1. admin@jugernarayanganj.com : jugernaraya nganj nganj : jugernaraya nganj nganj
  2. multicare.net@gmail.com : যুগের নারায়ণগঞ্জ :
শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৪৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
নাঃ গঞ্জ মহানগর গার্মেন্টস শ্রমিকদলের ১১সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি বন্দরে ক্রাউন সিমেন্টের গাড়ি নিয়ন্ত্রন হারিয়ে খাদে আহত-১ ঘোড়াঘাটে ১৯২৫হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২৩ হাজার মেঃটন কাশীপুর খিল মার্কেটে অল্প বৃষ্টিতেই কৃত্রিম বন্যা-দেখার কেউ নেই ঘোড়াঘাটে ১৯২৫হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২৩ হাজার মেঃটন একাংশের বয়কটের আহ্বান’ শুক্রবার হেফাজতের সমাবেশ! শীতলক্ষ্যা নদী রক্ষায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করে নদী ভাবনা কেন্দ্র থেকে ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সোনারগাঁয়ে জামায়াতের গণসংযোগ গোদনাইলে অবৈধ জ্বালানি তেল বিক্রি বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘুষ ও নানা অভিযোগে বিতর্কিত আড়াইহাজার থানার ওসি বদলি

বিদায়ী বছরের ক্ষত ‘এখনো আটকে উঠেন অনেকে’

প্রতিবেদকের নাম:
  • প্রকাশিত: শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ৫৪ বার পড়া হয়েছে

যুগের নারায়ণগঞ্জ:
ঘুমের মধ্যে আচমকা কেঁপে উঠি। ঘরের মধ্যে বন্দি ছিলাম। কী ভয়াবহ সেই দৃশ্য বলে বোঝাতে পারবো না। ছেলে-মেয়েদের নিয়ে সারাদিন-রাত উদ্বিগ্ন-উৎকণ্ঠায় পার করেছি। চারিদিকে শুধু আহাজারি। সবার মধ্যেই অজানা আতঙ্ক কখন কী হয়! কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের চলা আন্দোলনের মধ্যে নারায়ণগঞ্জে কালিরবাজার এলাকায় বসবাসরত গৃহিনী শর্মিলা সহিংস দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করছিলেন। দুই ছেলে ও এক মেয়েসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে শর্মিলা ব্যনার্জি থাকেন কালিরবাজার স্বর্নপট্টির গলিতে। ১৬ বছর ধরে এ এলাকার বাসিন্দা তিনি। কোটা আন্দোলন ঘিরে চলা সহিংসতার মতো দৃশ্য আগে কখনো দেখেননি জানিয়ে শর্মিলা বলেন, যেদিন শহরে  আন্দোলন শুরু হয়, সেদিন বাজারে গিয়েছিলেন তিনি। চোখের সামনেই দেখেছি ভয়াবহ দৃশ্য। একদিকে গুলি চলছে, অন্যদিকে রড-লাঠি নিয়ে একদল রাস্তা অবরোধ করছে। কোনো রকমে জীবন বাঁচিয়ে ঘরে ফিরতে পেরেছিলাম সেদিন। সেই দৃশ্য স্বপ্নে দেখে দুদিন ঘুমের মধ্যে আচমকা কেঁপে উঠি। ভয়ে নিজে ঘরের মধ্যে বন্দি থেকেছি, ছেলে-মেয়েদেরকেও ঘর থেকে বের হতে দেইনি আন্দোলনের দিনগুলোতে। এখন পরিস্থিতি শান্ত, কিন্তু ওইদিনগুলোর কথা মনে হলে এখনো ভয়ে কেঁপে উঠি, বলেন তিনি। শহরের চাষাড়া এলকায় একটি বাসায় ভাড়া থাকেন আলমগীর হোসেন। তিনি বলেন, আমাদের বাসা মেইন রোড থেকে বেশ কাছে। বাসার ছাদ থেকে রাস্তার দৃশ্য দেখা যায়। কিছুদিন আগে শহরের প্রানকেন্দ্র চাষাড়ার রাস্তার দৃশ্য ছিল খুবই ভয়াবহ। এমন দৃশ্য দেখতে হবে কল্পনাও করিনি। শহরটি যেন যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল। ভয়াবহ ওইদিনগুলো পার হয়ে এসেছি। এখন পরিস্থিতি শান্ত। কিন্তু অনেকে আপনজন হারিয়েছেন, নষ্ট হয়েছে রাষ্ট্রীয় সম্পদ। এতে কার উপকার হয়েছে? তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় সম্পদে যেভাবে হামলা করা হয়েছে তা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য না। যেসব সম্পদ ধ্বংস করা হয়েছে, তা তো জনগণের সম্পদ। আমার মতো সাধারণ মানুষের করের টাকায় এসব সম্পদ করা হয়েছে। যারা এই সম্পদ ধ্বংস করেছেন, তাদেরও অবদান রয়েছে এই সম্পদের পেছনে। সুতরাং এই সম্পদ নষ্ট করার মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে দেশের সব মানুষের ক্ষতি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, একদিকে রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্ট হয়েছে, অন্যদিকে অনেকগুলো প্রাণ চলে গেছে। যে আপনজন হারিয়েছে, সেই বুঝে আপনজন হারানোর ব্যথা। এই সহিংসতার ফলে কারও উপকার হয়নি বরং সবার ক্ষতি হয়েছে। তাই সবার উচিত সহিংসতা পরিহার করে, শান্তির পথে চলা। আমার মতো সাধারণ মানুষ কোনো সহিংসতা চায় না। আমরা পরিবার নিয়ে শান্তিতে বসবাস করতে চায়। অকালে কোনো মায়ের বুক খালি হোক আমরা সেটা চাই না। একই এলাকায় বসবসাসরত বাসিন্দা হিমেল বলেন, আন্দোলনের সময় ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়া, গুলি, আগুন, বেধড়ক পিটুনি কী হয়নি চাষাড়ার রাস্তায়। ৩টা দিন ভয়ঙ্কর আতঙ্কের মধ্য দিয়ে পার করতে হয়েছে এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের। গলির রাস্তাগুলোতেও ভর করেছিল আতঙ্ক। কারণ পুলিশ, বিজিবির ধাওয়া খেয়ে অনেক সময় আন্দোলকারীরা গলির রাস্তায় অবস্থান নেয়। তাদের হাতে রড, দেশি অস্ত্র, লাঠি, মোটরসাইকেলের অ্যাক্সেল ছিল। এসব দৃশ্য দেখলে সাধারণ মানুষের মনে আতঙ্ক দানাবাঁধবে এটাই স্বাভাবিক। তিনি বলেন, দাঙ্গার দৃশ্য সিনেমাতে দেখেছি। কোটা আন্দোলন ঘিরে যে দৃশ্য হয়েছিল, তা যেন সিনেমাকেও হার মানায়। ভয়ে বাজার করতেও বের হয়নি। কোনো রকমে ভর্তা-ডাল ভাত খেয়ে দু’দিন পার করেছি। কারফিউ জারি করার পর পরিস্থিতি শান্ত হয়ে এসেছে। মানুষের মনে স্বস্তি ফিরছে। কিন্তু ভয়ঙ্কর দৃশ্যগুলো মনে যে ক্ষত সৃষ্টি করেছে তা তো মুছে ফেলা সম্ভব হবে না। তারপরও সৃষ্টিকর্তার কাছে চাওয়া এমন দৃশ্য যাতে আর দেখতে না হয়। শগরের ২নং রেলগেইট এলাকার বাসিন্দা  মিজানুর রহমান বলেন, আন্দোলনের মধ্যে পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়া হয়েছে। রাস্তায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

২নং রেলগেইর ছিল পুরোপুরি রণক্ষেত্র। শহরের অভিজাত একটি ক্লাবে আগুন দেওয়া হয়, তারপরের দিন রাস্তায় নেমে শুনি একজন গুলি খেয়েছে। ভয়ে আমার আশপাশের বাসিন্দারা রাস্তায় বের হয়নি আন্দোলনের সময়। সবার মধ্যেই অজানা আতঙ্ক ছিল। কখন কী হয়ে যায়, সবাই সেই টেনশনে ছিলেন। এখন নারায়ণগঞ্জ পুরোপুরি শান্ত। দেখে বোঝার উপায় নেই, কিছুদিন আগে এই অঞ্চল ছিল রণক্ষেত্র। ৭১ এর বীভৎস রূপ বাংলার মানুষ ফের দেখেছে। যেভাবে ধ্বংস করেছে, মানতে পারছি না। স্বপ্নের নারায়ণগঞ্জকে এভাবে ধ্বংস করে দিবে। তিনি বলেন, পরিস্থিতি শান্ত হয়েছে, কিন্তু মনের আতঙ্ক পুরোপুরি দূর হয়নি। এখনো রাস্তায় নামতে গা ছমছম করে। হঠাৎ পেছন থেকে কেউ ডাক দিলে ভয়ে আঁতকে উঠি। জানি ধীরে ধীরে সবকিছুই স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কিন্তু যাদের জীবন গেছে, তাদের জীবন আর ফিরে আসবে না। আপনজন হারানোর ক্ষত সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হবে। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের চলা আন্দোলনের মধ্যে ১৭ থেকে ২১ জুলাই সহিংস হয়ে উঠে নারায়ণগঞ্জ । এ সময়ের মধ্যে একদল দুষ্কৃতকারী সরকারি স্থাপনায় নজিরবিহীন তাণ্ডব চালিয়েছে। রক্ষা পায়নি ফায়ার সার্ভিসও। নারায়ণগঞ্জে ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে হামলা চালানো হয়েছে। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি। পিটিয়ে আহত করা হয়েছে ফায়ার ফাইটারদের। নারায়ণগঞ্জে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, সিটি করপোরেশনের নগর ভবনে চালানো হয়েছে তাণ্ডব। দৃষ্কৃতকারীদের তাণ্ডবে নারায়ণগঞ্জের সর্বত্র জনমনে সৃষ্টি হয় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। পরিস্থিতি সামাল দিতে এক পর্যায়ে কারফিউ জারি করে সরকার। সেই সঙ্গে নামানো হয় সেনাবাহিনী। এতে অনেকটাই ঘরবন্দি হয়ে পড়ে মানুষ। প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে খুব একটা বের হননি। তবে সেনাবাহিনী রাস্তায় নামার পর অল্প সময়ের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে। সে সাথে পতন হয় স্বেরাশাসকের গত ১৬ বছরের নির্যাতনের খড়গ। তবে, কখননো ভূলে যাওয়া সম্ভব নয় বিদায়ী বছরের দুর্বিসহ স্মৃতিগুলো।

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট