
যুগের নারায়ণগঞ্জ:
বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত এবং হিন্দু ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে পবিত্র তম স্থান হচ্ছে নারায়ণগঞ্জের মাসদাইর পৌর শ্নশান। প্রতি বছর শ্নশানকালি পূজা, দীপাবলি, ভূতনাতসহ বিভিন্ন পূজা অর্চনা হয়ে থাকে। এ পূজা অর্চনাকে ঘিরে হিন্দু ধর্মালম্বী লাখো ধর্মপ্রান পূর্ণার্থীদের সমাগম হয়ে থাকে এ শ্নশানে। অথচ, হিন্দু ধর্মালম্বী মানুষের এ পবিত্র স্থানকে ঘিরে রেখেছে একদল লেবাসধারী প্রতারক চক্র। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পরিচয়ে উক্ত শ্নশানের কমিটিতে নিজেদের অধিষ্টিত করে মেতে উঠেছে ব্যাপক লুটপাট এবং দুর্নীতিতে। বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির নেতৃত্বের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির মাধ্যমে সুবিধা গ্রহণের একাধিক অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের স্বার্থ সংরক্ষণ না করে সংগঠনের কতিপয় নেতারা নিজেদের স্বার্থ হাসিল করছেন বলেও অভিযোগ করা হয়। এ কারণে অনতিবিলম্বে বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি গঠনের আহ্বান জানানো হয়েছে।
এছাড়া, স্বেরাচারী সরকারের আমলে কখনো আইভী আবার কখনো বা শামীম ওসমানের ঘনিষ্টজন পরিচয়ে ব্যাপক প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে
চালিয়েছেন লুটবতরাজ। সরকারী অনুদান, ভক্তদের দানকৃত অর্থ, প্রনামি, মন্দিরের বরাদ্দকৃত কাঁচামাল, শ্নশান মার্কটের চুক্তির অর্থ, শ্নশানের বিক্রি করা কবরের অর্থসহ বিভিন্ন সেক্টর থেকে পাওয়া অনুদানের কোটি কোটি টাকা লুটপাট করারও অভিযোগ উঠেছে মাসদাইর শ্নশান কমিটির বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির বিরুদ্ধে। এছাড়াও, দীর্ঘদীন ধরেই মাসদাইর শ্নশানের ভিতরেই চলে আসছে মাদক সেবন এবং বিক্রির নিরাপদ স্থান! আর এ ধরনের অপকর্মের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে মাসদাইর পৌর শ্নশান কমিটির আহ্বায়ক নাসিকের সাবেক কাউন্সিলর অসিত বরন বিশ্বাস, সদস্য শংকর সাহা এবং সুজন সাহার বিরুদ্ধে।
সনাতন ধর্মাবলম্বী লোকজনদের সাথে কথা বললে তারা অভিযোগ করে বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের স্বার্থ সংরক্ষণের লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে শ্নশান কমিটি গঠন করা হয়েছিল। শ্নশান কমিটিতে এর আগে যারাই নেতৃত্ব দিয়েছেন তারা নিঃস্বার্থভাবেই এই কাজটি করে গেছেন সততার সাথে। কিন্তু, বর্তমান কমিটির নেতৃবৃন্দ বিশেষ করে শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতা সংগঠনটিকে নিজেদের ব্যক্তি স্বার্থে ব্যবহার করছেন। তারা সংগঠনের নামে অর্থ তুলে তা আত্মসাৎ করছেন। বিশেষ করে পুজোর সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে যে বরাদ্দ দেওয়া হয় সেই বরাদ্দের চাল বিক্রি করে সেখান থেকেও টাকা তছরুপ করেন দু’একজন নেতা।
ধর্মপ্রান মানুষদের অভিযোগ, সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষেরা যখন কোনো বিপদে পড়েন তখন এই পূজা পরিষদের নেতারা কোনো ভূমিকা পালন করেন না। তারা নিজেদের স্বার্থ নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে হিন্দুদেরকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে কেউ কেউ নিজেরা লাভবান হচ্ছেন। এই কমিটি স্বেচ্ছাচারী ও দুর্বৃত্তায়নের ঘেরাটোপে আটকে পড়েছে। মাসদাইর মহাশ্মশান কিংবা শ্নশানের মন্দিরের কোনো উন্নতি হয়নি। এসব ব্যাপারেও নেতারা নীরব।
সূত্রমতে, নারায়ণগঞ্জ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের রাজনীতির সাথে জড়িত অসিত বরন বিশ্বাস। ছিলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৫ নং ওয়ার্ড কাউসন্সিলর এবং নাসিকের সাবেক মেয়র আইভীর ঘনিষ্ঠজন। মাসদাইর শ্নশানের সাবেক সভাপতি দিরন্জন সাহা সাধারন সম্পাদক দীলিপ সাহা মৃত্যুবরন করার পর উক্ত শ্নশানের ১১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। নাসিকের সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীর ঘনিষ্টজন হওয়ার সুবাদে অসিত বরন বিশ্বাসকে আহ্বায়কসহ তারই সহযোগী শংকর সাহা এবং সুজন সাহার নেতৃত্বে ১১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠনের পর থেকেই লুটপাটে মেতে উঠেন তারা। দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের অপকর্ম চলে আসলেও রহস্যজনক কারনে নীরব রয়েছে দায়িত্বশীল কতৃপক্ষ।
মূলত, স্বেরাচারী সরকারের আমলে মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী এবং সাবেক সাংসদ শামীম ওসমানের প্রভাব খাটিয়েই তারা মাসদাইর পৌর শ্নশান কমিটি নিজেদের আয়ত্তে নিয়ে আসেন বাসদ নেতা অসিত বরন বিশ্বাস এবং তার সহচর শংকর সাহা এবং সুজন সাহা। তবে, তাদের বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন মাসদাইর পৌর শ্নশান কমিটির আহ্বায়ক অসিত বরন বিশ্বাস।
তিনি বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই সব কিছু স্বচ্ছতার সাথেই পরিচালিত হয়ে আসছে। তবে কিছু যদি হয়েই থাকে পূর্বের কমিটির সময়ে হয়ে থাকতে পারে। আর মাসদাইর শ্নশানের ভিতরে মাদকের অভায়রান্যের পরিনত হওয়ার বিষয়টি তিনি স্বীকার করে বলেন, একাধিকবার মাদক ব্যবসায়ী কিংবা সেবনকারীদের বিষয়ে তারা শক্ত অবস্থানে যাওয়ার পরও বন্ধ হচ্ছে না শ্নশানের ভিতরে মাদক ব্যবসা। শ্নশানের ভিতরে মাদক জিরো টলারেন্সে আনার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।
মাসদাইর পৌর শ্নশানের আহ্বায়ক কমিটি কবে নাগাদ পূনাঙ্গ কমিটিতে রূপ নিবে কিংবা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে অসিত বরন বিশ্বাস বলেন, শ্নশান কমিটি কিভাবে গঠন করা হবে আর কবে নাগাদ হবে তা নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের উপরই নির্ভর করে।
মাসদাইর পৌর শ্নশানের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সুজন সাহা তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, একটি মহল তাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে এবং মিথ্যা প্রচারনা চালাচ্ছেন।