
যুগের নারায়ণগঞ্জ:
নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী মহলে পরিচিত মুখ মাসুদুজ্জামান ওরফে ‘মডেল মাসুদ’। স্থানীয়ভাবে ‘মডেল গ্রুপ’-এর কর্ণধার হিসেবেই তার পরিচিতি বেশি। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত এই মাসুদ এবার বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন—এ খবর প্রকাশের পর থেকেই জেলাজুড়ে শুরু হয়েছে তীব্র আলোচনা-সমালোচনা।
আওয়ামী লীগের শাসনামূলক পুরোটা সময় মাসুদুজ্জামান ওরফে মডেল মাসুদকে দেখা গেছে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী এমপি ও শীর্ষ কর্তাদের সাথে সখ্যতার চিত্র।
নিজেকে বিএনপি’র নেতা দাবি করলেও মাসুদুজ্জামান ওরফে মডেল মাসুদ বিএনপির কোনো শীর্ষ নেতাদের সাথে তোলা কোন ছবি বা সভা সমাবেশের চিত্র এখনো প্রকাশ পায় নাই। তবে মডেল মাসুদের সাথে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী এমপিদের সাথে অসংখ্য ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হচ্ছে। আর এই কারণেই মডেল মাসুদের বিরুদ্ধে ধিক্কার উঠেছে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মাঝে।
তবে এক্ষেত্রে কিছু ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে, এই মাসুদুজ্জামান ওরফে মডেল মাসুদের সাথে বিএনপি ঘরানার কিছু বেতনভুক্ত কর্মচারী নিয়মিত মডেল মাসুদের পাশে থেকে সভা সমাবেশ মিছিল চালিয়ে যাচ্ছে।
বিএনপির ঘোষণা অনুযায়ী, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ–৫ (শহর ও বন্দর) আসনে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন মাসুদুজ্জামান। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মাত্র এক বছরের মধ্যে তিনি বিএনপির শীর্ষ পর্যায় থেকে ‘গ্রীন সিগন্যাল’ পেয়ে মনোনয়ন নিশ্চিত করেছেন।
তবে এই মনোনয়নকে ঘিরে ক্ষোভে ফুঁসছে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা। তাদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ ও সুবিধাভোগী একজন ব্যবসায়ীকে মনোনয়ন দিয়ে দলীয় আদর্শের সঙ্গে আপস করা হয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন—“বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জানেন তো, আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ মাসুদই এখন বিএনপির প্রার্থী ?”
আওয়ামী ঘনিষ্ঠতা ও ব্যবসায়িক প্রভাব
ব্যবসায়ী মহলের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় থেকেই মাসুদুজ্জামান ক্ষমতাসীনদের ঘনিষ্ঠ থেকে ব্যবসা-বাণিজ্যে সম্প্রসারণ ঘটান। তিনি সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী তৌফিকা করিমের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে তুলে সিটিজেন ব্যাংকের পরিচালক পদে আসীন হন। পরে তৌফিকা ও আনিসুল হকের অবর্তমানে ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নেন এবং বর্তমানে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।
এছাড়া নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গনে তিনি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভি, ওসমান পরিবার ও সাবেক মন্ত্রী গাজীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছিলেন বলে স্থানীয়রা জানান। অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগের শাসনামলে ‘মডেল গ্রুপ’-এর নামে দখলবাজি ও প্রভাব বিস্তারের একাধিক ঘটনা ঘটেছে।
বিতর্কিত মনোনয়ন
দলের ভেতর ও বাইরে উভয় মহলেই প্রশ্ন উঠেছে—দীর্ঘদিন আওয়ামী ঘনিষ্ঠ থাকা এই ব্যবসায়ী কীভাবে বিএনপির প্রার্থী হলেন? কেউ কেউ দাবি করছেন, অর্থ ও প্রভাবের বিনিময়ে এই মনোনয়ন এসেছে। গুলশানে একটি ক্যাফে দখল করে হোটেল নির্মাণসহ মাসুদুজ্জামানের বিরুদ্ধে আরও একাধিক চাঁদাবাজি ও দখলের অভিযোগও রয়েছে।
বিএনপির স্থানীয় একজন প্রবীণ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “দীর্ঘদিন যারা দলের কঠিন সময়ে পাশে ছিলেন, তাদের বাদ দিয়ে এমন বিতর্কিত ব্যক্তিকে প্রার্থী করা হতাশাজনক। এতে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মনোবল ভেঙে যাচ্ছে।”
তৃণমূলের ক্ষোভ, কেন্দ্রের নীরবতা
বিএনপির কেন্দ্রীয় দফতরে যোগাযোগ করা হলে কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি। তবে দলীয় সূত্র জানিয়েছে, মাসুদুজ্জামান সম্প্রতি গুলশান কার্যালয়ে সক্রিয়ভাবে লবিং করেছেন এবং “ব্যবসায়ী প্রোফাইল” ও “অর্থনৈতিক সক্ষমতা” বিবেচনায় মনোনয়ন পেয়েছেন।
তবে তৃণমূলের অনেকেই মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত বিএনপির জন্য ব্যুমেরাং হতে পারে।
“যিনি আওয়ামী লীগের আমলে সুবিধা নিয়েছেন, তিনিই এখন বিএনপির পতাকা হাতে—এটা জনগণ কীভাবে নেবে?”—মন্তব্য এক স্থানীয় যুবদল নেতার।
নারায়ণগঞ্জে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে একটাই প্রশ্ন—লীগের ঘনিষ্ঠ ‘মডেল মাসুদ’ কি ধানের শীষের ভরসা হতে পারবেন ?