যুগের নারায়ণগঞ্জ:
নুরুজ্জামান নূরা। বিএনপির একজন একনিষ্ট কর্মী ছিলেন, ছিলেন দলের জন্য নিবেদিত প্রান। বিএনপির বিভিন্ন সভা সমাবেশ কিংবা দলীয় কর্মসূচীতে ছিল তার সরব উপস্থিতি। স্বেরাচারী হাসিনা সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে বিএনপির প্রভাবশালী নেতারা যখন জীবন রক্ষার্থে আত্মগোপন কিংবা সেফজোনে অবস্থান করছিলেন ঠিক সে মুহুর্তে দলকে ভালবেসে এনায়েতনগর ইউনিয়ন বিএনপির রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছিলেন বিএনপি নেতা নুরুজ্জামান নুরু। তিনি একাই লড়ে গেছেন স্বেরাচারী দোষরদের বিরুদ্ধে। নুরুজ্জামান নূরা দলকে ভালবেসে এবং দলের ঝান্ডা সমুন্মুত রাখতে একাই লড়ে গেছেন। একটা পর্যায়ে দলের প্রতি তার আনুগত্যের অপরাধে নেমে আসে নির্মম নির্যাতনের খড়গ, দেয়া হয় একের পর এক মিথ্যা মামলা।
একটা সময়ে তাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ারও পরিকল্পনা করা হয়! সে পরিকল্পনা মোতাবেকই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তাকে অপহরন করা হয় বলে নুরুজ্জামানের পরিবার দাবি করেন। এদিকে, অপহরন হওয়ার প্রায় ১১ বছর অতিবাহিত হলেও তার পরিবার এখনো খোঁজ পায়নি বিএনপি কর্মী নুরুজ্জামান নুরুর। দেশের প্রতিটি কারাগার, হাসপাতালসহ সম্ভ্যাব্য স্থান গুলোতে খোঁজেও পাওয়া যায়নি বিএনপি কর্মী নূরার হদিস! পরিবারের দাবি একটাই, যদি নুরুজ্জামান নূরু বেঁচে থাকে তাহলে তার সন্ধান দেয়া হউক আর যদি হত্যা করা হয়ে থাকে তাহলে লাঁশের সন্ধান দেয়া হউক।
এদিকে,অপহরনের ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে আলম পারভেজ এবং সালাউদ্দিন নামের দুইজনকে অভিযুক্ত করে অপহরন হওয়া বিএনপি কর্মী নুরুজ্জামানের স্ত্রী কুলসুম বেগম নারায়ণগঞ্জ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ইসতিয়াক আহাম্মেদ সিদ্দিকীর আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন।
কিন্তু পরিতাপের বিষয়,মামলা দায়ের করা হলেও বরাবরের মতই অন্ধকারেই রয়ে গেছে নুরুজ্জামান নুরুর অপহরনের মামলাটি! সে সময়ের পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় ন্যায় বিচার থেকেও বঞ্চিত হয়েছে নুরুজ্জামান নুরুর পরিবারের সদস্যরা। এমনকি দেয়া হয়েছে নুরুজ্জামানের মতই পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের গুম করার হুমকি।
তাছাড়া, একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তিকে হারিয়ে পাগল প্রায় তার পরিবারের সদস্যরা। স্বামীর সন্ধান যখন পাচ্ছিলেন না ঠিক সে মুহুর্তে একমাত্র আশ্রয়স্থল মহান রবের দরবারে জায় নামায বিছিয়ে কান্নারত কন্ঠে একটাই চাওয়া ছিল, যেন তার স্বামীকে জীবিত ফিরে পাওয়া কিংবা অপহরনের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে। হয়তো বা মহান রব নীরিহ বিএনপি কর্মী নুরুজ্জামান নুরুর মত হাজারো মা ও স্ত্রীর এবং অপহরন হওয়া সন্তানের মতই কুলুসুম বেগমের দোয়া কবুল করেছেন এবং ৫-ই আগষ্টের মধ্য দিয়ে স্বেরাচারী হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে।
৫ই আগষ্টের পর স্বেরাচারী হাসিনা সরকারের পতনের পর আবারো নতুন করে আইনের শাসন প্রতিষ্টার স্বপ্ন দেখছেন নুরুজ্জামান নুরুর পরিবার।
অপহরণ হওয়া নুরুজ্জামানের স্ত্রী কুলসুম বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে এ প্রতিবেদককে বলেন, একদিন-দু'দিন নয়, বাবাকে ছাড়া আমাদের একমাত্র সন্তান সাইফুলের কেটে গেছে প্রায় ১১টি বছর। বেঁচে আছেন নাকি মারা গেছেন, জানা নেই পরিবারের কারোরই। বাবা, কবে ফিরবে? নিষ্পলক চাহনিতে শুধুই বাবাকে খুঁজে ফেরা।
অশ্রুসজল অপেক্ষার প্রহর গুণে গুণে মলিন মুখগুলোতে মুছে গেছে হাসির রেখা।
সাইফুল বলেন, 'তদন্ত কমিশন গঠন হওয়ার পর আমি আবার নতুন করে আশা দেখছি যে আমি আমার বাবাকে ফিরে পাবো। আমি আশা রাখি যে আমার বাবা বেঁচে আছেন।'
২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারী গুম হন বিএনপি কর্মী নুরুজ্জামান নূরা। ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের রোষানলে পড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে স্থানীয় সোর্স আলম মিয়া ও তার সহযোগী সালাউদ্দিনসহ আরো কয়েকজন মিলে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বিএনপি কর্মী নুরুজ্জামান নূরাকে। হদিস মেলেনি আজও।
নিখোঁজ প্রিয় মানুষটির আশায় দিন কাটছে স্ত্রী কুলসুম বেগমের। এখনও অপেক্ষা, ফিরে এসে ফের হাল ধরবেন সংসারের।
কুলসুম বলেন, 'আমার ছেলে প্রতিদিন ঘুমানোর আগে আমাকে প্রশ্ন করে যে মা, বাবা কি বেঁচে আছে? আমার কাছে তো প্রশ্নের উত্তরটা নেই। ১১ বছর হলো আমি এভাবে বহন করছি, আমি এখনও জানলামই না যে আমি বিধবা না কি সধবা। আমি বুঝতেই পারছি না যে আমার স্বামী আছে না কি আমার স্বামী নেই।' আমি আমার স্বামীর সন্ধান চাই। যদি ওনাকে মেরেও ফেলা হয় তার লাঁশের সন্ধান আমি চাই সে সাথে আমার স্বামীকে অপহরনের সাথে জড়িতদের শাস্তি চাই।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে আইনশৃংঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে উঠিয়ে নেয়া হয় বিএনপি নেতা নুরুজ্জামান নুরুকে। এরপর অপহরন হওয়া নুরুজ্জামানের পরিবার স্থানীয় থানাসহ জেলা এবং দেশের বিভিন্নস্থানে খোঁজ নিয়েও কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। এঘটনায় ফতুল্লা মডেল থানায় পরিবারের একটি জিডি করা হয় যার নাম্বার- ২৯২ তাং-৭-২-২০১৪ এবং পরবর্তীতে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ইশতিয়াক আহাম্মেদ সিদ্দিকী'র আদালতে অপহৃত ব্যাক্তির স্ত্রী কুলসুম বেগম অপহরনের ঘটনায় সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ এনে ফতুল্লার পশ্চিম ধর্মগঞ্জ এলাকার জুলহাস মাদবরের ছেলে আলম মিয়া এবং ফতুল্লার মুসলিমনগর এলাকার হেবা মিয়ার ছেলে সালাউদ্দিনকে প্রধান অভিযুক্ত করে একটি মামলার আবেদন দায়ের করেন। যার পিটিশন নাম্বার- ২০(খ)/১৪।
সম্পাদক : রনি কুমার দাস, প্রকাশক : মোঃ আল আমিন মিয়া রকি কর্তৃক প্রকাশিত
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয় : পশ্চিম ভোলাইল মেলিটিরী বাড়ি কাশীপুর ফতুল্লা নারায়ণগঞ্জ।
যোগাযোগ : ০১৫১১-৭০৫৩৮৪, ০১৯১৬-১৮৭২৫৪.
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত