যুগের নারায়ণগঞ্জ:
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে বয়োজ্যেষ্ঠ, অসুস্থ, রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়া ৭৩ বছরের ইসহাক মিয়ার ঘরে যেন আকস্মিক ছাপার হানা—তবে সেটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নয়, বরং আইনকে হাতের মুঠোয় পুরে রাখা পুলিশের এএসআই জহিরুল ইসলাম ও তার রাজনৈতিক সঙ্গী বিএনপি নেতা হালিমের।
অভিযোগ—একজন বৃদ্ধ অসুস্থ মানুষকে হত্যা মামলার ভয় দেখিয়ে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি, ঘরে ঢুকে আতঙ্ক সৃষ্টি, পরে নগদ টাকা, সিসিটিভি ডিভিআর, এমনকি স্মার্টফোন পর্যন্ত দাবি!
অসুস্থ বৃদ্ধ, কিন্তু সুস্থ চাঁদাবাজি
ইসহাক মিয়ার বয়স ৭৩। ২ বার হার্ট স্ট্রোক, ১ বার ব্রেইন স্ট্রোক, কিডনির রোগ—সারাক্ষণ জীবনধারণের সংগ্রাম। আর সেই মানুষকেই নাকি গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে হাতকড়া পরিয়ে আতঙ্ক ছড়ালেন সরকারি বেতনভুক্ত পুলিশ সদস্য এএসআই জহিরুল ইসলাম। যেন পুলিশ নয়—চাঁদা আদায়ের লাইসেন্সপ্রাপ্ত সংগ্রাহক।
বাড়িতে প্রবেশ করে ‘ভিডিও দেখানোর আদালত’
৩ নভেম্বর দুপুরে থানায় কর্মরত অবস্থায় এএসআই জহিরুল ইসলাম হাজির হন ভুক্তভোগীর বাসায়। সঙ্গে এনেছিলেন চাকরিচ্যুত পুলিশের পরিচয়দানকারী ‘শিমুল’ নামের এক ব্যক্তিকে—বুঝি দু’জনারই দায়িত্ব ছিল আলাদা:
– একজন ভয় দেখাবেন,
– আরেকজন সেটি প্রমাণ করবেন ‘বিএনপি নেতা হালিমের’ পুরনো ভিডিও দেখিয়ে।
পারিবারিক মানুষদের সামনে ইসহাক মিয়ার পুরনো রাজনৈতিক ছবিকে তুলে ধরা হয় যেন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রমাণ।
৫ লাখ টাকার দাবিতে ব্যর্থ, তাই ১ লাখে ‘রফাদফা’
৫ লাখ টাকা দিতে রাজি না হলে হাতকড়া পরিয়ে ‘গ্রেফতার নাটক’। পরে বৃদ্ধের ছেলে বাধ্য হয়ে ১ লাখ টাকা দেন। এএসআই সাহেবের ব্যাগে চলে যায় নগদ টাকা। বের হওয়ার আগে নজরে পড়ে সিসিটিভি—তৎক্ষণাৎ ডিভিআর খুলে, তার ছিঁড়ে ব্যাগে পুরে নেওয়া হয়। যেন অপরাধের প্রমাণ মুছেই ফেলা হলো।
মোবাইল ফোন না দিলে হবে গ্রেফতার !
ঘটনা শেষ নয়। পরে আবার দাবি আসে—৩০–৩৫ হাজার টাকার স্মার্টফোন। না দিলে আবারও গ্রেফতারের ভয়। শেষ পর্যন্ত ভুক্তভোগীর ছেলে বাধ্য হয়ে প্রায় ৩২ হাজার টাকা দিয়ে স্মার্টফোন কিনে দেন। রাষ্ট্রের পোশাকে থাকা ব্যক্তির এমন প্রকাশ্য ‘মোবাইল সংগ্রহ অভিযান’ সত্যিই বিস্ময়কর।
অভিযুক্তরা ফোন ধরেন না, ওসি বলেন—‘জানি না’
ঘটনার বিষয়ে এএসআই জহিরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি সরাসরি কথা বলতে বলেন—অর্থাৎ ফোনে কথা বলার সময় হয়তো উত্তর দেওয়া কষ্টকর হয়ে যায়। অন্যদিকে বিএনপি নেতা হালিমের ফোন ব্যস্ত বা নীরব—সম্ভবত ‘মোবাইল সংগ্রহ’-এর ব্যস্ততা।
সাবেক ওসি শাহিনুর আলম বলেন—তিনি কিছুই জানেন না। বাংলাদেশের অনেক ঘটনার মতো, এখানেও আবার সেই প্রচলিত বাক্য—“আমার জানা নেই”।
একজন বৃদ্ধকে আতঙ্কিত করে টাকা, ডিভিআর, মোবাইল আদায়—এ কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা ?
এএসআই জহিরুল ইসলাম ও তার রাজনৈতিক সঙ্গী হালিমের এই ‘মিশন’ যদি সত্য হয়, তবে এটি কেবল দুর্নীতি নয়—নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রতি জনমানুষের বিশ্বাসকে পদদলিত করার জঘন্য উদাহরণ।
একজন ৭৩ বছরের অসুস্থ, বিছানায় থাকা মানুষকেও যদি হাতকড়া পরিয়ে টাকা আদায়ের শিকার হতে হয়—তবে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায় ?
রাষ্ট্রের ইউনিফর্মে যারা আছেন, তারা যদি ভয়কে পুঁজি করে টাকা তুলতে নামেন, তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাচ্ছে, সেটিই এখন সবচেয়ে শঙ্কার বিষয়।
সম্পাদক : রনি কুমার দাস, প্রকাশক : মোঃ আল আমিন মিয়া রকি কর্তৃক প্রকাশিত
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয় : পশ্চিম ভোলাইল মেলিটিরী বাড়ি কাশীপুর ফতুল্লা নারায়ণগঞ্জ।
যোগাযোগ : ০১৫১১-৭০৫৩৮৪, ০১৯১৬-১৮৭২৫৪.
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত