যুগের নারায়ণগঞ্জ:
শামীম ওসমানের চোরাই তেলের অন্যতম অংশিদার এবং পলাতক থাকাবস্থায় তেলচুরিসহ নানা অপকর্মের গুরুতর অভিযোগে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ আনোয়ার হোসেন মেহেদীকে গ্রেফতার করেছে। একই সাথে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে ছাত্র হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
আজ রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে নারায়ণগঞ্জ আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শামীমা খাতুন শুনানির পর আনোয়ার হোসেন মেহেদীকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
এ বিষয় টি নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ আদালতের দায়িত্বে থাকা পুলিশের পরিদর্শক মো: কাইউম খান।
জানা যায়, শামীম ওসমানদের কয়েকজন ক্যাশিয়ারের মধ্যে অন্যতম দোসর ও চিহ্নিত তেলচোর সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক আনোয়ার হোসেন মেহেদী, তার ভাই লিটন চক্র ও তাদের পরিবার বেপরোয়া হয়ে উঠে।
তেলচোর মেহেদী চক্রের নিয়ন্ত্রণেই চলে আসছিল সিদ্ধিরগঞ্জে অবৈধ তেল চুরি।
২০২৪ সালের ৫ আগষ্টের গণঅভ্যুত্থানের পর মেহেদী পলাতক থাকলেও তার ছোট ভাই লিটন, বড় ভাই বাচ্চু, ভাতিজা সোহাগ ও সোহান অবৈধ জ্বালানী তেল চুরির মহোৎসব চালিয়ে পতিত আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করে আসছিল বলেও অভিযোগ উঠেছে।
গুরুতর এমন অভিযোগের পর শনিবার ২০ সেপ্টেম্বর রাতে মেহেদীকে গ্রেফতার করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ।
সম্প্রতি মেহেদী চক্রের আর্থিক পৃষ্টপোষকতায় ‘শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা, জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ সম্বলিত পোষ্টার চাষাঢ়া, জেলা পরিষদ, নবীগঞ্জ ঘাট, জালকুড়ি স্ট্যান্ড, পুলিশ লাইন, জামতলা, খানপুর হাসপাতাল এলাকায় সাটানো হয়।
এমন ঘটনায় অনতিবিলম্বে এই সিন্ডিকেটকে গ্রেপ্তার দাবি জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহতদের পরিবারের স্বজনরা।
নিহতের পরিবার বলছেন, পতিত আওয়ামী লীগকে যারা পুনর্বাসন করতে প্রকাশ্যে এসব করছে প্রশাসন কেন তাদের আইনের আওতায় আনছে না?
এর পূর্বে গত শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) মধ্যরাতে সিদ্ধিরগঞ্জসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি স্থানে ওই পোস্টার সাঁটানো হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এমনই এক ভিডিওতে দেখা যায়, দেয়ালে পোস্টার সাঁটানোর পর নিজেরাই ভিডিও ধারণ করে ‘শেখ হাসিনাতেই আস্থা, জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিচ্ছেন। এমন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে।
দেয়ালে সাঁটানো পোস্টারে দেখা গেছে, শেখ হাসিনা ও শেখ মুজিবুর রহমানের ছবির পাশাপাশি শামীম ওসমানের ছবি সাথে যুবলীগ নেতা আনোয়ার হোসেন মেহেদীরও ছবি।
ওই পোস্টারে বড় করে লেখা ছিলো, ‘শেখ হাসিনাতেই আস্থা’ আর প্রচারে লেখা ছিলো ‘নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর মুক্তিবাহিনী।’
সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকা ছাড়াও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রধান ফটকের দেয়ালসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এসব পোস্টার সাঁটানো হয়েছে। বেশিরভাগ পোস্টারগুলো সাঁটানো হয়েছে বিএনপির পোস্টারের উপর।
কে এই মেহেদী :
সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইল এলাকার মৃত আফিরউদ্দিন মাতবরের ছেলে আনোয়ার হোসেন মেহেদী। তিনি দীর্ঘদিন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এই পরিচয়ে তেলচোরা মেহেদী খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সাবেক সাংসদ শামীম ওসমানের খুব ঘনিষ্টজন হয়ে যান।
পরবর্তীতে শামীম ওসমানের নাম ভাঙ্গিয়ে তিনি তার মালিকানাধীন মেসার্স মেহেদী এন্টার প্রাইজের আড়ালে দীর্ঘ দেড় যুগ যাবত চোরাই তেলের ব্যবসা করে আসছেন।
বর্তমানে এই মেহেদী ওই এলাকার তেল চোর সিন্ডিকেটের প্রধান বলে স্থানীয় পর্যায়ে ব্যাপক সমালোচনা ও গুঞ্জন রয়েছে।
স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে জাল দলিলের মাধ্যমে বিভিন্ন মানুষের জায়গা জমি আত্মসাতের সাথেও মেহেদীর জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
এমন গুরুতর অভিযোগে মেহেদী ও তার চক্রের বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও রয়েছে।
পাঁচ আগস্টের পর বেশ কিছুদিন আত্মগোপনে ছিলেন শামীম ওসমানের বিশ্বস্ত সহচর এই আনোয়ার হোসেন মেহেদী। সবশেষে তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী মামলাও হয়েছে। গত বছরের ২৪ অক্টোবর সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হাফেজ মো: হোসাইন আহম্মেদ (২০) নামে এক যুবককে হত্যা চেষ্টা মামলায় তাকে আসামী করা হয়। এই মামলায় তিনি ৬৮ নম্বর আসামী বলে নিশ্চিৎ হওয়া গেছে।
মেহেদী ও তার তাই ভাই লিটনের নিয়ন্ত্রণে চোরাই তেলের ব্যবসা :
শামীম ওসমান জ্বালানী তেলের ব্যবসা অংশিদার হিসেবে ব্যবসা করতো চেলচোর মেহেদী। আর এখন সেই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন মেহেদীর ভাই লিটন। লিটন সবাইকে বলে বেড়ায়, ‘আমি এসপিকে মাসে ৫ লাখ ও থানার ওসিকে প্রতি মাাসে ৩ লাখ টাকা দেই, যাহার কারণে আমার নামে ৫ আগস্টের পর কোন মামলা হয়নি।’
চোরাই এই ব্যবসা পরিচালনা করে লিটন হাজার কোটি টাকার মালিক হয়ে উঠেছে। আওয়ামীলীগ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য শামীম ওসমানের নির্দেশে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকায় অস্থির করার জন্য ষড়যন্ত্র করছে, কিছু দিন পূর্বে ঢাকার তেজগাওয়ে এলাকায় আওয়ামী লীগ এর পক্ষে যে মিছিল সংগঠিত হয় তার সমস্ত ব্যয় বহন করে লিটন।
জানা গেছে, মেহেদীর এমন কাজের জন্য নির্দেশ দেন শামীম ওসমান ও আজমেরী আসমান।
মেহেদী মামলা খেয়ে বর্তমানে পলাতক থাকলেও লিটনের নামে কোন “মামলা হয়নি কেন এ প্রশ্ন সকলের মুখে মুখে ঘুরপাক খাচ্ছে?
স্থানীয় সূত্র জানায়, লিটনের নেতৃত্বে বর্তমানে বাংলাদেশের সকল জ্বালানি তেলের চোরাই তেলের নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। চোরাই তেলের এই ব্যবসার অর্থ দ্বারা আওয়ামী লীগ এবং এসকল ব্যবসার অর্থ দ্বারা আওয়ামী লীগকে পুনরায় প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যয় করছে সেই অর্থ। লিটন বর্তমানে শামীম ওসমানের সকল সকল জ্বালানি তেল পরিবহন কাজে ব্যবহারকৃত জাহাজগুলো পরিচালিত হচ্ছে। একই সাথে তাহার নিয়ন্ত্রণে প্রায় ১০০ টিরও বেশি বিমানের জ্বালানী তেল পরিবহনের জন্য ট্যাংকলরী চলমান রয়েছে। চোরাই তেলের ব্যবসাসহ সকল ব্যবসা পরিচালনা করছে লিটন। আর আড়াল থেকে মেহেদী।