যুগের নারায়ণগঞ্জ:
নারায়ণগঞ্জের খানপুরে ওয়াসা ভবনের ভেতরে কথিত “টর্চার সেলে” সিকিউরিটি গার্ড হানিফকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতরা হলো খানপুর এলাকার মুসফিকুর রহমান জিতু, বাহার এবং সাইদুল ইসলাম। তবে এ ঘটনার মূল হোতা হিসেবে চিহ্নিত অভি এখনো পলাতক রয়েছে।
পুলিশ জানায়, ২০ আগস্ট রাতে খানপুরের জোড়া পানির টাংকির ভেতরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। ঘটনার পর রাতেই এবং পরদিন (২১ আগস্ট) তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। নিহত হানিফ (৩৫) খানপুরের ইতু ভিলায় সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে চাকরি করতেন।
নিহতের পরিবারের অভিযোগ
নিহতের বোন জয়নাব ওরফে রাবেয়া অভিযোগ করে বলেন, “সোমবার দুপুরে আমার ভাই হানিফ ঘুমাচ্ছিল। তখন অভি ও তার কয়েকজন সহযোগী এসে হানিফকে লাথি মেরে বিছানা থেকে ফেলে দেয়। মাথা দেয়ালে ঠুকে দেয়। এরপর তাকে মারতে মারতে ওয়াসার টাংকির ভেতরে নিয়ে যায়। ওরা বলে, হানিফ নাকি ১২-১৩ বছরের এক মেয়েকে ধর্ষণ করেছে। কিন্তু সেই মেয়ে সুস্থ আছে, কোনো অভিযোগই দেয়নি। অথচ ওরা আমার ভাইকে পিটিয়ে মেরে ফেলল।”
রাবেয়া আরও বলেন, “হানিফকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পরে অভি আমাদেরও সেখানে ডেকে নেয়। আমি ও আমার স্বামী ইবরাহিম গেলে অভি আমার স্বামীকে চড়-থাপ্পড় মারে, লুঙ্গি টান দিয়ে খুলে ফেলার চেষ্টা করে, আমাদের গালাগাল করে এবং হুমকি দেয়। পরে সন্ধ্যায় জানতে পারি, আমার ভাইয়ের লাশ ৩০০ শয্যা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয়েছে।”
তিনি জানান, নিহত হানিফের তিন সন্তান — বড়টির বয়স ৬ বছর, মেঝ সন্তানের আড়াই বছর এবং ছোট সন্তানের বয়স মাত্র ৬ মাস।
“আমার ভাই যদি অপরাধীও হতো, দেশে তো আইন আছে, আদালত আছে। কিন্তু ওরা নিজেরাই বিচার করে ওকে মেরে ফেলল। এখন তার সন্তানগুলো না খেয়ে আছে।”
ভগ্নিপতির বর্ণনা
হানিফের ভগ্নিপতি ইবরাহিম বলেন, “দুপুরে আমার শালিকা ফোন করে জানায়, হানিফকে মারধর করা হচ্ছে। আমি কাজের জায়গা থেকে বাসায় ছুটে যাই, কিন্তু ওকে পাইনি। পরে আমাকে ও আমার স্ত্রীকে জোড়া টাংকির ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অভি ও তার লোকজন আমাকে চড়-থাপ্পড় মারে, লুঙ্গি টান দেয়, গালাগাল করে এবং টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে নানা হুমকি দেয়। কিছুক্ষণ পর দেখি তারা হানিফকে একটি অটোতে তুলে নেয়। এরপরই আমরা সেখান থেকে বের হয়ে আসি।
অভি ও রাজনৈতিক সংযোগ
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পলাতক অভি দীর্ঘদিন ধরে খানপুর এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে আসছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সে আজমেরী ওসমানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত ছিল এবং স্থানীয়ভাবে আওয়ামী ঘরানার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, অভির নিয়ন্ত্রণে থাকা ওয়াসার জোড়া টাংকির ভেতরে একটি টর্চার সেল পরিচালিত হতো, যেখানে আগে থেকেও একাধিক ব্যক্তি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
পুলিশের বক্তব্য
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি নাসির উদ্দিন বলেন, “খানপুরে সিকিউরিটি গার্ড হানিফকে হত্যার ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মূল আসামি অভিকে ধরতে অভিযান চলছে। প্রাথমিকভাবে এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদেরও শনাক্ত করা হয়েছে।”
স্থানীয়দের ক্ষোভ
খানপুরের স্থানীয়দের অভিযোগ, ওয়াসার জোড়া টাংকির ভেতরটি দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় অপরাধীদের আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল। “সরকারি জায়গায় এমন একটি টর্চার সেল চলবে, অথচ প্রশাসন জানবে না — এটা বিশ্বাস করা কঠিন,” — বলেন এলাকার এক প্রবীণ বাসিন্দা।
শেষ কথা
ওয়াসার সরকারি ভবনের ভেতরে এ ধরনের টর্চার সেল থেকে একজন সাধারণ সিকিউরিটি গার্ডের হত্যাকাণ্ড শুধু নারায়ণগঞ্জ নয়, সারাদেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। এলাকাবাসীর দাবি, এ ঘটনার পূর্ণ তদন্ত করে জড়িতদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা হোক।
সম্পাদক : রনি কুমার দাস, প্রকাশক : মোঃ আল আমিন মিয়া রকি কর্তৃক প্রকাশিত
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয় : পশ্চিম ভোলাইল মেলিটিরী বাড়ি কাশীপুর ফতুল্লা নারায়ণগঞ্জ।
যোগাযোগ : ০১৫১১-৭০৫৩৮৪, ০১৯১৬-১৮৭২৫৪.
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত