
যুগের নারায়ণগঞ্জ:
নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজে উদ্যোক্তা সম্মেলন কর্মসূচিতে যোগ দিতে গিয়ে বিকেএমইএ’র (বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন) সভাপতি ও বিতর্কিত ব্যবসায়ী নেতা মোহাম্মদ হাতেমকে কলেজ ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেয় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
ঘটনাটি ঘটে সোমবার (১১ নভেম্বর) দুপুরে।
এসময় শিক্ষার্থীরা ‘আওয়ামী লীগের দালাল’, ‘ওসমানীয় দালাল’ ইত্যাদি শ্লোগান দিতে থাকে। পরে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে মোহাম্মদ হাতেম দ্রুত তোলারাম কলেজের ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন।
ঘটনার ভিডিও মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
ভিডিওটিতে দেখা যায়, ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা হাতেমকে ঘিরে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন এবং তাঁকে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগের অনুরোধ জানাচ্ছেন।
ছাত্রদল নেতার অভিযোগ: ‘চাপ ও হুমকি দেয়া হচ্ছে’
তোলারাম কলেজ শাখা ছাত্রদলের সভাপতি মনির হোসেন জিয়া মঙ্গলবার ১১ ই বিকেলে গণমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করে বলেন, ঘটনার পর থেকে তিনি বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোনকল ও হুমকি পাচ্ছেন।
তিনি (জিয়া) বলেন, “ঘটনার পর থেকে আমাকে নানা মাধ্যমে হুমকি দেয়া হচ্ছে। এরা অর্থের প্রভাব খাটিয়ে এখনও নারায়ণগঞ্জকে নিয়ন্ত্রণ করছে। জুলাই আন্দোলনে যারা ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগী ছিল, সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং আগামীতেও করবে।”
তবে ১২ নভেম্বর বুধবার সন্ধ্যার পর মনির হোসেন জিয়া নিজের ফেসবুক পেইজে মোহাম্মদ হাতেমের বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করে একটি স্ট্যাটাস দেন। এরপরই সামাজিক মাধ্যমে নতুন করে শুরু হয় আলোচনা ও বিতর্ক।
পূর্ববর্তী বিতর্ক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
হাতেমকে ঘিরে বিতর্ক নতুন নয়। অনেক পুরানো বিতর্ক নিয়ে খেলায় পারদর্শী হাতেম। এর আগে ৪ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমীর এক অনুষ্ঠানে এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব আবদুল্লাহ আল আমিন মঞ্চে প্রকাশ্যে তার সমালোচনা করেন।
তিনি বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় শেখ হাসিনার মিটিংয়ে উপস্থিত থেকে ছাত্র আন্দোলন দমন করার অনুরোধ করেছিলেন তিনি। এমন একজন ব্যক্তিকে আমরা সামাজিক বা শিক্ষাঙ্গনের মঞ্চে জায়গা দিতে পারি না।”
জুলাই আন্দোলন চলাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ব্যবসায়ীদের বৈঠকে মোহাম্মদ হাতেম বলেছিলেন— “যে তাণ্ডব আমরা গত কয়েক দিনে দেখেছি, আমরা আশা করব, সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাসহ সংশ্লিষ্টরা উদযাঘটন করবে এবং আইনের আওতায় আনবে। ব্যবসায়ী সমাজ আপনার পাশে ছিল, থাকবে।”
এই বক্তব্যই পরবর্তীতে হাতেমের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঢেউ তোলে, বিশেষত বিরোধী রাজনৈতিক অঙ্গনে।
‘আন্দোলনের শহীদদের অপমান’ বলছে ছাত্রদল
তোলারাম কলেজ শাখা ছাত্রদল নেতা মনির হোসেন জিয়া আরও বলেন, “আমাদের কলেজের চারজন ছাত্র জুলাই আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন। সেই রক্তের ওপর পা দিয়ে শেখ হাসিনার অর্থদাতা একজন ব্যক্তি আমাদের ক্যাম্পাসে এসে অনুষ্ঠান করবে— এটা আমরা মেনে নিতে পারিনি। তাই আমরা তাকে কলেজ থেকে বের হতে বলেছি, যা শান্তিপূর্ণভাবেই সম্পন্ন হয়েছে।”
নতুন করে বিতর্কের মুখে হাতেম
ঘটনার পর ব্যবসায়ী মহলে এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে বিষয়টি নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা।
কেউ কেউ ছাত্রদের প্রতিবাদকে ন্যায্য বলে মন্তব্য করেছেন, আবার কেউ বলছেন, ব্যক্তিগত ক্ষোভের কারণে ব্যবসায়ী নেতাকে অপদস্থ করা হয়েছে।
সবমিলিয়ে, বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম আবারও এক নতুন বিতর্কের কেন্দ্রে এসে পড়েছেন, যা তার সামাজিক ও ব্যবসায়িক অবস্থানকে আরও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।