যুগের নারায়ণগঞ্জ:
সূর্য যেন আগুন বর্ষণ করছিল। তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি ছুঁইছুঁই, রাস্তার পিচ গলে যাওয়ার উপক্রম। কিন্তু ফতুল্লার ডিআইটি মাঠে মানুষের ঢল দেখে মনে হচ্ছিল, গরম নয়, যেন ইতিহাসের দাবদাহে জ্বলছে উপস্থিত সবাই। ২০০৮ সালের সেই রক্তঝরা দিন থেকে ২০২৫—দীর্ঘ ১৭ বছরের বিরতির পর ফতুল্লা বিএনপি ফিরে এল তাদের ঐতিহাসিক এই মাঠে। আর সেই ফিরে আসাকে ঘিরে তৈরি হলো এক অবিশ্বাস্য জনসমুদ্র।
সমাবেশস্থলে পানির বোতল হাতে দৌড়াদৌড়ি করছিলেন স্বেচ্ছাসেবকরা। অনেকেই লবণ-পানি খেয়ে রোদ সহ্য করছিলেন। কিন্তু ক্লান্তি কোথাও চোখে পড়েনি।
সকাল থেকেই মাঠে ভিড় শুরু। দুপুরের তীব্র রোদে পুড়তে পুড়তে একে একে ভরে উঠেছে মাঠ। অনেকের হাতে বিএনপির পতাকা, কারো গায়ে লেখা 'খালেদা জিয়া জিন্দাবাদ'। ২০০৮ সালের সেই উত্তাল দিনের স্মৃতি নিয়ে এসেছেন অনেকেই।
কাশিপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আরিফ মন্ডল বলেন, "চৈত্রের তুখর রোদ কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারেনি জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি নেতা কর্মীদের, কারণ দীর্ঘদিন পরে তারা ফতুল্লা থানায় সমাবেশ করার সুযোগ পেয়েছে। এটা যেন ফতুল্লা বিএনপির নবজাগরণ। "
জেলা আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ বলেন, "বেগম জিয়ার আদর্শই আমাদের পথ দেখাচ্ছে। তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা দৃঢ়।" প্রধান বক্তা মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু সরাসরি হাসিনা সরকারের উন্নয়ন দাবিকে চ্যালেঞ্জ করে বলেন, "ফতুল্লার মানুষ নৌকায় করে অফিসে যায়, এটা উন্নয়ন নয়।
ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শহীদুল ইসলাম টিটু, সম্পাদক রিয়াদ চৌধুরী, সাবেক ছাত্রনেতা নাহিদ হাসান ভূঁইয়াসহ জেলার সকল স্তরের নেতাকর্মীরা সমাবেশে অংশ নেন। বিশেষভাবে নজর কেড়েছে সোনারগাঁ থানা সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নানের জোরালো উপস্থিতি।
যেভাবে সকালের প্রখর রোদে শুরু হয়েছিল সমাবেশ, দুপুর গড়াতেই তা পরিণত হয়েছিল এক ঐতিহাসিক জনসমুদ্রে। ফতুল্লার এই জমায়েত যেন বলছে, "গরমে নাভিশ্বাস উঠলেও, রাজনৈতিক আশার প্রদীপ নিভে যায়নি।" যেভাবে সূর্যের তাপ উপেক্ষা করে লাখো মানুষ মাঠে ভিড় করেছিল, তেমনই যেন সব প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে এগিয়ে যাবে তাদের সংগ্রাম। আগামী দিনের রাজনীতির মাঠই হয়তো দেবে এর সত্যিকারের উত্তর।