমনই এক চুনোপুটি থেকে রাঘোব বোয়ালে পরিণত হওয়া এক ব্যক্তি হলো কাউসার। শামীম ওসমানের পুত্র অয়ন ওসমানের ব্যক্তিগত সহকারী কিংবা সেকেন্ড ইন কমান্ড; সব উপাধীই ছিলো এই কাউসারের। কাউসার থেকে আহমেদ কাউসারে পরিণত হওয়া এই সন্ত্রাসী ছিলেন শহরের নলুয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা। ওসমানীয় কৌশলের সকল ধারাই বেশ ভালো করে রপ্ত করেছিলেন তিনি। আওয়ামী লীগ, বিএনপি (সুবিধাবাদী) ও জাতীয় পার্টি সব মিলে মিশে একাকার ছিলো ওসমানীয় সম্রাজ্যে। কাউসারও ছিলেন সেই একই তালে। অয়ন ওসমানের প্রধান সেনাপতি ও কথিত ছাত্রলীগ নেতা হলেও বিএনপির দুই আলোচিত কাউন্সিলরকে শুরু থেকেই বশ করেছিলেন এই কাউসার। তাদের দুজনকে তিনি ‘চাচা’ বলে সম্বোধন করেন। তবে কাউসারের দুঃসময়ে সেই দুই চাচা তাকে ভুলে যায়নি বরং ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতন হলে ওসমানীয় সাম্রাজ্য যখন ধ্বসে পরে, তখন বিএনপি ঘেষা ওই দুুই ‘চাচা’ পুরোদস্তর ‘ভাতিজা’ কাউসারকে বাঁচাতে প্রাণপণ চেষ্টা তদবির চালাতে শুরু করে। অবশ্য দুই চাচাকে মোটা অংকের টাকাও দিয়েছে অয়নের ক্যাডার আহমেদ কাউসার। ফলশ্রুতিতে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অস্ত্র হাতে প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে ভাইরাল হলেও অয়ন ওসমানের এই প্রধান সেনাপতির বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় একটি মামলাও রুজু হয়নি। তা নিয়ে সমালোচনার অন্ত নেই। অস্ত্রধারী কাউসারের বিরুদ্ধে কিভাবে সদর থানায় মামলা রুজু হলো না, তা নিয়ে যখন আলোচনা-সমালোচনার পারদ তুঙ্গে উঠেছে, তখন বেরিয়ে এসেছে থলের বিড়াল।

বিএনপিরই একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সাবেক যুবদল নেতা ও এক সময়ে দেশের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করা একজন কাউন্সিলর এবং আরেকজন মহানগর বিএনপির সাবেক নেতা ও বর্তমানে বিএনপি থেকে বহিস্কৃত হওয়া সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর মিলে সন্ত্রাসী আহমেদ কাউসারকে বাঁচাতে যারপরনাই চেষ্টা চালিয়ে গেছে। কাউসার তাদের দুজনকেই চাচা বলে ডাকতেন। তারা বিএনপিতে থাকলেও সেলিম ওসমানের সাথে তাদের দহরম মহরম সম্পর্ক ছিলো। এরমধ্যে একজন তো সেলিম ওসমানের সাথে ব্যবসাতেও জড়িয়েছিলেন।

অস্ত্রধারী কাউসারকে যেন আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করা না হয়, সেই জন্যেও ওই দুই চাচা এখনো দৌড়ঝাপ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে বিশেষ সূত্রে জানা গেছে।

এই বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি বলেন, ‘কাউসার অয়ন ওসমানের প্রভাবে এই শহরে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। ছাত্র-আন্দোলন দমাতে এই কাউসার তার গুরু অয়ন ওসমান ও শামীম ওসমানের সাথে মিলে আন্দোলনকারীদের উপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছিলো। সেই ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এরপরও তাকে গ্রেফতার করা গেলো না! এমনকি সদর থানায় তার বিরুদ্ধে কোনো মামলাও রুজু হয়নি! এটা বিষ্ময়কর বিষয়। আসলে শহরের কিছু বিএনপি নেতা তার কাছ থেকে সুবিধা পেয়ে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে। তারা আওয়ামী লীগের সময়ে ওসমান পরিবারের কাছ থেকে সুবিধা গ্রহণ করেছিলো। এখন ওসমান পরিবার ও তাদের ক্যাডারদের বাঁচাতে চেষ্টা করছে। আর সদর থানায় এখনো কিছু পুলিশ অফিসার আছে, যারা আওয়ামী লীগের সময়ে এই থানায় ছিলো। তারা তখন থেকেই ওসমান পরিবার ও তাদের লোকদের দ্বারা সুবিধাভোগী ছিলো। এখন তারা এই থানায় পূনরায় এসে ওসমান পরিবার ও তাদের লোকদের সুবিধা এবং সহযোগিতা করে যাচ্ছে। কাউসার প্রচুর টাকার মালিক। তাদের কাছে টাকা রয়েছে। এখন সেই টাকা ঢালছে নিজেদের রক্ষা করার জন্য। কিন্তু বিএনপির পরিচয় বহনকরা কোনো ব্যক্তি তাদের সাথে আছে, এটা খুবই নিন্দনীয় এবং দুঃখজনক। আমরা তাদের সতর্ক করতে চাই।’

মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেন, ‘ওসমানীয় ক্যাডারদের অনেককেই বাঁচানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। যারা শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমানের সুবিধাভোগী ছিলো, তারাই এই পায়তারা করছে। এগুলো বরদাস্ত করা হবে না। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও গুলিবর্ষণকারী কাউসিারকে অবিলম্বে আইনের আওতায় এনে দ্রুত বিচার আইনে তার শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। প্রশাসনের প্রতি এই আহবান থাকবে।’

জানতে চাইলে মহানগর বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, ‘মামলাগুলো করেছে ক্ষতিগ্রস্থ লোকেরা। কিন্তু তাদেরকে অনেক ভাবে প্রভাবিত করা হয়েছে বলে বিভিন্ন মহলে কথা রয়েছে। কাউসার প্রকাশ্যে গুলি করেছে। তার বিভিন্ন ভিডিও এবং ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। পত্রপত্রিকায় ঢালাও ভাবে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এজাহারে নাম না থাকলেও পুলিশ কেন তাকে গ্রেফতার করতে পারলো না। এখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায় আছে। আর বিএনপির যারা তাকে বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করেছে, তারা আসলে বিএনপির সাথে এখন সম্পৃক্ত নেই। একজন বহিস্কৃত এবং একজন দলের বা অঙ্গ-সংগঠনের রানিং কোনো পদে নেই। তবে তাদের ঘিরে যেই গুঞ্জন চলছে, এগুলো দুঃখজনক। কারণ তাদের কাছে মানুষ এগুলো আশা করে না। কিন্তু তারা আগে থেকেই ওসমান পরিবারের সহযোগি লোক হিসেবে পরিচিত।’

কাউসারের বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘কাউসার পিস্তল নিয়ে গুলি চালিয়েছে তা প্রমাণিত। এখন সদর থানার কোনো মামলায় কেনো তার নাম এজাহারে উল্লেখ হয়নি তা আমার জানা নেই। কারণ মামলাগুলো পুলিশ করেনি। এগুলো সাধারণ মানুষ বাদি হয়ে করেছে। এখন কোনো কারণে বাদীরা কারো দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে কিনা- সেটা তদন্ত সাপেক্ষ বিষয়। আর ট্রাইব্যুনাল ও প্রতিবেদনের বিষয়টি নিয়ে এই মুহুর্তে কোনো তথ্য জানানো উচিৎ হবে না। তাহলে অপরাধীরা সতর্ক হবে এবং পরিত্রাণের ফন্দি আঁটবে। তবে যারা অপরাধী তারা ছাড় পাবে না।’

জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে নগরীতে দিনে দুপুরে প্রকাশ্যে গুলি চালিয়েছিলো অয়ন ওসমানের ক্যাডার কাউসার ও রাসেল। নগরীর চাষাড়া, বঙ্গবন্ধু সড়কের উকিলপাড়া, ২নং রেলগেইট, দেওভোগ, নিতাইগঞ্জ সহ আশপাশের এলাকায় আন্দোলনকারীদের উপর গুলি বর্ষন করা সেই ছবি-ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সর্বত্র। এখনো ঘুরছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে। ছাপা হয়েছে খবরের পাতাতেও। তবে অস্ত্রধারী সেই কাউসার ও তার সহযোগি রাসেলের নামে নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় নেই একটি মামলাও! গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলন ঘিরে সদর থানায় যে কয়টি মামলা রুজু হয়েছে, তার একটি মামলার এজাহারেও কাউসার ও রাসেলের নাম না আসায় চলছে সমালোচনা। কার ইশারায় সদর থানার মামলাগুলোর এজাহারে আসামীর তালিকায় উঠে আসেনি কাউসার ও রাসেলের নাম, সেই প্রশ্ন সচেতন মহলে।

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট