জাপানের অবকাশ শহর কারুইজাওয়ায় জি-৭ যুগেরনারায়ণগঞ্জঃ পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা তিন দিনের বৈঠকে মিলিত হয়েছেন জাপানের অবকাশ শহর কারুইজাওয়ায় জি-৭ পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা তিন দিনের বৈঠকে মিলিত হয়েছেনছবি: রয়টার্স
শিল্পোন্নত সাত দেশের জোট জি-৭–এর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা জাপানের নাগানো অঞ্চলের অবকাশ শহর কারুইজাওয়ায় রোববার থেকে তিন দিনের বৈঠকে মিলিত হয়েছেন। বৈঠকের দ্বিতীয় দিনে সোমবার আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি, বিশেষ করে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন তাঁরা। জি-৭ পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা রাশিয়ার অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে যাওয়া বন্ধ করতে তাঁদের নেওয়া পদক্ষেপ জোরদার করতে সম্মত হয়েছেন। একই সঙ্গে রাশিয়া যেন অন্যান্য দেশ থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে নিজেদের কী করা দরকার, তা নিয়েও মতবিনিময় করেছেন তাঁরা।
জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োশিমাসা হায়াশির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগর নিয়েও আলোচনা হয়। বিশেষ করে প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে চীনের বর্ধিত উপস্থিতি সামাল দিতে এ অঞ্চলের দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে জোটের সদস্যদের জড়িত হওয়ার মাত্রা বাড়াতে সম্মত হয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।
বৈঠকের প্রথম দিন রোববার ভারত-প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন জি–৭ পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। সেখানে তারা এই মর্মে সম্মত হন যে চীন ও উত্তর কোরিয়া অঞ্চলে যেসব চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে, তার জবাব দিতে ঐক্যবদ্ধ থাকা দরকার। এই বক্তব্যে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সাম্প্রতিক চীন সফর এবং সেখানে দেওয়া বিভিন্ন বক্তব্য নিয়ে অন্য সদস্যদের মধ্যে দেখা দেওয়া অস্বস্তির প্রতিফলন খুঁজে পাওয়া যায়।
সোমবার দ্বিতীয় দিনের আলোচনায় আরও একটি প্রধান বিষয় ছিল গ্লোবাল সাউথ নামে পরিচিত উদীয়মান ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা জোরদার করা নিয়ে ইউক্রেন প্রশ্নে কীভাবে তাদের দলে ভেড়ানো যায়, সেই উপায় খুঁজে দেখা। উল্লেখ্য, ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশ রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরোপিত নিষেধাজ্ঞায় যোগ দিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করে আসছে।
ইউক্রেন যুদ্ধের পরোক্ষ প্রভাবে খাদ্যপণ্য ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে দক্ষিণের দেশগুলোকে যে মারাত্মক সংকটের মুখে পড়তে হচ্ছে, তার জন্য মূলত রাশিয়াই দায়ী বলে মনে করে জি-৭। রাশিয়া হচ্ছে শস্য, তেল ও গ্যাসের অন্যতম প্রধান রপ্তানিকারক দেশ। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে নৌপরিবহন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠায় রাশিয়া থেকে পণ্য পরিবহন এবং ইউক্রেন থেকে আসা গম ও ভুট্টার চালান ব্যাহত হচ্ছে। এতে দক্ষিণের অনেক দেশকে মারাত্মক সমস্যায় পড়তে হলেও সেসব দেশ ঢালাওভাবে এ জন্য রাশিয়াকে দায়ী করা থেকে বিরত আছে। ফলে এই দেশগুলোর অবস্থান কীভাবে পাল্টানো যায়, সেই পথের সন্ধানে আছে জি-৭ সদস্যরা।
জি-৭ পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা সোমবারের বৈঠকে ইরান ও মধ্যপ্রাচ্য নিয়েও আলোচনা করেন। পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির লক্ষ্যে কাজ করা থেকে ইরানকে বিরত রাখতে পরমাণু বিস্তার রোধে দেশের করা অঙ্গীকার মেনে চলার গুরুত্বের ওপর তারা আলোকপাত করলেও স্থগিত হয়ে যাওয়া পরমাণু চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়নি। একইভাবে মধ্যপ্রাচ্য প্রসঙ্গেও অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা করে সমস্যার সার্বিক সমাধান খুঁজে পেতে হলে সহিংসতার চক্র বন্ধ করা, সংলাপের সুযোগ তৈরি করে নেওয়া এবং আস্থা সৃষ্টির পদক্ষেপ এগিয়ে নেওয়ার উল্লেখ তারা করলেও অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সম্প্রতি প্রতিষ্ঠিত ঐকমত্য ও সংঘাত বন্ধে আলোচনা শুরু হওয়া নিয়ে কোনো মন্তব্য মন্ত্রীরা করেননি।
মঙ্গলবার বৈঠকের শেষ দিনে জি-৭ পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা একটি বিবৃতি প্রচার করবেন। এসব প্রশ্নে জোটের সার্বিক অবস্থান সেখানে আরও বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।