1. admin@jugernarayanganj.com : jugernaraya nganj nganj : jugernaraya nganj nganj
  2. multicare.net@gmail.com : যুগের নারায়ণগঞ্জ :
সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫, ০৩:৫০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
মুকুলের উপর হামলার আগে ‘১৫ লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছিলেন বজলু’ অসুস্থ বিএনপি নেতা লাভলুর পাশে জমিয়তের মুফতি মনির কাসেমী আ’লীগের দোসর হাইব্রিডদেরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় নয়: এড. টিপু ১৫৫ বোতল ফেনসিডিলসহ তিন নারী মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার নারায়ণগঞ্জকে আধুনিক শহর হিসেবে গড়ে তোলা হবে-জেলা প্রশাসক এশিয়ার বৃহত্তম আদমজী জুট মিল বন্ধের আজ ২৩ বছর সনাতনী ছাত্র সমাজের মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ সোনারগাঁয়ে তথ্যপ্রযুক্তি কেন্দ্রসহ একাধিক উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন ফতুল্লার শীর্ষ সন্ত্রাসী দিপু মুন্সিগঞ্জে অস্ত্র ও ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার বন্দরের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মুকুলকে বিবস্ত্র করে মারধর

এশিয়ার বৃহত্তম আদমজী জুট মিল বন্ধের আজ ২৩ বছর

প্রতিবেদকের নাম:
  • প্রকাশিত: রবিবার, ২৯ জুন, ২০২৫
  • ৬ বার পড়া হয়েছে

যুগের নারায়ণগঞ্জ:
যুগের নারায়ণগঞ্জ:
বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা আদমজী জুট মিল ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত এবং বৃহত্তম পাটকল। ১৯৫১ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর তীর ঘেষে ২৯৭ একর জমিতে পাটকলটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পাকিস্তানের সম্ভ্রান্ত ও সমৃদ্ধ আদমজী পরিবারের তিন ভাই ওয়াহিদ আদমজী, জাকারিয়া আদমজী এবং গুল মোহাম্মদ ১৯৫১ সালে আদমজী জুট মিলটি নির্মাণ করেন।

১৯৭২ সালে জাতীয়করণের পর থেকে মিলটি ক্রমশ লোকসানের মুখে পড়তে থাকে। প্রায় তিন দশক পর ক্রমাগত লোকসানের কারণে বাংলাদেশ ২০০২ সালে বিশ্বের বৃহত্তম পাটকলটি বন্ধ করে দেয় সরকার। পরবর্তীতে ২০০৬ সালে আদমজী ইপিজেড আনুষ্ঠানিকভাবে আদমজী জুট মিলের ২৯২ দশমিক ৬২ একর জমি নিয়ে তার কার্যক্রম শুরু করে।

আদমজী জুট মিল বন্ধ হওয়ার পর ২৯২ দশমিক ৬২ একর জমির উপর আদমজী ইপিজেড নির্মিত হয়। এখন ইপিজেডের প্লটের সংখ্যা ২৭৩। গড়ে প্রতিটি প্লটের আয়তন ২০০০ বর্গমিটার। ২০০৬ সালের ৬ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে এ ইপিজেডের উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। উদ্বোধনের পর থেকে স্থানীয় ও বিদেশী বিনিয়োগের সাথে যুক্ত ৪৮টি শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে স্থানীয়, বিদেশী এবং যৌথ শিল্পের সংখ্যা যথাক্রমে ১১, ২৭ এবং ১০টি। এই কারখানাগুলো পোশাক, জিপার, কার্টন, হ্যাঙ্গার, লেভেল, ট্যাগ, জুতা, সোয়েটার, টেক্সটাইল, মোজা এবং গয়না ইত্যাদি সম্পূর্ণ রপ্তানিযোগ্য পণ্য উৎপাদন করছে।

আদমজী ইপিজেড প্রতিষ্ঠার পর প্রথম অর্থবছরে ৪ মিলিয়ন মাির্কন ডলার বিনিয়োগ হয়। সে সময় এ ইপিজেড থেকে ২ লাখ ৩০ হাজার ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করা হয়েছিল। শুরুতে প্রতিষ্ঠানটিতে শ্রমিক সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৬২৫ জন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটিতে বিনিয়োগ এবং রপ্তানি উভয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে আসছে। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে বেপজার তথ্য অনুযায়ী আদমজী ইপিজেডে মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৭২০ দশমিক ৮৪ মিলিয়ন ডলার। একই সময়ে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৭৭৯৪ দশমিক ৫২ মিলিয়ন ডলার। একই অর্থবছরে মোট শ্রমিক ও কর্মচারীর সংখ্যা ৫৬ হাজার ৬৬৭ জন।

পাট সম্পূর্ণরূপে জৈব-ক্ষয়যোগ্য এবং পরিবেশবান্ধব আঁশ। এটি মাটি থেকে আসে, মাটিকে সাহায্য করে এবং এর আয়ুষ্কাল শেষ হওয়ার পরে মাটির সঙ্গে মিশে যায়। এক সময় বিশ্বব্যাপী পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল, ফলে চাহিদা অনুযায়ী স্থানীয় পাটকলগুলোকে আধুনিকীকরণ এবং প্রযুক্তিবান্ধব করা প্রয়োজন হয়ে পড়ে। কিন্তু দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও দুর্বল ব্যবস্থাপনা এবং অদক্ষ শ্রমিক নিয়োগের মতো অনেক সমস্যার কারণে বন্ধ করতে হয়েছে আদমজী জুট মিলসহ দেশের অনেক জুট মিল।

কেন এই আদমজী জুট মিল ক্রমাগত লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছিল এবং বন্ধ হওয়ার পথে কী ছিল? এবং কেন সরকার পাটকলটি বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিল? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে আগে জানতে হবে কীভাবে বাংলায় পাটের বিস্তৃতি ঘটেছিল?

পাট বাংলাদেশের সোনালী আঁশ। প্রাচীনকাল থেকেই এশিয়া ও আফ্রিকার মানুষ পাটের পাতা খাবার হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। পাট কাঠিকে ব্যবহার করতো জ্বালানী হিসেবে। পাশাপাশি পাটের আঁশকে ব্যবহার করা হয় নানা কাজে, যাকে সোনালী আঁশ হিসাবেও বলা হয়ে থাকে। এমনকি ১৫৯০ সালে মোগল সম্রাট আকবরের আমলে আবুল ফজলের আইন-ই-আকবরী বইতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ভারতের দরিদ্র মানুষ পাটের তৈরি পোশাক পরতো। ১৭ শতকে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ব্যবসার জন্য ভারতে আসে। ১৮ শতকে ব্রিটিশরা লক্ষ্য করে যে পাটের আঁশ ব্যবহার করে কাপড় তৈরি করা যেতে পারে এবং কাঁচা পাটের দাম কম হওয়ায় তারা ইংল্যান্ডে পাট রপ্তানি শুরু করে।

কাঁচা পাটের একটি অংশ স্কটল্যান্ডের ডান্ডিতে পৌঁছালে ব্যবসায়ীরা ন্যায্যমূল্যে পাটের আঁশ থেকে কাপড় বুননের উপায় খুঁজে পায়। পরে ভারতীয় উপমহাদেশের কাঁচা পাটকে কেন্দ্র করে ডান্ডির শিল্পটি সমৃদ্ধ ও বিকশিত হচ্ছিল। ১৮৩৮ সালে ডান্ডির প্রথম পাটকল স্থাপিত হয় এবং ধীরে ধীরে সেখানে নতুন পাটকল গড়ে উঠতে দেখা যায়। ফলে ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে কাঁচা আঁশ ডান্ডিতে রপ্তানি করা হত।

ভারতবর্ষে শ্রমিকের দাম কম হওয়ায় ১৮৫৫ সালে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সহায়তায় অ্যাকল্যান্ড মিল এবং কলকাতার হুগলি নদীর তীরে রিষড়ায় স্থাপিত হয় ভারতের প্রথম পাটকল। পরে কলকাতাকে কেন্দ্র করে প্রচুর পাটকল স্থাপিত হয়। আর পাটকলগুলোতে ডান্ডি থেকে দক্ষ কর্মী কলকাতা শহরে এসে ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ন্যায্যমূল্যে শ্রম ও কাঁচামাল খুঁজে পেয়ে কলকাতার পাটকল বিভিন্ন ধরণের পাটজাত পণ্য তৈরি করতো। ফলে ডান্ডির পাট শিল্প বাংলার কাছে তার বাজার হারায়। ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে ভারত পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে বিশ্বের শীর্ষে পৌঁছে যায়। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর এই শিল্প বাংলাদেশে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সমৃদ্ধ হয়। কারণ অবিভক্ত বাংলার পাটকলের কাঁচা আঁশের বেশিরভাগ অংশই বাংলাদেশে উৎপাদিত হত।

পাটের অফুরন্ত সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় পাকিস্তানের ধনী ব্যবসায়ী গোষ্ঠীগুলো বাংলাদেশের ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ এবং আশপাশের অঞ্চলে পাটকল স্থাপনের জন্য আসে। ফলস্বরূপ ১৯৫১ সালে দ্য বাওয়া জুট মিলস লিমিটেড, আদমজী জুট মিলস এবং ভিক্টরি জুট প্রোডাক্টস লিমিটেড প্রতিষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে দ্য বাওয়া জুট মিলস লিমিটেড ছিল বাংলাদেশের প্রথম পাটকল।

আদমজী জুট মিল ১৯৫১ সালের ১২ ডিসেম্বর ৫ কোটি টাকা বিনিয়োগে ১৭০০ হেসিয়ান এবং ১০০০ সিকিং তাঁত দিয়ে উৎপাদন শুরু করে। পাটকলটিতে ৩ হাজার ৩০০টি তাঁতও স্থাপন করে। দেশের চাহিদা পূরণ করে আদমজী জুট মিলের বেশ কিছু পাটজাত পণ্য যেমন ব্যাগ, বস্তা এবং কার্পেট ইত্যাদি চীন, ভারত, কানাডা, আমেরিকা, থাইল্যান্ড এবং ইউরোপের অনেক দেশে রপ্তানি করা হত। আদমজী জুট মিলকে কেন্দ্র করে শীতলক্ষ্যা নদীর উভয় পাশে সিদ্ধিরগঞ্জ, বন্দর এবং সোনারগাঁও এলাকায় বিশাল জনগোষ্ঠী বসবাস শুরু করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে পাটকলটি ব্যাপক লাভজনক ছিল। মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশ সরকার পাকিস্তান-নেতৃত্বাধীন পাটকলগুলির নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেন। ১৯৭৪ সালে আদমজী জুটমিলসহ ৮২টি বেসরকারি পাটকল জাতীয়করণ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশন (বিজেএমসি) প্রতিষ্ঠিত হয়।

সেই থেকে এই আদমজী জুট মিল মারাত্মক অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। ৭৮০-এর দশকে বিশ্বব্যাপী পাটের ব্যাগের বিকল্প হিসেবে পলিথিনের ব্যবহার বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে পাটের ব্যবহার কমতে থাকে। ৮০-এর দশক থেকে পাটকলটি ক্রমাগত লোকসানের সম্মুখীন হতে থাকে। ৯০-এর দশকের শেষের দিকে প্রতিষ্ঠানটিতে ৩ হাজার তাঁত ছিল। এর মধ্যে ১২’শ তাঁত অকার্যকর ছিল। সেই সময় মিলের উৎপাদন ছিল ৫৯ হাজার ৬১৫ মেট্রিক টন। এতে ২ হাজার ৭৬ জন কর্মচারী, অন্যান্য কর্মী এবং ১৬ হাজার ৪৪৩ জন শ্রমিক ছিলেন। ক্রমাগত লোকসানের সম্মুখীন হয়ে ২০০২ সালের ৩০শে জুন বিশ্বের বৃহত্তম পাটকল আদমজী বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধের সময় পাটকলটির লোকসানের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা এবং মিলটিতে প্রায় ২৫ হাজার ০০০ কর্মচারী ও শ্রমিক কর্মরত ছিল।

আদমজী ছাড়া, বিজেএমসির তত্ত্বাবধানে থাকা অন্যান্য সব পাটকল মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে ক্রমাগত লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছিল। ২০০২ সালে সরকারি পাটকলগুলো ১৭ কোটি টাকা লাভ করেছিল। অন্যদিকে, এই পাটকলগুলোর খরচ বহন করতে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের ১০ হাজার কোটি টাকার বিশাল ক্ষতি হয়েছে।

বাংলাদেশ তার উচ্চমানের পাট চাষের জন্য বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত ছিল। তাছাড়া, পাটজাত পণ্য উৎপাদনের জন্য আদমজীর নাম ও খ্যাতি বিশ্বজুড়ে ছিল। আদমজী জুট মিলকে প্রাচ্যের ডান্ডিও বলা হতো। তাই যুদ্ধের আগে মিলটি প্রতি বছর লাভবান হচ্ছিল। প্রশ্ন ওঠে যে বিজেএমসির তত্ত্বাবধানে থাকা এই আদমজী পাটকলটি কেন লাভ করতে পারেনি এবং বন্ধ হয়ে গিয়েছিল?

দুর্বল ব্যবস্থাপনা

আদমজী পাটকল বন্ধের পেছনের অন্যতম কারণ হল- ‘অব্যবস্থাপনা’। জুটমিলটি পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিজেএমসি সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করতে পারেনি। বাংলাদেশের অন্যান্য পাটকলের মধ্যে আদমজী পাটকলে সবচেয়ে বেশি শ্রমিক-কর্মচারী ছিল। আদমজী পাটকলের দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে দুর্নীতির এক অতল গহ্বর পড়ে এ জুটমিল। স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির কারণে অপ্রয়োজনীয়ভাবে প্রচুর অদক্ষ কর্মচারী নিয়োগ করা হয়েছিল। অনেক শ্রমিক ও কর্মী নিয়ন্ত্রণ করা ছিল একটি কঠিন কাজ। শ্রমিকরা রাজনৈতিক দলগুলোর অনুসারি হওয়ায় পাটকলে কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত থাকার প্রবণতা এবং কাজে অনিয়মের কারণে উৎপাদনে অবনতি ঘটে। নিয়োগে দুর্নীতির পাশাপাশি, মিলের যন্ত্রাংশ, পাটের তৈরী পন্য চুরির ঘটনা ঘটে অহরহ। অসাধু শ্রমিক ও কর্মচারীরা গোপনে মিলের যন্ত্রপাতি বিক্রি করে দেয়ার পাশাপাশি শ্রমিক নেতাদের ক্যাডাররা ওয়ার্কশপগুলোতে তৈরি করতো ছোট ছোট আগ্নেয়াস্ত্র। এছাড়া ট্রেড ইউনিয়নগুলোর আন্দোলন ও ধর্মঘটের ফলে মিলের উৎপাদন কার্যক্রম হ্রাস পেতে থাকে। ফলস্বরূপ, পাটকল ক্লায়েন্টদের চাহিদা পূরণ করতে পারেনি এবং তারা সময়সীমা পূরণ করতে পারেনি। তাই বিদেশি অর্ডার বাতিল করা হয়েছিল। এতে করে মিলের লোকসানে পাল্লা ক্রমশ ভারি হতে থাকে।

মান হ্রাস

দুর্নীতির মাধ্যমে নিযুক্ত অনেক অদক্ষ শ্রমিকের নিম্নমানের কাজের কারণে পাটজাত পণ্যের মান হ্রাস পায়। দুর্নীতি ও জালিয়াতির কারণে মিলে নিম্নমানের পাট উচ্চমূল্যে কেনা হয়েছিল। অপরদিকে পাট চাষিরা কখনও পাটের সঠিক দাম পাননি। ফলস্বরূপ আদমাজীর পাটজাত পণ্যের মান নিম্নমানের ছিল এবং বিদেশি ক্লায়েন্টরা ধীরে ধীরে আস্থা হারাতে শুরু করে।

প্রতিযোগিতা

যখন বাংলাদেশের স্থানীয় পাটকলগুলো ব্যাপক দুর্নীতি এবং দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে অর্ডার হারাচ্ছিল, তখন ভারত তাদের পাট শিল্পের উন্নতি করছিল। যদিও বাংলাদেশে চাষ করা পাটের মান ভারতের তুলনায় অনেক ভালো ছিল। ভারতীয় পাট শিল্প ও মিলগুলি উৎপাদনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখে। ফলে বাংলাদেশের সমস্ত অর্ডার ভারতে স্থানান্তরিত হতে থাকে। অদক্ষতা ও অসচেতনার অভাবে বাংলাদেশ এই খাতে তেমন উন্নতি করতে পারেনি। তাই ক্রমশ লোকসানের সম্মুখীন হতে হয়েছিল পাটকলগুলোকে। অন্যদিকে, ভারতের এত দ্রুত প্রবৃদ্ধি তাদেরকে পাট শিল্পে শীর্ষস্থানে নিয়ে যায়। এতে বিশ্বের বৃহত্তম পাটকল আদমজী পাটকল বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হয়। ফলশ্রুতিতে তৎকালীন সরকার এ মিলটি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়।

উদ্ভাবনের অভাব

আদমজী পাটকল বন্ধ হওয়ার আরেকটি কারণ ছিল উদ্ভাবনের অভাব। স্ট্যাটিস্টা-র অনুসারে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশ ১ দশমিক ৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন পাট উৎপাদন করে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে। ভারতে পাট উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১ দশমিক ৭ মিলিয়নেরও বেশি। স্ট্যাটিস্টা-র আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশ ১০৭ মিলিয়ন ডলারের পাট রপ্তানি করে শীর্ষ রপ্তানিকারক ছিল। একই সময়ে ভারত মাত্র ১৩ মিলিয়ন ডলারের (প্রায়) পাট রপ্তানি করেছিল। এর অর্থ হল বাংলাদেশের পাট শিল্প রপ্তানিমুখী ছিল এবং ভারত ও চীন পাটজাত পণ্য উৎপাদনের উপর মনোনিবেশ করেছিল। ব্রিটিশ শাসনামলের পুরনো প্রযুক্তিগত মেশিন ব্যবহার করে বাংলাদেশ পাটজাত পণ্য উৎপাদন করছিল। পাশাপাশি ভারত ও চীন অত্যাধুনিক মেশিন ব্যবহার করে পাটপন্য তৈরী করতো। সময়ের চাহিদানুপাতে বাংলাদেশ পাটজাত পণ্য উৎপাদনে কোনও উদ্ভাবন আনেনি। তাই বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের পাটজাত পণ্যের চাহিদা হ্রাস পেতে থাকে। একই সময়ে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং পণ্যের বৈচিত্র্যের কারণে ভারত ও চীন উভয়ই দ্রুত অগ্রগতি লাভ করছিল। ফলে বৃহত্তর আদমজী জুট মিলে বিদায়ের ঘন্টা বাজে। সাথে সরকারি অন্য পাটকলগুলিও আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যায়।
সূত্র-ঢাকা পোষ্ট

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট