যুগের নারায়ণগঞ্জ:
নারায়ণগঞ্জের কাশিপুরে অমানবিক নির্যাতনের শিকার চার বছরের শিশু হোসেনকে তালাবদ্ধ ঘর থেকে তালা ভেঙে উদ্ধার করেছে পুলিশ। স্থানীয়দের সহায়তায় শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টার দিকে ফতুল্লা মডেল থানার কাশিপুর শান্তিনগর এলাকায় কদম আলী স্কুলের পাশের বাসা থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। তবে এ সময় শিশুটির বাবা সোহেল পালিয়ে যায়।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে বাবা সোহেল শিশুটিকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে আসছিলেন।
স্থানীয়রা জানান, সোহেল একজন মাদকাসক্ত বখাটে। প্রায় দুই-তিন বছর আগে শিশুটির বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়। প্রথমে মা শিশুটিকে নিয়ে গেলেও পরবর্তীতে সোহেল জোরপূর্বক তাকে নিজের কাছে নিয়ে আসে। এরপর থেকেই নির্যাতন শুরু হয়। সোহেল বাইরে গেলে শিশুটিকে তালাবদ্ধ করে রাখতেন এবং অনাহারে রাখতেন। কান্না করলে তাকে হাত-পা বেঁধে ঝুলিয়ে নির্যাতন করতেন। শিশুর শরীরে নির্যাতনের অসংখ্য চিহ্ন রয়েছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী শাওন বলেন, “দুই-তিন মাস আগে জানতে পারি সোহেল তার সন্তানকে সারাদিন তালাবদ্ধ ঘরে রেখে বাইরে থাকে। অনাহারে কাঁদলেও ঠিকমতো খাবার দিত না, মাঝে মাঝে শুধু জুস বা চিপস কিনে দিত। বেশিরভাগ সময়ই মারধর করত। কয়েকদিন আগে স্থানীয় এক মহিলা শিশুটির রুগ্ন অবস্থা দেখে কারণ জানতে চাইলে তাকেও সোহেল মারধর করে। এরপর বিষয়টি আমি ঢাকার একটি সামাজিক সংগঠন ‘অপরিচিতা’র সঙ্গে শেয়ার করি এবং তাদের পরামর্শে থানায় জানাই।”
ফতুল্লা মডেল থানার ওসি শরিফুল ইসলাম জানান, “স্থানীয়দের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারি। ঘটনার সত্যতা পেয়ে রাত ১০টার দিকে ঘরের তালা ভেঙে শিশুটিকে উদ্ধার করি। পরে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। রবিবার সকালে জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা শিশুটিকে হেফাজতে নেন।”
জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের শিশু সুরক্ষা সমাজকর্মী মোসাম্মৎ তাছলিমা আক্তার বলেন, “চিকিৎসা শেষে শিশুটিকে বয়স অনুযায়ী সরকারি ছোট মনি নিবাসে রাখা হবে। শিশুটি বর্তমানে গুরুতর অসুস্থ, মারাত্মক পুষ্টিহীনতায় ভুগছে এবং দীর্ঘদিনের নির্যাতনে রুগ্ন হয়ে পড়েছে। তার জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন।”
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাসলিমা নাসরিন জানান, “ঘটনার বিষয়ে জানার পর আমি ওসিকে ব্যবস্থা নিতে বলি। বর্তমানে শিশুটি সমাজসেবা অধিদপ্তরের হেফাজতে আছে এবং তার চিকিৎসাসহ সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।”