যুগের নারায়ণগঞ্জ:
ঈদুল আযহার আনন্দ প্রিয়জনদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে প্রতিবছরই নারায়ণগঞ্জ ছাড়ে লাখো মানুষ। তবে ঘরে ফেরার এই আনন্দযাত্রা প্রায়ই ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায় অতিরিক্ত ভাড়া ও অতিরিক্ত যাত্রী বহনের মতো অনিয়মের কারণে। এসব ভোগান্তি থেকে মুক্তি দিতে এবার ঈদযাত্রায় কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
পহেলা জুন থেকে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যৌথভাবে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন পরিবহন স্ট্যান্ডে অভিযান পরিচালনা করছে সেনাবাহিনী। নিয়মিত এই অভিযানের ফলে দূরপাল্লার বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও অতিরিক্ত যাত্রী বহন অনেকটাই কমে এসেছে। স্বাভাবিক ভাড়ায় নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারায় যাত্রীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে, আর এই উদ্যোগের জন্য সেনাবাহিনী প্রশংসিত হচ্ছেন সর্বমহলে।
সোমবার (২ জুন) কাঁচপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট মাহিয়াত সিকদারের নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের দায়ে তিন পরিবহন প্রতিষ্ঠানের ৩ জনকে আটক করে জেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এর আগে রোববার শহরের আর্মি মার্কেট ও চাঁদমারি এলাকার বিভিন্ন পরিবহন কাউন্টারে পরিচালিত অভিযানে ৬ জনকে আটক করা হয়।
নারায়ণগঞ্জ একটি শ্রমঘন শিল্পাঞ্চল হওয়ায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শ্রমজীবী মানুষ এখানে বসবাস করেন। ঈদের ছুটিতে এদের অধিকাংশই বাড়ি ফিরতে চান নাড়ির টানে। কিন্তু পরিবহন শ্রমিক ও মালিকরা এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে যাত্রীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে থাকেন। কখনও কখনও এ ভাড়া স্বাভাবিকের চেয়ে দুই থেকে তিনগুণ পর্যন্ত বেড়ে যায়। এতে করে হতদরিদ্র মানুষ ঘরে ফিরতে গিয়েও দুর্ভোগে পড়েন।
কিন্তু সেনাবাহিনীর অভিযান চালুর পর থেকেই বাস কাউন্টারগুলোতে যাত্রীদের সঙ্গে বাড়তি ভাড়া নিয়ে তর্ক বা প্রতারণার ঘটনা অনেকটাই কমেছে। যাত্রীরা বলছেন, প্রতি বছরই আমরা বাস মালিকদের কাছে জিম্মি হয়ে যাই। অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েও সিট মেলে না। দাঁড়িয়ে, ছাদে উঠে কিংবা অনেক সময় বৃষ্টিতে ভিজে বাড়ি ফিরতে হয়। কিন্তু এবার সেনাবাহিনীর কারণে যাত্রা অনেকটাই স্বস্তির হয়েছে। এজন্য তারা সেনাবাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
শুধু যাত্রীরাই নয়, সেনাবাহিনীর এ উদ্যোগ প্রশংসা কুড়িয়েছে সব মহলে। নাগরিক সমাজ, বিভিন্ন সংগঠন ও সাধারণ মানুষ সেনাবাহিনীর এই কার্যক্রম অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা মনে করছেন, এমন উদ্যোগ নিয়মিত হলে ঈদ বা অন্য যেকোনো উৎসবের যাত্রা হবে আরও নিরাপদ, শৃঙ্খলিত এবং মানবিক।