
যুগের নারায়ণগঞ্জ:
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ছাড়ার পর নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান পরিবারসহ দেশত্যাগ করলেও তার প্রভাব এখনো দৃঢ়ভাবে টিকে আছে ফতুল্লাী সর্বত্র।
ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পরও ফতুল্লার চারটি ইউনিয়নে চেয়ারম্যানের পদে বসে আছেন ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ঠ আওয়ামী লীগ নেতারা। তাদের অধিকাংশই ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের মামলার আসামি।
ফতুল্লা থানার পাঁচটি ইউনিয়নের মধ্যে চারটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় দায়ের করা হত্যা মামলার আসামি। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সবাই আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের নেতা এবং শামীম ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত।
কুতুবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনিরুল আলম সেন্টু একসময় বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। তবে ২০২২ সালের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে নৌকা প্রতীকে টানা পঞ্চমবারের মতো চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০২৪ সালের সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালানোর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। গণঅভ্যুত্থানের পর তার বিরুদ্ধে তিনটি হত্যা মামলা হয়। কিছুদিন আত্মগোপনে থাকার পর তিনি আবার এলাকায় ফিরে এসে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। স্থানীয়দের অভিযোগ—বিএনপির একটি অংশকে ‘ম্যানেজ’ করে তিনি এলাকায় অবস্থান করছেন।
এনায়েতনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আত্মগোপনে চলে গেলে র্যাব কেরানীগঞ্জ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। জেল খেটে জামিনে বের হলেও আসেন না পরিষদে এমনকি তিনি দায়িত্বও বুজে নেননি এখনও। তবে, থাকছেন ধরা ছোয়ার বাইরে।
তার অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সালাউদ্দিন। তার বিরুদ্ধেও রয়েছে পরিবহন চাঁদাবাজি, দখলবাজি এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় সংঘটিত দুইটি হত্যা মামলার অভিযোগ।
বক্তাবলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী। তিনি আত্মগোপনে গেলে জেলা প্রশাসন আব্দুর রশীদকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়। কিন্তু গত ২৫ সেপ্টেম্বর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত ইয়াসিন হত্যা মামলায় আব্দুর রশীদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার বিরুদ্ধেও চারটি মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে।
ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম সাইফুল্লাহ বাদল ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। তার বিরুদ্ধে রয়েছে দু’ডজনেরও বেশি মামলা। এরপর কাশীপুর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হন ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম আহমেদ। তার বিরুদ্ধেও তিনটি হত্যা ও হত্যাচেষ্টা মামলা রয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, কয়েক কোটি টাকা বিএনপির একটি সিন্ডিকেটের সহায়তায় তিনি চেয়ারম্যান পদে বসেছেন।
ফতুল্লা মডেল থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন বলেন, “বৈষম্যবিরোধী হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি।”
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাছলিমা শিরিন বলেন, “এটা পুলিশের বিষয়। তারাই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে।”
স্থানীয় বিশ্লেষকরা বলছেন, ফতুল্লায় আওয়ামী লীগের প্রভাব এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। শামীম ওসমানের রাজনৈতিক নেটওয়ার্কের প্রভাব ও প্রশাসনের নীরব ভূমিকার কারণে তার অনুসারীরা এখনো বহাল তবিয়তে ক্ষমতার আসনে বসে আছেন।