
যুগের নারায়ণগঞ্জ:
“নেতার দরকার টাকা এবং অপরাধীর দরকার ছায়া বা আর্শীবাদ ! সেই টাকার বদৌলতে আবারও সেই কুখ্যাত অপরাধী পাগলা হামিদ পুরানো কায়দায় চালিয়ে যাচ্ছে রাম রাজত্ব।”
৫ই আগষ্টের স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের পর দেশের পট পরিবর্তনে রাজনীতির নামে অপরাজনীতির মাধ্যমের অর্থ উপার্জনের কৌশল এভাবেই দৃশ্যমান হয়েছে সাধারন মানুষের সামনে।
দেশের প্রতিটা পাড়া মহল্লার চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সর্বত্রই শোনা যায়, দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি নেতারা নিজেদের অর্থ প্রচেষ্টায় আওয়ামী লীগের দোসরদের প্রতিষ্ঠিত করার মিশনে নেমেছে। প্রতিটি পাড়া-মহল্লাতেই ৫ আগষ্টের পর টাকার বিনিময়ে আওয়ামী দোসরদেরকে নিরাপদে এলাকা ছাড়তে সহায়তা আবার টাকার বিনিময়ে সেই দোসরদেরকে ভোলপাল্টাতে কার্যকরী ভুমিকা রাখছে অর্থলোভী কতিপয় নামধারী বিএনপি নেতৃবৃন্দ।
যার ফলে অন্তবর্তী সরকারকে বেকায়দায় ফেলার পাশাপাশি আওয়ামী দোসরদেরকেও পুর্নবাসনে গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা পালন করছেন উক্ত বিএনপি নেতৃবৃন্দরা।
সম্প্রতি সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও কারা নির্যাতিত নেতা জাকির খানের সাথে ফতুল্লা চাঁদনী হাউজিংয়ের চিহ্নিত সন্ত্রাসী হামিদ প্রধান ওরফে পাগলা হামিদের একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে। আর এই ছবি ভাইরাল নিয়ে সারা জেলাব্যাপী চলছে আলোচনা সমালোচনা ঝড়।
ফতুল্লা পঞ্চবটি চাঁদনী হাউজিংয়ের আব্দ গফুরের পুত্র হামিদ প্রধান ওরফে পাগলা হামিদ বিগত ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এলাকাবাসীর কাছে ছিল মুর্তিমান আতংকের নাম।
গডফাদার শামীম ওসমানের ভাতিজা অসংখ্য হত্যাসহ নানা অপরাধের মাষ্টার মাইন্ডার প্রয়াত এমপি নাসিম ওসমানের পুত্র আজমেরী ওসমানের পুরোপুরি সহায়তায় সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, ভুমি দখল, মাদকের সেল্টার, জুট সেক্টর ও অবৈধ গ্যাস সংযোগ নিয়ন্ত্রণ সহ বহু অপকর্মের হোতা এই আওয়ামী লীগ নেতার ছিল বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী। সন্ত্রাসী হামিদ বাহিনীর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতো পঞ্চবটী চাঁদনী হাউজিংসহ ফতুল্লার অনেক অঞ্চল। বিশেষ করে চাঁদনী হাউজিংয়ের বাড়ির মালিকরা ছিল তার সন্ত্রাসী বাহিনীর কাছে জিম্মি। পাগলা হামিদের সন্ত্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোললে তাদের উপর চলতো নির্যাতন ।
ফতুল্লার টোকাই থেকে বনে যাওয়া কুখ্যাত অপরাধী পাগলা হামিদ বাহিনীর নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে চাঁদনী হাউজিংয়ের অনেক বাড়িওয়ালা তাদের বাড়িঘর বিক্রি করে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। চাঁদনী হাউজিংয়ে জায়গা ক্রয় করে অথবা বিক্রি করলেও পাগলা হামিদ বাহিনীকে দিতে হতো মোটা অংকের চাঁদা। শুধু তাই নয় কেউ বাড়ি বানানোর উদ্যোগ নিলে বাধ্যতামুলক তার বাহিনীর কাছ থেকে চওড়া দামে কিনতে হতো রড, সিমেন্ট, বালু সহ নির্মাণ সামগ্রী।
এক সময় ট্যাক্সি ড্রাইভার হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করা হামিদ প্রধান ওরফে পাগলা হামিদ ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী সারাহ বেগম কবরী এমপি নির্বাচিত হলে তার গাড়ির ড্রাইভার হিসেবে কাজ করে সে ।
কিছুদিন ড্রাইভারী করার পর এমপি কবরীর আর্শিবাদ নিয়ে শুরু করে সন্ত্রাসী জীবন। সে সময় এমপি সারাহ বেগম কবরীর ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে অপকর্মের মাধ্যমে রাতারাতি অঢেল সম্পদের মালিক বনে যায় সে। সব ধরনের অপকর্মের সাথে নিজেকে জড়িয়ে রাতারাতি লাইম লাইটে চলে আসে সে। সারাহ বেগম কবরীর বিদায়ের পর সুযোগ সন্ধানী পাগলা হামিদ গডফাদার শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ আস্থাভাজন বড়ভাই আরেক কুখ্যাত অপরাধী লম্পট – জুয়ারী – মদতীখ্যাত ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম সাইফ উল্লাহ বাদলের কাছে ভীড়ে তার স্বঘোষিত ভাতিজা বনে যান সুচতুর পাগলা হামিদ।
সাইফ উল্লাহ বাদলের ভাতিজা বনে যাওয়ায় আগের চেয়ে বেড়ে যায় তার অপকর্মের মাত্রা। সাইফ উল্লাহ বাদলের নামে একের পর এক অপকর্ম করে পার পেয়ে যেত সে। এক সময় তার অপকর্মের মাত্রা এতটাই বেড়ে যায় সাইফ উল্লাহ বাদলকেও তাকে শেল্টার দিতে হিমশিম খেতে হয়েছে।
এই পাগলা হামিদ আওয়ামীলীগ সরকারের শাসনামলে ২০২২ সালের ২৯ আগষ্ট নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নুশরাত আরা খানমকে হত্যার হুমকি দিয়েও টিকে ছিলো ওসমানীয় শেল্টারে।
পরবর্তীতে পাগলা হামিদ সাইফ উল্লাহ বাদল কে ছেড়ে শেল্টার নেন গডফাদার শামীম ওসমানের ভাতিজা নারায়ণগঞ্জে অপরাধ জগতের ডনখ্যাত সন্ত্রাসী আজমেরী ওসমানের।
পাগলা হামিদ আজমেরী ওসমানের শেল্টার পেয়ে আগের চেয়ে আরো অনেক বেশি বেপরোয়া হয়ে ওঠে। জুলাই-আগষ্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে আজমেরী ওসমানের সাথে বিশাল গাড়ির বহর নিয়ে অস্ত্র-সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে শহর ও শহরতলীর বিভিন্নস্থানে মহড়া দেয় এবং নিরস্ত্র প্রতিবাদী ছাত্র-জনতার উপর নির্বিচারে গুলিও চালায় এই পাগলা হামিদ। বৈষম্যবিরোধী একাধিক মামলাও রয়েছে তার নামে।
সম্প্রতি পুলিশের কাছে গ্রেফতার হয়ে অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ দিয়ে কিছুদিন পরই জামিনে বের হয়ে দেশের বাহিরে চলে যায়।
এরপর একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, জেল থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে পাগলা হামিদ বিদেশে থাকাবস্থায় ভারতে অবস্থানরত আজমেরী ওসমানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে । এরপর কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হওয়া জাকির খানের সাথে মুঠোফোনের মাধ্যমে কথা হয় আজমেরী ওসমানের সাথে। পাগলা হামিদকে পুনরায় তার আগের অবস্থানে থাকতে জাকির খানের সহযোগিতা চেয়েছে আজমেরী ওসমানের মাধ্যমে। আজমেরী ওসমানের মাধ্যমে জাকির খানের সাথে ঘনিষ্টতা সৃষ্টি করে পাগলা হামিদ চাদঁনী হাউজিংয়ে তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে মহড়া দিচ্ছে পুরানো কায়দায় প্রতিনিয়ত।
নগরীতে চাউর রয়েছে কোটি টাকায় বিএনপির নেতাদের ম্যানেজ করে এবার সেই পাগলা হামিদ নানান অপরাধ করতে শেল্টার নিয়েছে।
জাকির খানের ব্যানারে পাগলা হামিদের নতুনরুপে চাদঁনী হাউজিংয়ে আগমনে সেখানে বসবাসকারী প্রতিটি মানুষের মাঝে নতুন করে আতংক দেখা দিয়েছে।