যুগের নারায়ণগঞ্জ:
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রতন নামে এক যুবককে গলাকেটে হত্যার মামলার প্রধান আসামি ইয়ানুছ (৪০)-কে কুড়িগ্রাম থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১১। বুধবার (২ জুলাই) সন্ধ্যায় কুড়িগ্রামের সদর উপজেলার আরাজী কদমতলা এলাকা থেকে যৌথ অভিযানে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত ইয়ানুছ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার বরাব মুগড়াকুল এলাকার মৃত নবুর ছেলে।
এর আগে গত ১৭ জুন (মঙ্গলবার) সকালে সোনারগাঁও উপজেলার ভারগাঁও এলাকার ওলামা নগর খালপাড়ের বেরিবাঁধের পূর্ব পাশ থেকে রতন (৩৮)-এর গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত রতন নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর এলাকার মো. মালেক মোল্লার ছেলে। তিনি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সোনারগাঁয়ের নাওড়া বিটা এলাকার দেলোয়ার হোসেনের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন।
স্থানীয়রা জানায়, খালপাড় এলাকায় রক্তাক্ত অবস্থায় লাশ পড়ে থাকতে দেখে তারা পুলিশকে খবর দেয়। পরে সোনারগাঁও থানা পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। নিহতের বিচারের দাবিতে এলাকাবাসী মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করে।
ঘটনার পর নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে সোনারগাঁও থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর র্যাব-১১ নারায়ণগঞ্জ ও র্যাব-১৩ রংপুর যৌথভাবে ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং অভিযানে নামে।
জিজ্ঞাসাবাদে ইয়ানুছ র্যাবকে জানায়, নিহত রতনের সঙ্গে তার পূর্ব পরিচয় ছিল এবং দুজনই মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই বছর আগে তাদের মধ্যে মারামারি হয়, যাতে রতন আহত হন। ঘটনার ১৫ দিন আগেও তাদের মধ্যে নতুন করে বিরোধ দেখা দেয়। এর জেরে ইয়ানুছ হত্যার পরিকল্পনা করে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, এজাহারনামীয় ৩ নম্বর আসামি হাসেম (৪০) এবং ৪ নম্বর আসামি ইলিয়াছ (৩০)-এর সহযোগিতায় ১৭ জুন ভোর সাড়ে ৩টায় রতনকে ডেকে নিয়ে মারধর ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা এবং হাত-পায়ের রগ কেটে হত্যা করা হয়। এরপর মরদেহ খালে ফেলে তারা পালিয়ে যায়। এই ঘটনায় মোট ৮ জন অংশ নেয় বলে জানিয়েছে র্যাব।
র্যাব আরও জানায়, ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মামলার ৫, ৬ ও ১১ নম্বর আসামিকে গ্রেফতার করে তারা। গ্রেফতারের সময় হত্যায় ব্যবহৃত একটি ছুরি ও প্রমাণ লোপাটে ব্যবহৃত সাদা ও কালো রঙের দুটি বালতিও উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে ৫ নম্বর আসামি ওসমান (৩২) আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
প্রধান আসামি ইয়ানুছ জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানায়, গ্রেফতার এড়াতে সে পার্শ্ববর্তী দেশে পালানোর চেষ্টা করছিল এবং সেই উদ্দেশ্যেই সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থান করছিল।
ইয়ানুছের বিরুদ্ধে রূপগঞ্জ থানায় পূর্বেও একটি হত্যাচেষ্টা মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব। তাকে সোনারগাঁও থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। এখন পর্যন্ত এই ঘটনায় র্যাবের অভিযানে মোট চারজন আসামি গ্রেফতার হয়েছে।