যুগের নারায়ণগঞ্জ:
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলেন নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর-বন্দর) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ব্যবসায়ী ও ক্রীড়া সংগঠক মো. মাসুদুজ্জামান মাসুদ। সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা শঙ্কা ও পারিবারিক চাপের কারণ উল্লেখ করে মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেন তিনি।
এ সময় সাংবাদিক ছাড়াও বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। মাসুদুজ্জামান নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজের সাবেক সভাপতি ও মডেল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
সংবাদ সম্মেলনে মাসুদুজ্জামান মাসুদ বলেন, ‘সাম্প্রতিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি, পারিবারিক চাপ ও ব্যক্তিগত কারণে আমি নির্বাচন করবো না, আমি মনোনয়ন কিনবো না। এ কারণে শহর ও বন্দরবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আমি একজন সমাজকর্মী হিসেবে আজীবন আপনাদের পাশে থাকবো। আমি জানি কী কাজটা করতে যাচ্ছি। এ সিদ্ধান্তের কারণে আমার দলের ও শুভাকাঙ্ক্ষী অনেকের আশা-আকাঙ্ক্ষা আজ মাটি হয়ে গেলো। এ সিদ্ধান্ত অনেক শক্ত করেই নিয়েছি। গত পাঁচ-ছয় মাসে আমি অনেক স্থানে গিয়েছি ও নির্বাচনি প্রচারণা চালিয়েছি। সেখানে সবার সাড়া পেয়েছি। তবে ব্যক্তিগত কারণ ও কিছু পারিপার্শ্বিক কারণে এই কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে আমাকে। নিরাপত্তা সংক্রান্ত কারণে আমার পরিবার চাচ্ছে না আমি নির্বাচন করি। এজন্য আমি আপনাদের সবার কাছে ক্ষমা চাই। তবে আমি সবসময় আপনাদের পাশে থাকবো।’
মাসুদুজ্জামান বলেন, ‘আমার অভিজ্ঞতায় এযাবৎকালে যতগুলো অনুষ্ঠান ও সংবাদ সম্মেলন করেছি, এই সংবাদ সম্মেলটা ভিন্ন। এখানে পিনপতন পরিবেশ। আমি জানি, এই অবস্থা কেমন; তারপরও এটার বিশদ বর্ণনা দেওয়ার মতো নয়। কীভাবে যে না করবো। এই কয়েকটা দিন নিজেকে তৈরি করার চেষ্টা করেছিলাম। যারাই এই আসনে মনোনয়ন পাবেন, তাদের সঙ্গে আমাদের নেতাকর্মীদের নিয়ে দলের হয়ে কাজ করবো। আমাদের মধ্যে কোনও ধরনের বৈরিতা থাকবে না, আমরা সবাই একযোগে কাজ করবো।’
এই আসনে মনোনয়নবঞ্চিতদের সঙ্গে বৈরিতা ছিল না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সাখাওয়াত হোসেন খান, আবু আল ইউসুফ খান টিপু, আবুল কালাম, বাবুল আহমেদ (মনোনয়নবঞ্চিত নেতারা) তাদের সঙ্গে আমার কোনও ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বৈরিতা নেই, কখনও ছিল না। মনোনয়ন ইস্যুতে তারা তাদের মতো করে চেষ্টা করেছেন, আমি আমার মতো চেষ্টা করেছি। দল আমাকে গ্রহণযোগ্য মনে করে মনোনয়ন দিয়েছে।’
মাসুদুজ্জামান আরও বলেন, ‘সবার আগে পরিবার এবং নিরাপত্তা। আমি আগেই বলেছি, পরিবার থেকে বিদায় নিয়েই রাজনীতিতে এসেছি। আগে তাদের কোনও বাধা ছিল না। শুরুতে তারা রাজি না হয়েও পরে রাজি হয়েছে। আমি ইচ্ছা প্রকাশ করেছি মানুষের জন্য কাজ করার। সাম্প্রতিক ঘটনা ও পরিবেশ পরিস্থিতিতে পরিবারের সদস্যরা অত্যন্ত ব্যথিত ও ভীত। এর বাইরেও আরও কিছু নিরাপত্তা ইস্যু আছে, সেটা আমি বিশদভাবে বলতে চাই না। পরিবেশটাই নেগেটিভ। এটি দলের নয়, আমার নিজের সিদ্ধান্ত। আজ সকালেও মেসেজ পেলাম, আগামী ২০ ডিসেম্বর সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত গুলশান অফিসে বিএনপি প্রার্থীদের ডাকা হয়েছে। সেখানে সারাদিন প্রশিক্ষণ হবে। প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। অথচ আমি কীভাবে না করবো, কীভাবে কাজ করবো; সেই ভাবনায় ছিলাম গত কয়েকদিন।’
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মাসুদুজ্জামান আরও বলেন, ‘উনি (তারেক রহমান) আমাকে সম্মান দিয়েছিলেন, এটা আমি ধরে রাখতে পারলাম না। আশা করছি, দল বিষয়টি বিবেচনা করবে। আমার দুর্ভাগ্য আমি এটা ধরে রাখতে পারলাম না। বিএনপি বড় একটি দল, আমি পরিবারের কাছে পারছি না, পরিবার এখানে গুরুত্বপূর্ণ। দু-একটি ঘটনা ঘটলেও পরিস্থিতি এখনও ভালো আছে। আশা করছি, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। আজকের এই সিদ্ধান্তে অনেকেই হতাশ। সেটা আমি আপনাদের মুখ দেখলে বুঝতে পারি। এখন পরিবেশটা এরকম হয়েছে যে, পরিবার আর রাজনীতিতে আমাকে চায় না। আমি-আপনি আমলে না নিলেও আমার পরিবার অবশ্যই আতঙ্কে থাকে। রাত ১টা বাজে যখন আমি ঘরে না ফিরি, নির্বাচনি প্রচারণায় ব্যস্ত থাকি তখন আমার পরিবারের সদস্য ও সন্তানরা নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন।’
গত ২৩ নভেম্বর বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে মাসুদুজ্জামানকে প্রার্থী ঘোষণা করে বিএনপি। এরপর থেকে ভোট চেয়ে এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ, সভা-সমাবেশ করে আসছিলেন।
নব্বইয়ের দশকে ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতির রাজনীতি করা মাসুদুজ্জামান দীর্ঘদিন ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন। রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন না। গত ৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর পল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগদান করেন। দলীয় মনোনয়নও পান। এই আসনে মাসুদুজ্জামান ছাড়াও বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য ও মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি আবুল কালাম, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন, সদস্যসচিব আবু আল ইউসুফ ও বিএনপি নেতা আবু জাফর বাবুল।
গত ১৫ নভেম্বর মাসুদুজ্জামানের প্রার্থিতা বাতিলের দাবিতে একাট্টা হয়ে এক টেবিলে বসেন চার মনোনয়নপ্রত্যাশী। ওই দিন নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে তারা সংবাদ সম্মেলন করে তার প্রার্থিতা বাতিলের দাবি জানান। তাদের দাবি, গত ১৭ বছর আওয়ামী লীগের আমলে তৃণমূলসহ অনেকেই নির্যাতিত হয়েছেন। এসব তৃণমূলের নেতাকে মূল্যায়ন করা হয়নি। তাই মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবি তোলেন তারা। তবে এ ঘটনার কিছুদিন পর মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব আবু আল ইউসুফ মাসুদুজ্জামানের পক্ষে প্রচারণা শুরু করেন।
প্রসঙ্গত, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিগত দিনে সংসদ সদস্য ছিলেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সেলিম ওসমান। তিনি আওয়ামী লীগদলীয় সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের বড় ভাই।
সম্পাদক : রনি কুমার দাস, প্রকাশক : মোঃ আল আমিন মিয়া রকি কর্তৃক প্রকাশিত
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয় : পশ্চিম ভোলাইল মেলিটিরী বাড়ি কাশীপুর ফতুল্লা নারায়ণগঞ্জ।
যোগাযোগ : ০১৫১১-৭০৫৩৮৪, ০১৯১৬-১৮৭২৫৪.
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত