যুগের নারায়ণগঞ্জ:
নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপি সমর্থকদের দুই পক্ষের দ্বন্দ্বে জোড়া খুনের ঘটনায় দু’টি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা দু’টিতে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক দুই কাউন্সিলরকেও আসামি করা হয়েছে।
গত রবিবার দিনগত রাতে বন্দর থানায় নিহতদের পরিবারের সদস্যরা মামলা দু’টি দায়ের করেন জানিয়ে এ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত আলী বলেন, এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দু’টি মামলাতেই চারজন করে গ্রেপ্তার হয়েছেন।
ওসি জানান, দিনমজুর আব্দুল কুদ্দুস (৬০) হত্যাকাণ্ডে তার কন্যা রোকসানা বেগম বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন। এ মামলায় নারায়ণগঞ্জ সিটির ২১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর হান্নান সরকারসহ ১৩ জনকে এজাহারনামীয় এবং আরও ২০ থেকে ৩০ জনকে অজ্ঞাত আসামি কার হয়েছে।
অপর মামলাটি করেছেন খালেদ সাইফুল্লাহ। তার ভাই বন্দর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মেহেদী হাসান (৪২) হত্যার অভিযোগে মামলায় ২৯ জনের নাম উল্লেখ করার পাশাপাশি ৩০ থেকে ৪০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় ৪ নম্বর আসামি নারায়ণগঞ্জ সিটির ২১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শাহীন মিয়া।
দু’টি মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, বন্দর রেললাইন, হাফেজীবাগ ও সালেহনগর এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে সাবেক কাউন্সিলর হান্নান সরকার, বাবু শিকদার গ্রুপ ও সাবেক কাউন্সিলর আবুল কাউসার আশা গ্রুপের জাফর-রনিদের দীর্ঘদিন যাবৎ দ্বন্দ্ব রয়েছে। এ দ্বন্দ্বের জেরে গত শুক্রবার বন্দর রেললাইন এলাকায় রাস্তার উপর উভয়পক্ষের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় পরদিন থানায় একটি মামলাও হয়।
এই ঘটনার জেরে শনিবার রাতে মেহেদী ও কুদ্দুস খুন হন বলে উভয় মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
দু’টি মামলাতেই সাবেক দুই কাউন্সিলরকে হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা হিসেবে দেখানো হয়েছে। মামলা দু’টিতে সাবেক আরেক কাউন্সিলর আবুল কাউসার আশার গ্রুপের সঙ্গে দ্বন্দ্বে হত্যাকাণ্ড দু’টি সংঘটিত হয়েছে বলে উল্লেখ থাকলে একটিরও আসামির তালিকায় আশার নাম নেই। তবে তার গ্রুপের রনি ও জাফরকে মেহেদী হত্যা মামলায় আসামি হয়েছেন। অন্যদিকে বাবু শিকদার, শ্যামল ও বাবু ওরফে জুয়াড়ি বাবু বৃদ্ধ কুদ্দুস হত্যা মামলার আসামির তালিকায়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এক সময় সখ্যতা থাকলেও গত কয়েক মাসে বন্দরে আধিপত্য বিস্তার, মাদক বিক্রির নিয়ন্ত্রণ ও ইজিবাইক স্ট্যান্ডে চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে মেহেদী, বাবু সিকদার ও শ্যামল গ্রুপের সঙ্গে রনি ও জাফর গ্রুপের দ্বন্দ্ব চলছে। উভয় গ্রুপের সঙ্গে সাবেক দুই কাউন্সিলর আবুল কাউসার আশা ও হান্নান সরকারের সখ্যতা রয়েছে। গত শুক্রবারও উভয়পক্ষের মারামারি ৮ জন আহত হয়। এরই জেরে শনিবার দফায় দফায় উভয়পক্ষ দেশীয় ধারালো অস্ত্রশস্ত্র হাতে এলাকায় মহড়া দেয়।
সন্ধ্যায় প্রতিপক্ষের লোকজনের ছুরিকাঘাতে খুন হন হাফেজীবাগ এলাকার প্রয়াত সাদেক আলীর ছেলে আব্দুল কুদ্দুস। পেশায় দিনমজুর বৃদ্ধ কুদ্দুসের সঙ্গে সরাসরি দ্বন্দ্ব না থাকলেও তার ছেলে পারভেজ রনি-জাফর গ্রুপের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। পারভেজের সঙ্গে শত্রুতার জেরেই বাবা খুন হয়েছেন বলে দাবি কুদ্দুসের পরিবারের লোকজনের।
অন্যদিকে কুদ্দুস মারা যাওয়ার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে শাহী মসজিদ এলাকার প্রয়াত আব্দুল জলিল মুন্সির ছেলে মেহেদী হাসানকে সড়কে পেয়ে প্রতিপক্ষের লোকজন স্থানীয় সিরাজউদ্দোল্লা ক্লাবে নিয়ে গিয়ে মারধর করে হত্যা করে বলে জানান স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ।
বন্দর থানার ওসি লিয়াকত আলী বলেন, “দু’টি মামলায় দুইজন সাবেক কাউন্সিলরকেও আসামি করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সকলকে আইনের আওতায় আনা হবে।”