যুগের নারায়ণগঞ্জ:
অভ্যন্তরিন কোন্দল , প্রভাব বিস্তার নিয়ে বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্তি, প্রাথমিক মনোনয়নে অসন্তুষ্টি, প্রাথমিক মনোনয়ন প্রাপ্তদের বিরুদ্ধে মনোনয়ন বঞ্চিতদের অবস্থান সব মিলিয়ে নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে চরম অচলাবস্থা বিরাজ করছে।

কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্দেশনা উপেক্ষা করে প্রাথমিক মনোনয়ন প্রাপ্তদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কর্মসুচি পালন করেছে মনোনয়ন বঞ্চিতরা।

নারায়ণগঞ্জ-১(রূপগঞ্জ) আসনের প্রাথমিক মনোনয়ন প্রাপ্ত মোস্তাফিজুর রহমান দীপু ভূইয়া অনেক কৌশল অবলম্বন করে মনোনয়ন বঞ্চিতদের অনেকটা ম্যানেজ করতে পারলেও তৃনতুলে এখনো রয়েছে অস্থিরতা। বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত বিএনপির সিনিয়র নেতারা এক হলেও তৃনমুল নেতা-কর্মীদের মধ্যে রয়েছে বিভক্তি।

নারায়ণগঞ্জ -২ (আড়াইহাজার) আসনে বিএনপি থেকে প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপির ঢাকা বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ। তার বিরুদ্ধে মনোনয়ন প্রত্যাহারের দাবীতে নিয়মিত বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে মনোনয়ন বঞ্চিত বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-অর্থ বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুল হক সুমন, সাবেক সাংসদ আতাউর রহমান খান আঙ্গুর এবং কেন্দ্রীয় বিএনপির মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক পারভীন আক্তার। তাদের প্রশ্ন আজাদের চেয়ে অনেক জনপ্রিয় নেতা থাকতেও আজাদকে মনোনয় কেন? তাদের এ বিষয়ে বিরোধ পূর্ণ কর্মসুচি তৃনমুল নেতা-কর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁও- সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে বিএনপি থেকে প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছেন সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান। আজহারুল ইসলাম মান্নানের মনোনয়ন পাওয়াকে কেন্দ্র করে সোনারগাঁও ও সিদ্ধিরগঞ্জে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করেছে মনোনয়ন বঞ্চিতরা। শুধু তাই নয় মনোনয়ন বঞ্চিত সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াস উদ্দিন ও অধ্যাপক মো: রেজাউল করিম, মুজাহিত মল্লিকসহ সাত মনোনয়ন বঞ্চিত বিএনপি নেতা আজহারুল ইসলাম মান্নানের বিরুেদ্ধ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে আজহারুল ইসলাম মান্নানের মনোনয়ন প্রত্যাহারের আহবান জানিয়ে আসছেন।

একই ভাবে নারায়ণগঞ্জ-৫( বন্দর- নারায়ণগঞ্জ সদর) আসনে বিএনপি থেকে প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছেন শিল্পপতি মডেল গ্রুপের মালিক মাসুদুজ্জামান মাসুদ। মাসুদুজ্জামান মাসুদের মনোনয়ন নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন সহ জেলা জুরে সমালোচনার ঝর উঠে। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের মনোনয়ন বঞ্চিত সাবেক সাংসদ এড. মো: আবুল কালাম, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহবায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান মাসুদুজ্জামান মাসুদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে দলের দুর্দিেন মাঠ ছিল এমন কাউকে মনোনয়ন দেওয়ার আহবান জানিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি ও প্রগিবাদ সমাবেশ পালন করে আসছেন। তাদের দাবী গত সতেরো বছরে মাসুদকে কেউ রাজনীতির সাথে জড়িত আছে বলতেও পারবে না। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে হঠাৎ করে বিএনপিতে যোগদান করেই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের মত একটা গুরুত্বপূর্ণ আসনে মনোনয়ন পেয়ে যাবেন এটা মেনে নিতে পারছেনা মনোনয়ন বঞ্চিত বিএনপি নেতারা।

এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে দলীয় শৃংখলা ভঙ্গের দায়ে বহিষ্কার, বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার সহ বিভিন্ন উপায়ে নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে শৃংখলা ফিরাতে কাজ করছে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি। কিন্তু তাতে এখনো পুরোপুরি সফলতার মুখ দেখা যাচ্ছে না।

জেলা জুড়ে দীর্ঘ বছর ধরে বিভিন্ন গ্রুপের বিভিন্ন নেতাদের সমর্থনে রাজনৈতিক কর্মকান্ড ও আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নিয়ে এখন বিপাকে পড়েছে জেলার বিভিন্ন এলাকার তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। যারা মনোনয়ন পেয়েছেন তাদের সমর্থক এবং মনোনয়ন বঞ্চিত নেতার সমর্থকদের সাথে একত্রে দলের স্বার্থে কাজ করার জন্য মিলিয়ে দিতে কোন সিনিয়র নেতা ভূমিকা পালন করেছে না। ফলে জেলাজুড়ে বিএনপির তৃনমুল নেতা-কর্মীদের একটা অংশ নির্বাচনী প্রচার প্রচারনার বাইরে। এবিষয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপির নীতি নির্ধারনি মহলের কাছে সমঝোতার নিশ্চয়তা চায় নারায়ণগঞ্জের তৃনমুল বিএনপির নেতা-কর্মীরা। না হলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের সংসদীয় এলাকাগুলোতে ভোটের মাঠে বিএনপিকে চরম মূল্য দিতে হতে পারে বলে ধরনা তৃনমুল নেতা-কর্মীদের।