যুগের নারায়ণগঞ্জ:
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মাসুদুজ্জামান মাসুদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে আওয়ামী লীগ ও ওসমান পরিবারঘনিষ্ঠ একাধিক ব্যক্তির সম্পৃক্ততা নিয়ে দলের ভেতরেই তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
নগরীতে ব্যাপক গুঞ্জন রয়েছে, “মাসুদুজ্জামান ওরফে মডেল মাসুদ” যদি বিএনপির রাজনীতি ই করতেন তাইলে বিগত দিনে বিএনপির কোন নেতাকর্মীদের সাথে তার কোন একটি প্রমাণ সাপেক্ষে অন্তত একটি ছবি প্রকাশ করতে পারেন নাই কেন ? এমন ব্যাপক গুঞ্জনের পরেও অন্তত একটি ছবি প্রকাশ করতে পারলে বুঝা যেত তিনি বিএনপি রাজনীতি সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন ! বিগত সময় তারা রাজনীতি ছিল শুধু আওয়ামী লীগের মন্ত্রী এমপিদের সাথে সখ্যতা করে কি করে অর্থ বৃত্তের মালিক হওয়া যায় সেই চেষ্টা করা।”
মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকেই স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা তাকে ‘ওসমান পরিবারের দোসর’দের প্রাধান্য দেওয়ার অভিযোগ করে আসছিলেন। সেই অভিযোগে নতুন করে আগুন ঢেলেছে বৈষম্য বিরোধী হত্যা মামলার পলাতক আসামি ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর শামসুজ্জোহার প্রকাশ্য উপস্থিতি।
ওসমান পরিবারের মিছিলে নিয়মিত মুখ শামসুজ্জোহা
২৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শামসুজ্জোহা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন দীর্ঘদিন। সাবেক এমপি শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমানের সমাবেশে বিশাল মিছিল নিয়ে যোগ দেওয়া, এলাকায় তাদের ঘনিষ্ঠ হিসেবে প্রভাব বিস্তার—সবই ছিল তার পরিচয়ের অংশ।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ক্ষমতাসীন দলের সময় তাকে কেন্দ্র করে টিসিবি পণ্য চুরি, সরকারি জমি দখল, বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করানোসহ একাধিক অপকর্মের অভিযোগ ছিল। নারী কাউন্সিলর সানিয়া সাউদের উপর হামলা ও শ্লীলতাহানির অভিযোগে তাকে সাময়িক বরখাস্তও করেছিল স্থানীয় সরকার বিভাগ।
৫ আগস্টের বৈষম্য বিরোধী হত্যা মামলায় আসামি হওয়ার পর থেকেই তিনি পলাতক। কিন্তু সেই ‘পলাতক’কেই এবার দেখা গেল বিএনপি প্রার্থী মাসুদুজ্জামানের পাশেই।
গণসংযোগে ‘স্বরব উপস্থিতি’
সাম্প্রতিক এক গণসংযোগে মাসুদুজ্জামানের ঠিক পাশেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে শামসুজ্জোহাকে। যেখানে প্রার্থী নিজেই বক্তব্য দিচ্ছিলেন, সেখানে শামসুজ্জোহার অবস্থান ছিল যথেষ্ট দৃশ্যমান।
স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন—
“যে ব্যক্তি আওয়ামী লীগের সময় বিএনপি নেতাদের গ্রেপ্তারে ভূমিকা রেখেছেন, তিনিই কি এখন বিএনপি প্রার্থীর ছায়া সঙ্গী ?”
অনেকে বলছেন, এই চিত্র কেবল অস্বস্তিকরই নয়, বরং নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অস্বচ্ছ রাজনৈতিক দালালি ও দ্বৈত পরিচয়ের নতুন উদাহরণও তৈরি করছে।
বিএনপি ভেতরে ক্ষোভ—‘ওসমান পরিবারের দালালদের প্রাধান্য কেন ?’
মাসুদুজ্জামানের দলীয় সহকর্মীরা আগে থেকেই অভিযোগ করছিলেন—তিনি নাকি আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ এবং ওসমান পরিবারের কিছু ‘বিশেষ’ লোককে গুরুত্ব দিচ্ছেন।
১৩ নভেম্বর মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপুর বাসায় মাসুদুজ্জামানের সৌজন্য সাক্ষাতের সময় টিপু প্রকাশ্যে বলেন— “ওসমান পরিবারের কোন দালালের সাথে আপোস করা যাবে না। তাদের দোসরদের প্রাধান্য দিলে বিএনপির অস্তিত্বই সংকটে পড়বে।”
টিপুর এই কথার পরও শামসুজ্জোহার প্রকাশ্য উপস্থিতি দলের ভেতরে আরও ক্ষোভ বাড়িয়েছে।
বন্দরে শুরু হয়েছে আলোচনা–সমালোচনা
এলাকাজুড়ে আলোচনা—’একজন পলাতক আসামিকে কেন সঙ্গে রাখছেন বিএনপি প্রার্থী ?তিনি কি আবারও ওসমান পরিবারের ছায়া ব্যবহার করছেন ? নাকি নির্বাচনী মাঠে ভিন্ন কোনও সমীকরণ তৈরি হচ্ছে ?’
স্থানীয় নেতারা বলছেন, বন্দরের মানুষ যে শামসুজ্জোহাকে ‘আওয়ামী লীগ ও ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ঠ’ হিসেবে চেনে, তা বদলাতে দীর্ঘ সময় লাগবে। এমন একজনকে বিএনপি প্রার্থীর পাশে দেখা দলের সমর্থকদের মধ্যেই দ্বিধা তৈরি করেছে।
শেষকথা
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীকে ঘিরে যে ‘ওসমান ঘনিষ্ঠতা’ বিতর্ক তৈরি হয়েছিল, শামসুজ্জোহার উপস্থিতি সেই বিতর্ককে আরও পুষ্ট করেছে।
এখন দেখার বিষয়—বিএনপি নেতৃত্ব কীভাবে বিষয়টি ব্যাখ্যা করে এবং নির্বাচনী মাঠে এর প্রভাব কতটা গভীর হয়।
সম্পাদক : রনি কুমার দাস, প্রকাশক : মোঃ আল আমিন মিয়া রকি কর্তৃক প্রকাশিত
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয় : পশ্চিম ভোলাইল মেলিটিরী বাড়ি কাশীপুর ফতুল্লা নারায়ণগঞ্জ।
যোগাযোগ : ০১৫১১-৭০৫৩৮৪, ০১৯১৬-১৮৭২৫৪.
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত