যুগের নারায়ণগঞ্জ:
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় সাবেক এমপি ও গডফাদারখ্যাত বিতর্কিত প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের ‘ঘনিষ্ঠ শিষ্য’ হিসেবে পরিচিত মনিরুল আলম সেন্টুর হঠাৎ ধানের শীষে পোস্টারিং—রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে তীব্র চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।
আজ শুক্রবার সকালে ঢাকা নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড ছাড়াও ফতুল্লা থানা এবং ফতুল্লা–কুতুবপুরের গলি–মহল্লার বাড়ির দেয়ালে দেয়ালে সাঁটানো পোস্টার দেখে স্থানীয়রা হতভম্ব হয়ে যায়।
মুহূর্তেই বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এবং ফতুল্লার চায়ের আড্ডায়-চায়ের দোকানে।
গোপনে পোস্টারিং নাকি প্রকাশ্যে শক্তির প্রদর্শন ?
স্থানীয়রা বলছেন, সেন্টু সবসময় ক্ষমতাসীন পক্ষের ছাতার নিচে থেকে ‘যা খুশি তাই’ করার সুযোগ পেয়েছেন। এখন সরকার পরিবর্তনের পরে যখন তার বিরুদ্ধে একাধিক হামলা ও হত্যাচেষ্টার মামলা চলছে—ঠিক সেই সময়ে হঠাৎ বিএনপির প্রতীক ধানের শীষে ভোট চাওয়ার ঘটনা রহস্যজনক।
বিএনপি নেতাকর্মীদের অনেকেই এটিকে "পরিকল্পিত বিভ্রান্তি" এবং "দলের ভাবমূর্তি নষ্টের উদ্দেশ্য" বলে উল্লেখ করেছেন। তাদের প্রশ্ন—“একজন বহিষ্কৃত নেতা, যিনি প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে ভোট চেয়ে বক্তব্য দিয়েছেন, তিনি হঠাৎ কীভাবে ধানের শীষে প্রার্থী হওয়ার সাহস পেলেন ?”
২০১৮ সালের বহিষ্কার—ওসমান পরিবারের ছায়া—দলবদল—এবার ধানের শীষ !
২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় শামীম ওসমানের পক্ষে প্রকাশ্যে ভোট চাওয়ায় বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হন সেন্টু। পরে শামীম ওসমানকে ‘পীর’ দাবি করে আলোচনায় আসেন এবং ২০১৯ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন।
সরকার পরিবর্তনের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা চালিয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়।
তবুও পুলিশ তাকে গ্রেফতার না করায় স্থানীয়রা বিষয়টিকে ‘যাদুকরী প্রভাব’ বলে আখ্যা দেন।
অভিযোগ রয়েছে, থানা পুলিশ ছাড়াও পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ম্যানেজে পটু সেন্টু এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছে।
জামায়াত–বিএনপি নেতাদের অভিযোগ,
“আমাদের একজন সাধারণ কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হলে পুলিশ চোখ রাঙায়। আর সেন্টু প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও কেউ হাত দেয় না ।”
পুলিশ বলছে—গ্রেফতার হবে ‘যে কোনো সময়’, কিন্তু এলাকার অনেকের প্রশ্নে, ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও তদন্ত কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেছেন—“সেন্টুর বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা ও হত্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। তাকে খুঁজছে পুলিশ । যে কোনো সময় গ্রেফতার করা হবে।”
কিন্তু এলাকাবাসীর প্রশ্ন—“যে লোক প্রতিদিন প্রকাশ্যে এলাকায় ঘোরাফেরা করছে, তাকে গ্রেফতার করতে পুলিশের এত সময় লাগছে কেন ?”
রাজনীতির মাঠে নতুন নাট্যরূপ ?
বিশ্লেষকদের মতে, শামীম ওসমানের সাবেক ঘনিষ্ঠ এবং আওয়ামী লীগের নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান সেন্টুর হঠাৎ ধানের শীষ পোস্টারিং—এটি নারায়ণগঞ্জের রাজনীতির জটিলতা, দর-কষাকষি ও অদৃশ্য শক্তির প্রভাবের ইঙ্গিত বহন করে।
এটি কি—বিএনপির ভেতরের বিভাজন তৈরির চেষ্টা ? কোনো মহলের বিশেষ পরিকল্পনা ? নাকি সেন্টুর ব্যক্তিগত রাজনৈতিক বাঁচার কৌশল ?
এই প্রশ্নগুলো এখন ফতুল্লার মানুষের মুখে মুখে।
শেষ কথা
সেন্টুকে ঘিরে দীর্ঘদিনের বিতর্ক, মামলা ও দলবদলের ইতিহাস নতুন মোড় নিয়েছে ধানের শীষ পোস্টারিংয়ে।
২০২৪ সালের ৫ আগষ্ট সরকার পরিবর্তনের পর নারায়ণগঞ্জের রাজনীতি যখন পুনর্গঠনের পথে—ঠিক তখন সেন্টুর এই পদক্ষেপ পুরো প্রেক্ষাপটকে আরও জটিল ও রহস্যময় করে তুলেছে।
ফতুল্লার রাজনৈতিক তাপমাত্রা এখন আরও কয়েক ডিগ্রি বাড়বে—এতে কোনো সন্দেহ নেই।
সম্পাদক : রনি কুমার দাস, প্রকাশক : মোঃ আল আমিন মিয়া রকি কর্তৃক প্রকাশিত
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয় : পশ্চিম ভোলাইল মেলিটিরী বাড়ি কাশীপুর ফতুল্লা নারায়ণগঞ্জ।
যোগাযোগ : ০১৫১১-৭০৫৩৮৪, ০১৯১৬-১৮৭২৫৪.
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত