
যুগের নারায়ণগঞ্জ:
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার কাশীপুরে অসংখ্য হত্যা ও চাঁদাবাজির ঘটনায় অভিযুক্ত আজমেরী ওসমানের পক্ষে মশাল মিছিলের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় মো. রাতুল শেখ (৩০) নামে এক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। গত বছরের জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় রাতুলের অভিযোগ, স্থানীয় একটি রাজনৈতিক মহল ব্যক্তিস্বার্থে তাকে এ মামলায় হয়রানি করার জন্য ফাঁসিয়ে দিয়েছে।
তার দাবি, মশাল মিছিলের সময় তিনি নারায়ণগঞ্জে ছিলেন না, ছিলেন ঢাকায়। অথচ তাকে ওই ঘটনায় দায়ের করা পুলিশের মামলায় ৩২ নম্বর আসামি করা হয়েছে।
গত ২২ মে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আশিকুর রহমান বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলাটি দায়ের করেন। এ মামলায় ৩২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৪০ থেকে ৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আসামির তালিকায় ৩২ নম্বরে রয়েছে রাতুলের নাম। তিনি কাশীপুর ইউনিয়নের নূর মসজিদ এলাকার বাসিন্দা।
স্থানীয়রা জানান, কাশীপুরভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘আলোকিত কাশীপুর’-এর সদস্য রাতুল সামাজিক বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত। করোনাকালীন সময়েও ‘আলোকিত কাশীপুর’-এর নানা সেবামূলক কাজে নিয়োজিত ছিলেন। জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনেও ছাত্র-জনতার পক্ষে তার ভূমিকা ছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তিনি আন্দোলনের পক্ষে একাধিক পোস্ট দিয়ে সরব ছিলেন।
এদিকে, পুলিশের মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ২১ মে রাত আনুমানিক সোয়া আটটার দিকে কাশীপুর মধ্যপাড়া এলাকায় পঞ্চবটি-মোক্তারপুর সড়কে লাঠিসোটা, ইট-পাটকেল ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মশাল মিছিল করেন একদল তরুণ-যুবক। তারা গণঅভ্যুত্থানের মুখে পতন হওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয়, বাবা শেখ মুজিবুর রহমান ও ‘কুখ্যাত সন্ত্রাসী’ আজমেরী ওসমানের ছবি সম্বলিত ব্যানার ব্যবহার করে ফ্যাসিস্টের পক্ষে নানা স্লোগান দেন।
স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আজমেরী ওসমানের অনুসারীরা এ মিছিলে অংশ নেন। পরে মিছিলে ধাওয়া দেন স্থানীয় বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা। তারা এক কিশোরকে মিছিল থেকে আটকও করেন। ওই কিশোরের দেওয়া তথ্যে পরে আরও তিন কিশোরকে আটক করে পুলিশ।
এই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে সাখাওয়াত হোসেন বাবু ওরফে হোয়াইট বাবুকে। বাবু স্থানীয়ভাবে ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ অনুসারী কাশীপুর ইউপির চেয়ারম্যান ও ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম সাইফউল্লাহ বাদলের সাথে সখ্যতা তৈরি করে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
কিন্তু মামলায় আসামি হলেও রাতুলের কোনো রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। ৩০ বছর বয়সী রাতুল ভোলাইল গেদ্দারবাজার এলাকায় একটি ফ্লেক্সিলোড ও ছবি তোলার দোকান চালান। তার পরিবারের কেউও রাজনৈতিক কোনো সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন বলে দাবি রাতুলের।
রাতুল শেখের দাবি, ঘটনা দিন বিকেল থেকে রাত দশটা পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অবস্থান করছিলেন।
“জুলাই আন্দোলনে সবাই যখন ঘরে ছিল, তখন আমি ছিলাম মাঠে, পুলিশের গানপয়েন্টে। আন্দোলন করেছি। ৫ আগস্ট সকলের সাথে পায়ে হেঁটে গণভবনে গিয়েছি। সেই আমাকে ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে এ মামলা জড়ানো হয়েছে। কিন্তু ওইদিন আমি নারায়ণগঞ্জেই ছিলাম না। আমি ছিলাম ঢাকা। ফ্লাইওভারে টোল দিয়েছি, সিসিটিভি ফুটেজ অনুসন্ধানে এর প্রমাণ পাওয়া যাবে”, বলেন রাতুল।
তার অভিযোগ, বিএনপির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এক ব্যক্তির পরামর্শে তাকে এ মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। ‘ব্যক্তিগত আক্রোশ’ থেকে ওই ব্যক্তি কাজটি করেছেন।
তবে, মামলার বিষয়ে কথা বলতে ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরীফুল ইসলামের মুঠোফোনের নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।