ফতুল্লা প্রতিনিধিঃ ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খন্দকার লুৎফর রহমান স্বপনের মৃত্যুতে নতুন করে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তফসীল অনুযায়ী আগামী ৯ মার্চ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। শূন্য ইউনিয়নের উপনির্বাচনে চেয়ারম্যান হওয়ার দৌড়ে একাধিক প্রার্থীর নাম আলোচনায় উঠে এসেছে। ক্ষমতাসীন কিংবা দলের বাইরে থেকেও নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে একাধিক ব্যাক্তি।
ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনের নাম বেশ আলোচিত হচ্ছে এবারের নির্বাচনকে ঘিরে। তবে ফতুল্লা ইউনিয়নবাসী স্বচ্ছ, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে একজন ক্লিন ইমেজের, জনবান্ধন এবং গ্রহণযোগ্য ব্যাক্তিকে চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করতে চাচ্ছেন। এমনকি ফতুল্লাবাসীর দীর্ঘদিনের অভিশাপ জলাবদ্ধতার ভোগান্তি থেকে মুক্ত করতে পারবেন এমন প্রার্থীকেই ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে বেছে নিবেন বলে তারা তাদের অভিমত ব্যক্ত করেন। তবে এবারের নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হচ্ছে না বলে ইতিমধ্যে ঘোষনা দিয়েছেন বাংলাদেশ নির্বাচব কমিশন। তবে, দলীয় প্রতীকে নির্বাচন না হলেও দলের সমর্থন পাওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিয়েছেন ক্ষমতাসীনদলের সম্ভ্যাব্যপ্রার্থীরা।
তবে, এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে ইচ্ছুক হেভিওয়েট প্রার্থীদের পথে ফতুল্লা থানা যুবলীগের সভাপতি মীর সোহেল আলী, স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি ফরিদ আহাম্মেদ লিঠন, ছাত্রলীগের সভাপতি আবু মোঃ শরীফুল হক, যুবলীগের সাধারন সম্পাদক ফাইজুলের নাম শোনা যাচ্ছে। ইতিমধ্যে নির্বাচনে অংশগ্রহনকারী সম্ভ্যাব্যপ্রার্থীরা ফতুল্লার বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়নের ভুলি ছড়িয়ে উঠান বৈঠকও করে যাচ্ছেন। সে সাথে চালাচ্ছেন নির্বাচনী প্রচারনাও।
নির্বাচনের অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক সম্ভ্যাব্যপ্রার্থী ফতুল্লা থানা যুবলীগের সভাপতি মীর সোহেল আলীর সাথে নির্বাচনের খুঁটিনাটি বিষয়ে কথা হয় এ প্রতিবেদকের সাথে। মীর সোহেল আলী বলেন, আমি ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে ইচ্ছুক। তবে, নির্বাচনে অংশগ্রহন করব কিনা এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবেন আমার নেতা সাংসদ শামীম ওসমান। এমপি শামীম ওসমান যদি চান তবেই আমি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। অন্যথায় আমার নেতা যাক সমর্থন দিবেন তার পক্ষেই নির্বাচন করব।
তবে, আমি আত্মবিশ্বাসী আমার নেতা এবারের ফতুল্লা ইউপির চেয়ারম্যান নির্বাচনে আমাকেই সমর্থন করবেন। কি কারনে নির্বাচনে করতে ইচ্ছুক মীর সোহেল আলীকে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমার নেতা শামীম ওসমান উন্নয়নের রূপকার। আমার নেতার আর্দশকে লালন করেই ফতুল্লাবাসীর উন্নয়নে আমি অংশীদার হতে চাই। মীর সোহেল আলী আরো বলেন, আল্লাহর ইচ্ছায় আমি যদি চেয়ারম্যান হই তাহলে ফতুল্লাবাসীর দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতার সমস্যা সমাধানে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হবে।
সে সাথে মাদক ও কিশোরগ্যাং এবং সন্ত্রাসমুক্ত পরিচ্ছন্ন ফতুল্লা গড়ে তুলতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হবে। নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল থেকে তিনি ছাড়াও আরো একাধিক প্রার্থী অংশগ্রহন করতে ইচ্ছুক এ বিষয়টি তিনি কিভাবে দেখছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচন করার অধিকার প্রত্যেকটি জনগনের রয়েছে। তবে, আমিও শুনেছি। যাদের নাম শুনেছি প্রতিটি প্রার্থীই যোগ্য এবং প্রত্যেকের জন্যই আমার শুভ কামনা। দল থেকে যদি সমর্থন না দেয়া হয় তাহলে নির্বাচন করবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, দলীয় সমর্থন না পেলে নির্বাচন করার প্রশ্নই উঠে না। উল্টো দল যাকে সমর্থন দিবে তার পক্ষেই তিনি কাজ করবেন বলেও নিশ্চিত করেন।
সম্ভ্যাব্য অপর প্রার্থী ফতুল্লা থানা ছাত্রলীগের সভাপতি আবু মোঃ শরীফুল হকের সাথে নির্বাচন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে কথা হয়। মীর সোহেল আলীর সুরেই শরীফুল হক বলেন, দলীয় সিদ্ধান্তের বাহিরে নির্বাচন করার প্রশ্নই উঠে না। উল্টো নারায়নগঞ্জবাসীর প্রানপুরুষ সাংসদ শামীম ওসমান যে সিদ্ধান্ত নিবেন সে সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে তিনি অগ্রসর হবেন। তবে শরীফুল হক আত্মবিশ্বাসী চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে দল থেকে তাকেই সমর্থন দিবেন। ফতুল্লা ইউপি নির্বাচনে যদি তিনি চেয়ারম্যান হতে পারেন, তিনিও ফতুল্লাবাসীর উন্নয়নে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার ঘোষনা দেন।
এমনকি ফতুল্লাবাসীর দীর্ঘদিনের সমস্যা জলবদ্ধাতার ভোগান্তি থেকে মুক্তি দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। তিনি আরো বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ক্ষেত্রে যদি দলীয় সমর্থন নাও পান দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্য সব ধরনের সহযোগিতা তিনি করবেন এমনকি পূর্বের ন্যায় ফতুল্লাবাসীর সুখে দুঃখে পাশে থাকবেন বলেও তিনি জানান।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, এবারের উপনির্বাচনে বেশ কয়েকজনের নাম উঠে এসেছে। এদের মধ্যে ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ডের মেম্বার কাজী মাঈন উদ্দিন, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মীর সোহেল আলী, ফতুল্লা থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ফায়জুল ইসলাম, যুবলীগ নেতা আজমত আলী অন্যতম।
অন্যদিকে ফয়জুল ইসলামের বিরুদ্ধে রয়েছে মাদক ব্যবসা, ঝুট ব্যবসাসহ মানুষের সাথে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ। তবে যুবলীগ নেতা আজম আলী দলীয় কোনো পদে না থাকলেও দলের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে বেশ আলোচিত হয়ে উঠেছেন। দলের নেতাকর্মী ছাড়াও সমাজের সাধারণ মানুষের সাথে তার গভীর সখ্যতা রয়েছে।
তবে, নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার জন্য ফতুল্লা থানা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি ফরিদ আহাম্মেদ লিঠনের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্ঠা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদে এর আগে দীর্ঘ ৩ দশক ধরে চেয়ারম্যান ছিলেন নূর হোসেন। তার প্রয়াণের পর ২০১১ সালের ১৬ মে ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন খন্দকার লুৎফর রহমান স্বপন। দীর্ঘ ৩০ বছর পর ২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে জয়ী হন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী খন্দকার লুৎফর রহমান স্বপন। আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী খন্দকার লুৎফর রহমান স্বপন (নৌকা) পেয়েছিলেন ২৮ হাজার ৬৭৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী মোঃ শাহজাহান আলীর (হাত পাখা) পেয়েছিলেন ১৪ হাজার ১৭৭ ভোট।
উলেখ্য গত ২৩ সেপ্টেম্বর এই দুনিয়ার মায়া ত্যগ করে মহান রাব্বুল আলামিনের ডাকে না ফেরার দেশে চলে যান স্বপন চেয়ারম্যান।