যুগের নারায়ণগঞ্জ:
বিশাল অর্থ ব্যয়, সংগঠনের ভেতরে প্রভাব বিস্তার এবং শেষ পর্যন্ত হঠাৎ প্রার্থিতা প্রত্যাহার—নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মাসুদুজ্জামান ওরফে ‘মডেল মাসুদ’-এর ভূমিকা এখন দলের ভেতরেই গুরুতর প্রশ্নের মুখে।
দলীয় একাধিক সূত্র ও স্থানীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ অনুযায়ী, ধানের শীষের টিকিট পেতে মাসুদুজ্জামান বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয় করেন। বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীকে অর্থের বিনিময়ে পাশে টেনে নেওয়া, প্রভাবশালী মহলের সঙ্গে দেনদরবার এবং সাংগঠনিক ভারসাম্য ভেঙে একপ্রকার ‘টিকিট ছিনিয়ে আনার’ অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। স্থানীয় নেতারা বলছেন, এই প্রক্রিয়াটি আদর্শভিত্তিক রাজনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং বিএনপির দীর্ঘদিনের ত্যাগী নেতাকর্মীদের অপমানজনক।
নিরাপত্তার শঙ্কা নাকি রাজনৈতিক দায় এড়ানোর কৌশল ?
মঙ্গলবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে নিরাপত্তার শঙ্কার কথা বলে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন মাসুদুজ্জামান মাসুদ। তিনি দাবি করেন, পরিবারের অনুরোধেই এই সিদ্ধান্ত।
কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ব্যাখ্যা অসম্পূর্ণ ও অসংগতিপূর্ণ। কারণ—
প্রার্থিতা ঘোষণার পর নিয়মিত কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ,
সরে দাঁড়ানোর কয়েক ঘণ্টা আগেও জনসমাবেশে উপস্থিতি,
হঠাৎ করে দলীয় প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যর্থতার অজুহাত,
সব মিলিয়ে বিষয়টি অনেকের কাছে দায় এড়ানোর রাজনৈতিক কৌশল হিসেবেই প্রতীয়মান হচ্ছে।
ওসমান হাদির ওপর হামলা : প্রেক্ষাপট না অজুহাত ?
ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ওসমান হাদির ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনাটি নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। তবে একই ঘটনার পর যখন সরকার ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রার্থীদের নিরাপত্তা জোরদারের ঘোষণা দেয়, তখন একজন মনোনীত প্রার্থীর এভাবে সরে দাঁড়ানো রাজনৈতিক দৃঢ়তার অভাবকেই প্রকাশ করে বলে মনে করছেন অনেকেই।
স্থানীয় বিএনপি নেতারা বলছেন, যদি নিরাপত্তাই প্রধান শঙ্কা হতো, তবে তা দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করা যেত। সংবাদ সম্মেলনে একতরফা ঘোষণা দলীয় শৃঙ্খলার পরিপন্থী।
নেতাকর্মীদের ক্ষোভ: মাঠে ফেলে পালানোর অভিযোগ
সংবাদ সম্মেলনেই প্রকাশ পায় তীব্র অসন্তোষ। মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুরুল হক চৌধুরীর বক্তব্যই স্পষ্ট করে দেয় মাঠপর্যায়ের ক্ষোভ— “আমরা আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আপনার পাশে দাঁড়িয়েছি। এভাবে ফেলে রেখে চলে যাওয়া গ্রহণযোগ্য নয়।”
জিয়া সমাজকল্যাণ পরিষদের নেতা নাঈম খন্দকারের বক্তব্যও ইঙ্গিত দেয় সিদ্ধান্তটি কতটা আকস্মিক ও অগণতান্ত্রিক ছিল।
রাজনৈতিক বিশ্লেষণ: ব্যক্তি স্বার্থ বনাম দলীয় আদর্শ
এই ঘটনার মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপি নতুন এক সংকটে পড়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে—
বিপুল অর্থ ব্যয় করে টিকিট সংগ্রহ,
সংগঠনের ভেতরে বিভাজন তৈরি,
সংকটের মুহূর্তে প্রার্থিতা প্রত্যাহার—
সব মিলিয়ে এটি ব্যক্তিকেন্দ্রিক রাজনীতির ভয়াবহ দৃষ্টান্ত, যা বিএনপির দীর্ঘদিনের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
উপসংহার
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের ঘটনা কেবল একজন প্রার্থীর সরে দাঁড়ানো নয়; এটি বিএনপির ভেতরের টিকিট বাণিজ্য, নেতৃত্ব সংকট ও আদর্শগত দুর্বলতার প্রতিফলন। দল যদি এখনই বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত ও রাজনৈতিক মূল্যায়ন না করে, তবে ভবিষ্যতে এমন ‘মডেল রাজনীতির’ পুনরাবৃত্তি ঠেকানো কঠিন হবে।
সম্পাদক : রনি কুমার দাস, প্রকাশক : মোঃ আল আমিন মিয়া রকি কর্তৃক প্রকাশিত
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয় : পশ্চিম ভোলাইল মেলিটিরী বাড়ি কাশীপুর ফতুল্লা নারায়ণগঞ্জ।
যোগাযোগ : ০১৫১১-৭০৫৩৮৪, ০১৯১৬-১৮৭২৫৪.
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত