
যুগের নারায়ণগঞ্জ:
নিজ চেম্বারের ভেতরে টিপুকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে এবং ওই সময় সাখাওয়াতকে অশ্রাভ্য ভাষায় গালিগালাজসহ শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার ভয় দেখিয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর থানা বিএনপির সদস্য সচিবের পদটি ভাগিয়ে নেন আনোয়ার প্রধান। নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপুকে জিম্মি করে নারায়ণগঞ্জ সদর থানা বিএনপির সদস্য সচিব যা পরবর্তীতে সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদকের পদ ভাগিয়ে নেন আনোয়ার প্রধান।
এর আগে টিপুকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছিলেন এবং সাখাওয়াতকে মৌখিকভাবে বাকধোলাই দিয়েছিলেন আনোয়ার প্রধান। আনোয়ার প্রধান জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর কোর্টপাড়া থেকে সাখাওয়াত ও টিপুকে বিতারিত করার মহাপরিকল্পনার চেষ্টায় আছেন বলেও বেশকটি সূত্রের খবর। বর্তমানে আনোয়ার প্রধানের সঙ্গে সাখাওয়াতের বৈরী সম্পর্ক বিদ্যমান। আনোয়ার প্রধান চাচ্ছেন কোর্ট পাড়ায় সাখাওয়াত ও টিপুর কোনো খবরদারী চলবে না। এদিকে আনোয়ার সদর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পেছনের ঘটনা ফাঁস করেছেন তৃণমুল পর্যায়ের বেশকজন নেতাকর্মী।
নেতাকর্মীদের সূত্রে, ২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির ৪১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় বিএনপি। কমিটিতে সাখাওয়াত হোসেন খানকে আহ্বায়ক ও আবু আল ইউসুফ খান টিপুকে সদস্য সচিব করে এই কমিটি গঠিত হয়। কিন্তু এর পূর্বে সাখাওয়াতের রাজনীতিতে সচল রাখা অন্যতম হাতিয়ার আনোয়ার প্রধানকে সদস্য পদে মাত্র রাখা হয়। সাখাওয়াতের ওয়ানম্যান খ্যাত বন্দর মুছাপুরের মামলাবাজ তেলবাজ কর্মী জাতীয়পার্টিঘেষা মোটা শাহিনকেও সদস্য এবং আনোয়ার প্রধানকেও সদস্য পদে রাখার বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি আনোয়ার প্রধান। কমিটিতে আনোয়ার প্রধানকে যুগ্ম আহ্বায়ক পদে না রাখায় সাখাওয়াত ও টিপুর বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠেন। এ নিয়ে আড়ালে আবডালে সাখাওয়াত ও টিপুকে নিয়ে বিষোদগার করেন তিনি।
কমিটি গঠনের মাসে দেড়েকের মাথায় আনোয়ার প্রধানের ব্যক্তিগত চেম্বারে যান টিপু। তাকে দেখেই অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন আনোয়ার প্রধান। টিপু কথা বলতে চাইলে তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন আনোয়ার। পাশের চেম্বারই অবস্থান করাকালে হৈ চৈ শুনে ছুটে আসেন সাখাওয়াত। ওই সময় সাখাওয়াতকে আনোয়ার তুই তুক্কার শব্দ ব্যবহার করে সাখাওয়াতকে বাকধোলাই দেন। শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতের ভয় দেখালে সাখাওয়াত তার চেম্বারে চলে যান।
পরবর্তীতে দাবি তোলা হয় আনোয়ার প্রধানকে নারায়ণগঞ্জ সদর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদে রাখতে হবে। টিপু পিটুনির ভয়ে রাজি হলেও গড়িমসি করতে থাকেন সাখাওয়াত। এ নিয়ে নীরব দ্বন্ধ শুরু হয় বেশ। নিজের অনুগামীদের নিয়ে সাখাওয়াতকেও লাঞ্ছিত করার পরিকল্পনা করেন আনোয়ার প্রধান। সাখাওয়াতকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার পরিকল্পনায় জড়িত ছিলেন সাখাওয়াতেরই পালিত বিশেষ পেশার একজন ব্যক্তিও। সেই লক্ষ্যে বিভিন্ন নেতাকর্মীদের কাছে হুমকি ধমকির বিষয়টি ছড়িয়ে দেয়। বিষয়টি সাখাওয়াত নেতাকর্মীদের কাছ থেকে জেনে বুঝতে পেরে আনোয়ার প্রধানকে সদর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদে বসাতে রাজি হোন।
পরবর্তীতে ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারী মাসুদ রানাকে আহ্বায়ক ও আনোয়ার প্রধানকে সদস্য সচিব করে ৫৭ সদস্য বিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ সদর থানা বিএনপির কমিটি ঘোষণা করেন সাখাওয়াত ও টিপু। এরপর একই বছর ১৩ জুন সদর থানা বিএনপির কথিত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে সকলের একক সমর্থনে সভাপতি পদে মাসুদ রানা ও সাধারণ সম্পাদক পদে আনোয়ার প্রধান নির্বাচিত হোন।
এদিকে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হোন আনোয়ার প্রধান। এরপর জেলা আদালতে পিপি জিপি স্পেশাল পিপিদের ৯১ জন আইনজীবীকে সরকারী আইন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয় আইন মন্ত্রনালয়। এর আগে পিপি জিপিদের একটি পৃথক তালিকা কেন্দ্রে জমা দেন সাখাওয়াত হোসেন খান। তার এই তালিকার বিরোধীতা করে একজোট হোন সমিতির বর্তমান সভাপতি সরকার হুমায়ুন কবির, আইনজীবী ফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম মোল্লা, আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ জাকির ও আনোয়ার প্রধান। তারা একজোট হয়ে পৃথক তালিকা তৈরি করে আইন মন্ত্রনালয় থেকে আইন কর্মকর্তাদের তালিকা পাশ করিয়ে আনেন। সাখাওয়াতের পাঠানো তালিকা অনুমোদিত হয়নি।