
যুগের নারায়ণগঞ্জ:
দীর্ঘদিন ধরেই নানা আলোচনা–সমালোচনা, বিতর্ক ও গুঞ্জনের কেন্দ্রে থাকা মাসুদুজ্জামান ওরফে ‘মডেল মাসুদ’কে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ঘোষণা করার পর ক্ষোভে ফুঁসছে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা।
তাঁরা অভিযোগ করেছেন—দলে তাঁর কোনো সক্রিয় রাজনৈতিক ভূমিকা নেই, বরং অতীতে তিনি আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ মহলে অবস্থান করতেন এবং আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্ক ব্যবহার করে ব্যবসায়িক সুবিধা নিয়েছেন।
আজ ১৫ নভেম্বর শনিবার রাতে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতারা আনুষ্ঠানিকভাবে মাসুদুজ্জামানের মনোনয়ন বাতিলের দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন—সাবেক এমপি আবুল কালাম, মহানগর বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু, শিল্পপতি আবু জাফর আহমেদ বাবুল, আবুল কাউসার আশা প্রমুখ।
মনোনয়ন নিয়ে তীব্র আপত্তি জানালেন স্থানীয় নেতা–কর্মীরা
মহানগর আহবায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, “নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে যে ব্যক্তিকে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে, তিনি আমাদের রাজনীতির অঙ্গনে কখনও ছিলেন না। তৃণমূল নেতাকর্মীরা তাঁকে চেনেন না। নামে প্রার্থী ঘোষণা হওয়ার পর সাধারণ কর্মীরা হতাশ, ক্ষুব্ধ। সবাই বলছেন—রাজপথে যারা ছিলেন, যারা আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদের কাউকে প্রার্থী করা উচিত।”
বিএনপি নেতাদের বক্তব্যে উঠে আসে—টাকার প্রভাব ও তদবিরের মাধ্যমে মাসুদুজ্জামান দলে প্রবেশ করেছেন এবং মনোনয়ন নিশ্চিত করেছেন। তাদের দাবি, গত২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর তিনি হঠাৎ করে নিজেকে বিএনপি নেতার পরিচয়ে তুলে ধরতে শুরু করেন এবং স্থানীয় কিছু নেতাকে অর্থের মাধ্যমে প্রভাবিত করে রাজনীতিতে অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
আওয়ামী লীগের দোসর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত মোঃ হাতেম ও এই মডেল মাসুদচক্র মিলিত হয়ে পলাতক সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের একটি লিখিত পত্রের বরাত দিয়ে বিকেএমইএ ও নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স দখল দখল করেন এই গুণধর ব্যবসায়ী নেতা। এরপর থেকে তারা পুরো নারায়ণগঞ্জ দখল ও নিয়ন্ত্রণ করতে পায়তারা যাচ্ছে
ব্যবসায়িক বিতর্কও আলোচনায়
সংবাদ সম্মেলনে কয়েকজন নেতা দাবি করেন, আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে প্রভাবশালী মন্ত্রী-ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ব্যবহার করে তিনি ব্যবসায়িকভাবে লাভবান হন। এমনকি সিটি ব্যাংকের মালিকানা পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগও স্থানীয় পর্যায়ে প্রচলিত রয়েছে। এসব অভিযোগের কারণে তাঁর প্রার্থীতা নিয়ে আরও শঙ্কা ও বিতর্ক তৈরি হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তাঁরা।
‘স্থানীয় কাউকে মনোনয়ন দিতে হবে’—বিএনপি নেতাদের দাবি
বিএনপি নেতারা আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন-সংগ্রাম, মিছিলে-সমাবেশে যারা সক্রিয় ছিলেন, তাদের মধ্য থেকেই কোনো একজনকে মনোনয়ন দেওয়া উচিত।
“দলের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ, মাঠে থাকা ত্যাগী নেতাকর্মীদের প্রতি এটা অবিচার,”—বলেন সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু।
দলের ভেতর অস্থিরতা বাড়ছে
মাসুদুজ্জামানের মনোনয়নকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে স্পষ্ট ভাঙন ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তৃণমূল নেতাদের বড় অংশ তাঁকে গ্রহণ করতে নারাজ, এমনকি তাঁর পক্ষে প্রচারেও দূরত্ব বজায় রাখছেন অনেকে।
স্থানীয় নেতারা কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “এই বিতর্কিত মনোনয়ন অবিলম্বে বাতিল করে নারায়ণগঞ্জবাসির আস্থা অর্জন করতে সক্ষম এমন যোগ্য ও পরীক্ষিত কাউকে প্রার্থী করতে হবে।”