যুগের নারায়ণগঞ্জ:
শারদীয় দুর্গোৎসবের আজ মহাঅষ্টমী। এদিন সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো ‘কুমারী পূজা’। কুমারী বালিকার মধ্যে বিশুদ্ধ নারীর রূপ কল্পনা করে তাকে দেবীজ্ঞানে পূজা করেন ভক্তরা। নারায়ণগঞ্জের রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠে প্রতিবছরই আড়ম্বরপূর্ণ ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে কুমারী পূজা উদযাপন করেন হাজারো সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
মূলত দুর্গাপূজার অষ্টমী তিথিতে মহামায়ার ষষ্টক অর্থাৎ ৬ বছরের কুমারী রূপ ‘উমা’র পূজা করা হয়। তবে এই দিন মন্দিরে ১ থেকে ১৬ বছরের যে কোনো হিন্দু কুমারী কন্যাকে মাতৃভাবে জীবন্ত প্রতিমা কল্পনা করে পূজা করা হয়। আর এই পূজিত কুমারী কন্যারই নামকরণ করা হয় ‘উমা’। ভক্তদের মতে, এটি একাধারে ঈশ্বরের উপাসনা, মানববন্দনা আর নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা। মূলত নারীর সম্মান, মানুষের সম্মান আর ঈশ্বর আরাধনাই কুমারী পূজার অন্তর্নিহিত শিক্ষা। আগামীকাল মহানবমী তিথিতে নবমীবিহিত পূজা শেষে মণ্ডপে মণ্ডপে দেবীর মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হবে। বৃহস্পতিবার দশমী তিথিতে দর্পণ বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হবে দুর্গোৎসব।
রামকৃষ্ণ মিশন সূত্রে জানা গেছে, এ বছর কুমারী পূজা হবে বেলা ১১টায় এবং শেষ হবে দুপুর ১টায়। এর আগে মহাষ্টমী পূজা আরম্ভ হবে সকাল ৬টা ১০ মিনিটে, পুষ্পাঞ্জলি হবে সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে এবং মধ্যাহ্ন প্রসাদ দুপুর ১২টায়। মহাঅষ্টমী উপলক্ষে সন্ধিপূজা হবে সন্ধ্যা ৬টা ১৩ মিনিটে এবং সমাপন হবে সন্ধ্যা ৭টা ১ মিনিটে।
হিন্দু শাস্ত্রমতে, কুমারী পূজা হলো দূর্গাপূজার একটা অঙ্গরূপ, মাটিমূর্তি দেবীদূর্গার একটা বাস্তব রূপ ৷কুমারী পূজা হলো তন্ত্রশাস্ত্রমতে অনধিক ষোল বছরের অরজঃস্বলা কুমারী মেয়ের পূজা ৷ বিশেষত দূর্গাপূজার অঙ্গরূপে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়, এছাড়া ও কালীপূজা, জগদ্ধাত্রী পূজা, এবং অন্নপূর্ণা পূজা উপলক্ষে এবং কামাখাদী শক্তি ক্ষেত্রে কুমারী পূজার প্রচলন রয়েছে ৷
বর্তমানে কুমারী পূজার প্রচলন কমে গেছে, বাংলাদেশে সূদূর অতীত থেকেই কুমারী পূজার প্রচলন ছিলো এবং তার প্রমাণ পাওয়া যায় কুমারী পূজার প্রয়োগ গ্রন্থের পুঁথি থেকে ৷ বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের মত বাংলাদেশের বহু জেলা শহরের রামকৃষ্ণ মিশনগুলোতে কুমারী পূজার প্রচলন বেশি দেখা যায় ৷ প্রতিবছর দূর্গাপূজার মহাষ্টমী পূজা দিবসে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়, তবে মতান্তরে নবমী পূজার দিনেও এ পূজা অনুষ্ঠিত হতে পারে ৷
শাস্ত্রমতে কুমারী পূজার উদ্বভ হয় কোলাসুর কে বধ করার মধ্য দিয়ে, গল্পে বর্ণিত রয়েছে কোলাসুর একসময় স্বর্গ-মত্যে অধিকার করায় বাকি বিপন্ন দেবগণ মহাকালীর শরণাপন্ন হয় ৷ সে সকল দেবগণের আবেদনে সাড়াদিয়ে দেবী পূনর্জন্মে কুমারী রূপে কোলাসুর কে বধ করেন ৷ এরপর থেকেই মর্ত্যে কুমারী পূজার প্রচলন শুরু হয় ৷
যোগিনীতন্য, কুলার্নবতন্য, দেবীপুরাণ, স্তোত্র, কবচ, সহস্রনাম, তন্যসার, প্রাতোষিনী, পুরোহিত দর্পণ ৷ এসকল প্রভৃতি ধর্মীয় গ্রন্থে কুমারী পূজার পদ্ধতি এবং মাহত্ম্য বিশদ ভাবে বর্ণিত হয়েছে ৷ বর্ণানানুসারে কুমারী পূজায় কোন জাতি, ধর্ম, বা বর্ণভেদ নাই ৷ দেবীজ্ঞানে যে-কোন কুমারীই পূজনীয়, এমনকি বেশ্যাকুল জাত কুমারীও দেবীর আসনে বসতে পারে ৷ তবে সাধারণত ব্রাহ্মণ কুমারী কন্যার পূজাই সর্বত্র প্রচলিত হয়ে থাকে ৷ এ ক্ষেত্রে এক থেকে ষোল বছর বয়সী যে-কোন কুমারী মেয়ের পূজা করা যায়, বয়সের ক্রমানুসারে পূজাকালে এই সকল কুমারীদের বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয় ৷