যুগের নারায়ণগঞ্জ:
নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক সানজিদুল আলম ওরফে সোহান। অসংখ্য গুম, খুন ও নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত ওসমানশিবিরের লোকজনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখা সানজিদ জুলাই অভ্যুত্থানের পরে বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতা বনে গেছেন। কয়েকমাসের মাথায় বিএনপির স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনে পদও বাগিয়ে নেন। ওসমানঘনিষ্ঠ এ নেতা অভ্যুত্থানের আগেও বন্দরে আধিপত্য বিস্তার করতো এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের পদে পেয়ে সে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সম্প্রতি বন্দরের একটি মসজিদের কমিটি গঠনেও হস্তক্ষেপ করেন সানজিদুল আলম। কমিটি গঠনে বাধা দিয়ে তিনি স্থানীয় এক তরুণকে মারধর করেছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় মো. আলী আসাদ নামে এক ভুক্তভোগী তরুণ ও ওই মসজিদের মোতাওয়াল্লী আবুল কালাম আজাদ বন্দর থানায় লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন।
বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তরিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, দুইটি অভিযোগ তদন্ত করছে পুলিশ। তদন্তে বিষয়টি প্রমাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তবে, স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, সানজিদ আলম মূলত ওসমানশিবিরের ঘনিষ্ঠজন ছিলেন। সেলিম ওসমানের কর্মসূচিতে তার উপস্থিতি ছিল সরব। বিভিন্ন নির্বাচনী কার্যক্রমে সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল তার অথচ গত বছরের আগস্টে অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে পল্টি নেন সানজিদ। যোগ দেন বিএনপিতে। যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাদের সাথে ঘনিষ্ঠতার সুযোগে স্বেচ্ছাসেবক দলের বন্দর শাখা কমিটিতেও পদ পেয়ে যান তিনি।
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের অধীন বন্দর থানা শাখা কমিটি অনুমোদন দেন মহানগর কমিটির আহ্বায়ক শাখাওয়াত ইসলাম রানা ও সদস্য সচিব মমিনুর রহমান বাবু। ৩১ সদস্যের এই আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক পদ পান সানজিদুল আলম।
স্থানীয়দের অভিযোগ, আগস্টের পর রাজনৈতিক পরিস্থিতি বেগতিক দেখে কয়েকদিন আত্মগোপনেও ছিলেন সানজিদ। স্বেচ্ছাসেবক দলে পদ পাওয়ার পর থেকে তিনি এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতে শুরু করেন। মসজিদ কমিটি গঠনেও হস্তক্ষেপ করা শুরু করেছেন তিনি।
বন্দর থানা সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে স্বল্পের চক বাইতুল নুর জামে মসজিদে নতুন কমিটি গঠনের লক্ষে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভাকালে সহিদুল ইসলাম ব্যাপারি (৫৫), সানজিদ আলম (৩২), সিয়াম (২১), নয়ন (৪৫), সোহান (১৯) এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৭-৮ জন ব্যক্তি প্রভাব খাটিয়ে জোরপূর্বক কমিটি ঘোষণা করার চেষ্টা করেন। এতে বাধা দিলে মো. আলী আসাদের ওপর হামলা চালানো হয়।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, অভিযুক্তরা আলী আসাদকে টেনে-হিঁচড়ে মসজিদ থেকে বের করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি ও চড়-থাপ্পড় মারেন। এতে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে নীলাফুলা জখম হয়। অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, সানজিদ আলম পেছন থেকে পিঠে আঘাত করে গুরুতর আহত করেন। হামলার সময় স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এলে অভিযুক্তরা উল্টো ভয়ভীতি প্রদর্শন করে এবং হুমকি দেয়, “বাড়াবাড়ি করলে ক্ষতি করা হবে।”