যুগের নারায়ণগঞ্জ:
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে রূপ নিলে পতন ঘটে শেখ হাসিনা সরকারের। সারা দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয়ে যাওয়ায় সাবেক মন্ত্রী, এমপিসহ আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী আত্মগোপনে চলে যান। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে গঠন করা হয় অন্তবর্তীকালীন সরকার। ছাত্র-জনতার এ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষপটে পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে। কিন্তু এ পরিবর্তনের আসার আগে বহু মানুষের রক্ত ঝরেছে। শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, গৃহবধূ, ভ্যান চালাক, সাংবাদিক, পুলিশ সহ অনেকেই প্রাণ হারিয়েছেন। সেই সাথে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ চালানো হয়েছে।
ছাত্র আন্দোলনে সহিংসতার ঘটনায় বহু শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন পেশাজীবীর মানুষ নিহত হয়েছেন। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন থানায় নিহতদের স্বজনরা শেখ হাসিনাসহ সাবেক মন্ত্রী, এমপি, জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করছেন।
নারায়ণগঞ্জে ছাত্র আন্দোলনের সময় নিহতদের স্বজনরা থানায় মামলা দায়ের করছেন। জেলার ৬টি থানায় এ পর্যন্ত ১৪ টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে ফতুল্লা থানায় ৩টি, আড়াইহাজার থানায় ২টি, রূপগঞ্জ থানায় ১টি, সদর থানায় ১টি, সোনারগাঁ থানায় ২টি, সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় ৪টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় মোট আসামির সংখ্যা ১ হাজার ৭৪৮ জন, অজ্ঞাতনামা আসামি প্রায় ১ হাজার ৩৯০ জন।
নিহত শফিক মিয়া, সুমাইয়া আক্তার, পারভেজ হোসেন, মো. বাবুল, ফয়সাল, শফিকুল ইসলাম শফিক, রোমান মিয়া, আবুল হোসেন, মনির, জনি, আবুল হাসান স্বজন, সোলায়মান, আশিক এর স্বজনরা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন।
এতে প্রধান আসামিদের তালিকায় আছেন আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ নারায়ণগঞ্জে সাবেক পাঁচ এমপি-একেএম শামীম ওসমান, গেলাম দস্তগীর গাজী, নজরুল ইসলাম বাবু, একেএম সেলিম ওসমান, আবদুল্লাহ আল কায়সার।
আসামিদের তালিকায় আরও আছেন এমপি পুত্র অয়ন ওসমান, এমপি পুত্র গোলাম মর্তুজা পাপ্পা, সাবেক এমপি নাসিম ওসমানের পুত্র আজমেরী ওসমান, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ বাদল, মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজাম, মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন ভূইয়া সাজনু, মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জি এম আরাফাতসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের বহু নেতাকর্মী।
এদিকে, আড়াইহাজার থানায় হামলা চালিয়ে লুটপাটের ঘটনায় অজ্ঞাত প্রায় ৩০ হাজার জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। এতে জানানো হয়, থানায় হামলায় যানবাহন ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ এবং আসবাবপত্র ও অস্ত্র-গোলাবারুদ লুট করা হয় যার আনুমানিক মূল্য ২৪ কোটি ২০ লক্ষ টাকা। এনিয়ে মোট মামলা সংখ্যা ১৫টি, নামীয় আসামি ১ হাজার ৭৪৮ জন, অজ্ঞাতনামা আসামি প্রায় ৩১ হাজার ৩৯০ জন।
প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জুলাইয়ের ১৮ তারিখ হতে আগস্টের ৬ তারিখ পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জে বেম কয়েকবার সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। যার দরুণ সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান-স্থাপনা, থানায় বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সেই সাথে বহু মানুষ আহত হয়েছেন এবং প্রাণহানীর ঘটনা ঘটেছে।