যুগের নারায়ণগঞ্জ:
ছাত্র আন্দোলন ও জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশজুড়ে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ঢেউ লাগে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রীসহ একের পর এক মন্ত্রী, এমপি ও প্রভাবশালী নেতারা দেশ ছেড়ে পালান।
সেই তালিকায় নারায়ণগঞ্জের আলোচিত ও কুখ্যাত ওসমান পরিবারও ব্যতিক্রম নয়। শামীম ওসমান, তার ছেলে অন ওসমান, ভাতিজা আজমির ওসমানসহ পরিবারের একাংশ আত্মগোপনে কিংবা দেশত্যাগ করেন। একই সঙ্গে ওসমান পরিবারের ছত্রচ্ছায়ায় বেড়ে ওঠা বহু চিহ্নিত সন্ত্রাসীও হঠাৎ ‘অদৃশ্য’ হয়ে যায়।
তবে নানা সমীকরণে পালাতে না পারা ওসমান পরিবারের অন্যতম প্রভাবশালী সদস্য, সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান অসংখ্য মামলায় আসামী হলেও এখনো নারায়ণগঞ্জে সক্রিয়—এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
অভিযোগ রয়েছে, তিনি নিয়মিত তার মালিকানাধীন উইজডম গার্মেন্টসে যাতায়াত করছেন, অথচ প্রশাসন কার্যত নীরব দর্শকের ভূমিকায়।
এই নীরবতার বিরুদ্ধে সম্প্রতি প্রকাশ্যে অভিযোগ তোলেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর দক্ষিণাঞ্চল সংগঠক শওকত আলী। তিনি সরাসরি সেলিম ওসমানকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ তোলেন বিএনপির কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে।
১৩ ডিসেম্বর দেওয়া ওই বক্তব্যের পরপরই পরিস্থিতি ভিন্ন খাতে মোড় নেয়।
অভিযোগ ওঠে, শওকত আলীর মন্তব্যের তিন দিনের মাথায় নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে উইজডম গার্মেন্টসে ‘আইনি তৎপরতার’ নামে এক ধরনের প্রদর্শনীমূলক অভিযান চালানো হয়, যাকে অনেকেই ‘অবিচার’ নামের নাটক বলে আখ্যা দেন।
এর মাত্র দুই দিনের মধ্যেই আরও চমকপ্রদ ঘটনা ঘটে—ব্যবসায়ী সংগঠন বিকেএমইএ-এর ব্যানারে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে নারায়ণগঞ্জে এসে পুলিশকে গাড়ি উপহার গ্রহণের জন্য আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানানো হয়।
সমালোচকদের মতে, এটি নতুন কিছু নয়। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়েও সেলিম ওসমান পুলিশের ‘সন্তুষ্টি’ নিশ্চিত করতে গাড়ি উপহার দেওয়ার নামে নানা আনুষ্ঠানিকতা ও নাটক মঞ্চস্থ করতেন—যাতে তার পরিবারের অপকর্মে প্রশাসনিক বাধা না আসে। সেই পুরনো কৌশলই যেন নতুন বাস্তবতায় আবার প্রয়োগ করা হলো।
১৭ ডিসেম্বর বুধবার বিকেলে বিকেএমইএ কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে জেলা পুলিশ ও শিল্প পুলিশ-৪-এর হাতে ছয়টি গাড়ির চাবি তুলে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের আয়োজক হিসেবে ছিলেন বিকেএমইএ-এর সেই অংশ, যাদের নগরবাসীর একটি বড় অংশ দীর্ঘদিন ধরেই ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ঠ বলেই জানে।
এই ঘটনার ছবি ও ভিডিও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হতেই নারায়ণগঞ্জজুড়ে শুরু হয় তীব্র আলোচনা ও ক্ষোভ। অনেকের প্রশ্ন—যখন একটি প্রভাবশালী পরিবারের সদস্যকে ঘিরে এত গুরুতর অভিযোগ, তখন পুলিশের কাছে গাড়ির চাবিই কি সবচেয়ে জরুরি বিষয় ? অনেকে এটিকে সরাসরি ‘ওসমান রক্ষা অপারেশন’ বলেও আখ্যা দিচ্ছেন।
একই সঙ্গে অভিযোগ উঠেছে, এই আনুষ্ঠানিকতার আড়ালে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার, সোনারগাঁ, বন্দর ও ফতুল্লায় আওয়ামী লীগ আমলে ওসমানীয় সন্ত্রাসীদের দ্বারা নির্যাতিত কয়েকজন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে হঠাৎ গ্রেপ্তার করা হয়েছে—যা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার আরেকটি কৌশল মাত্র বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
সব মিলিয়ে নগরবাসীর চোখে প্রশ্ন একটাই—আইনের শাসন কি সত্যিই বদলেছে, নাকি শুধু মুখোশ বদলে চলছে পুরনো নাটক? গাড়ির চাবির ঝনঝনানিতে কি ঢাকা পড়ে যাবে বছরের পর বছর জমে থাকা অপকর্ম ও অভিযোগের পাহাড় ?
সম্পাদক : রনি কুমার দাস, প্রকাশক : মোঃ আল আমিন মিয়া রকি কর্তৃক প্রকাশিত
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয় : পশ্চিম ভোলাইল মেলিটিরী বাড়ি কাশীপুর ফতুল্লা নারায়ণগঞ্জ।
যোগাযোগ : ০১৫১১-৭০৫৩৮৪, ০১৯১৬-১৮৭২৫৪.
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত