যুগের নারায়ণগঞ্জ:
যুগের নারায়ণগঞ্জ:
যানজটহীন আলোঝলমলে আধুনিক প্রশস্ত সড়ক। আছে বালু নদের মতো জলাধার। চাইলেই আকাশ দেখা যায়, জলাধার থেকে ভেসে আসা হাওয়ায় গলা ছেড়ে গানও ধরা যায়। ব্যস্ত নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য এমন স্থান মাত্রই বন্ধু-প্রিয়জনদের নিয়ে আড্ডা-গল্পে মেতে ওঠার উপলক্ষ। আর সঙ্গে যদি থাকে হাঁসের মাংসের মতো লোভনীয় খাবার, তাহলে তো কথাই নেই!
বলা হচ্ছে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার নীলা মার্কেটের কথা। প্রতিদিন বিকেল থেকে হাঁসের মাংস-চিতই পিঠা, সামুদ্রিক মাছ, গরম মিষ্টির মতো হরেক রকম খাবারের মেলা বসে এখানে।
নীলা মার্কেটে মুখরোচক হরেক পদের খাবার থাকলেও দূরদূরান্ত থেকে শুধু মাটির চুলায় লাকড়ি দিয়ে রান্না করা হাঁসের মাংস খেতেই অনেকে আসেন এখানে। খাবারের পাশাপাশি নদের পাড় কিংবা খোলা আকাশের নিচে জমে গল্প-আড্ডা। সেখানে আসা লোকজন নদের তীরের পিঠাঘরগুলোতে বসে আশ মিটিয়ে উপভোগ করেন দেশি হাঁসের মাংস আর নানান পদের পিঠা।
এ ছাড়া দোকানগুলোতে গরু, খাসি ও মুরগির মাংসও পাওয়া যায়। মাংস দিয়ে খাওয়ার জন্য চিতই পিঠার পাশাপাশি পাওয়া যায় চালের গুঁড়ার চাপটি ও রুমালি রুটি। এ ছাড়া বালিশ, চমচম, রসগোল্লা, ছানা, সন্দেশ, লেংচা, রসমালাইয়ের মতো হরেক পদের গরম মিষ্টি, সামুদ্রিক মাছ, তান্দুরি ও স্পেশাল মালাই চা, ফুচকা, চটপটি, পানিপুরি, তাজা ফলের জুস পাওয়া যায়। নীলা মার্কেটের কিছু দোকানে হরেক পদের ভর্তা ও ভাতের ব্যবস্থাও রয়েছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, শুক্র, শনিবারসহ বন্ধের দিনগুলোতে উপচে পড়া ভিড় জমে এসব খাবার দোকানে। বিকেল থেকে শুরু করে রাত পেরিয়ে ভোর পর্যন্ত চলে খাবারের এই আয়োজন। খাবার ছাড়াও স্থানটিতে আছে শিশুপার্ক ও শিশুদের খেলনার দোকান। বালু নদে রয়েছে নৌভ্রমণের ব্যবস্থা।
খাবারের দরদাম
হাঁসসহ বিভিন্ন পদের মাংস প্রতি প্লেট ২৫০-৩০০ টাকায় বিক্রি হয়। রুমালি রুটি, চিতই পিঠা বিক্রি হয় প্রতিটি ২০ টাকা দরে আর চাপটির মূল্য ১০ টাকা। তান্দুরি চা ৫০ ও স্পেশাল মালাই চা ৭০ টাকা করে বিক্রি হয়। আকারভেদে সামুদ্রিক ও দেশি কাঁকড়া প্রতিটি ৩০০-৪০০, এক কেজি ওজনের টুনা মাছ প্রতিটি ৮০০-৯০০, কোরাল প্রতিটি ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০, স্কুইড প্রতিটি ১৫০-৩৫০ ও অক্টোপাস ৩৫০-৮০০ টাকায় বিক্রি হয়। চটপটি বিক্রি হয় প্রতি প্লেট ৪০-৬০ টাকায়।
শুরু থেকেই স্থানটিতে খাবার খেতে আসেন রূপগঞ্জের ব্যবসায়ী রাসেল মাহমুদ। তিনি বলেন, ২০১৩-১৪ সালের দিকে নীলা মার্কেট খাবারের জন্য জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে হওয়ার পর ক্রমেই স্থানটির জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। প্রতিদিনই রাতভর দূরদূরান্ত থেকে লোকজন দল বেঁধে এখানে আসে। হাওর অঞ্চল থেকে সংগ্রহ করা দেশি হাঁস, আতপ চালের রুটি এখানকার বিখ্যাত খাবার। এসব খাবার মাটির চুলায় রান্না হয় বলে খাবারের স্বাদ বেড়ে যায়।
নীলা মার্কেটের বিখ্যাত বীথির মা পিঠাঘরের মালিক আলমগীর হোসেন জানান, শুক্রবার ও ছুটির দিনে তাঁর দোকানের সামনে লাইন লেগে থাকে।
আলমগীর জানান, নিজেদের লেকের মাধ্যমে হাওর থেকে হাঁস সংগ্রহ করেন তাঁরা। প্রতিদিন ২০-২৫টি হাঁসের মাংস বিক্রি করেন তিনি। সারা বছর হাঁস বিক্রি হলেও শীতকালে হাঁস বিক্রি বেড়ে যায়। তখন ছুটির দিনগুলোতে ৪০-৫০টি পর্যন্ত হাঁস বিক্রি হয়।