যুগের নারায়ণগঞ্জ:
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সদ্য সাবেক সভাপতি ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিনের একটি বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির একাংশের উদ্যোগে আয়োজিত নৌবিহারে দেয়া বক্তব্যটি ভাইরাল হয়।
ভাইরাল ওই বক্তব্যে গিয়াস উদ্দিন বলেছেন, ‘বিএনপিত গণতন্ত্র নেই, আবার গণতন্ত্রের জন্য সারা দিন চিৎকার করে বিএনপি।’
তিনি বলেন, ‘কেন্দ্র থেকে ‘অ্যাপায়নটেড’ নেতা দয়ায় হয়। তৃণমূলের কর্মীরা তাদের নেতা নির্বাচন করতে পারে না। যদি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দল চলতো তাহলে যে কর্মীরা আজকে হতাশা নিয়ে বক্তব্য দিয়েছন, তাদর হতাশা বা দুঃখ থাকতো না। গণতন্ত্র চর্চা না থাকায় আজকে নেতাদের কাছ কর্মীদর কোনো মূল্যায়ন নেই।’
গিয়াস উদ্দিনের বক্তব্য এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এ নিয়ে চলছে তীব্র আলাচনা-সমালাচনা।
গিয়াসউদ্দিন তার বক্তব্যে বিএনপির কড়া সমালোচনা করে বলেন, ‘বিএনপিতে গণতান্ত্রিক চর্চা না থাকায় প্রকৃত নেতাদের কোনো মূল্যায়ন নেই। যে নেতা হয় সে স্বৈরশাসক হয়ে যায়। কারণ তার কোনো জবাবদিহিতা নেই। দলের ভেতর নেই গণতন্ত্র আর দল সারা দিন চিৎকার পারবা আমরা রাষ্ট্র গণতন্ত্র চাইবা- এই চাওয়াটাওতা অন্যায়। যখান নিজের দলে গণতন্ত্র নেই, সেখানে রাষ্ট্রের কাছ গণতন্ত্র চাই! গঠনতন্ত্র তৈরি হয়েছে দল পরিচালনার জন্য। সেখান লেখা আছে- সর্বস্তরের কমিটি নির্বাচিত হতে হবে কাউন্সিলরর ভোটের মাধ্যমে। এই যে অধিকার আমাদের না দিয়ে অ্যাপায়নটেড নেতা বানানো হয়। কেন্দ্র থেকে নিয়োগ দেয়া হয়। যেন দল নয়, চাকরি করি, গোলামি করি। কারোর দাসত্ব করি আমরা। নিয়োগ দেয়া হলে ওই বাড়িতে ফুল দিয়ে ভরে যায়। কারণ যে অ্যাপায়নটেড হয়েছে তার বাড়িত ফুল নিয়ে যাবে, সে যেন আবার কোনো একটা পদ অ্যাপায়নটেড হতে পারে। নির্লজ্জ বেহায়ার মতো অনেক সিনিয়র নেতাকে জুনিয়রর কাছে তোষামাদি করতে হয়। এভাবে চলতো পারে না একটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ। আপনাদের সামনে আমি খোলাখুলি আলাপ করছি এজন্য আমি বহিষ্কার হতে পারি- ‘আই ডোন্ট কেয়ার’। আমি একজন মুক্তিযাদ্ধা। জীবন বাজি রেখে দেশ স্বাধীন করেছি এই রাজনীতিক কারো কাছে শৃঙ্খলাবদ্ধ করার জন্য না, কারো কাছে মালিকানাস্বত্ত্ব দেয়ার জন্য না। সৎ মানুষের নেতৃত্বে তখনি প্রতিষ্ঠিত হবে যখন ভোট দিয়ে কর্মীরা নেতা নির্বাচন করতে পারবে।’
মনোনয়ন প্রসঙ্গে জেলা বিএনপির সাবেক এ সভাপতি বলন, ‘মনোনয়ন নিয়ে কি হয় আপনারা জানেন? মনোনয়ন বিক্রি হয়। কোটি কোটি টাকা মনোনয়ন বিক্রি হয়। এই দেশ এজন্য আমরা স্বাধীন করেছি? এজন্য আমরা আন্দোলন-সংগ্রাম করি? নিশ্চয়ই না। ভালো মানুষের কোনো অভাব নেই বিএনপি বা অন্য দল। কি ভালো মানুষের টাকা না থাকলে সমস্যা। সে নমিনেশন পাবে না। কারণ কি টাকার গাট্টি নিয়ে দিতে হবে। বিক্রি হয় নমিনশন। এমন রাজনীতি যদি থাকে তাহলে বাংলাদেশের আকাশে কখনো নতুন সূর্য উদয় হবে না।’
নিজ দলের বিরুদ্ধে এমন কড়া সমালাচনা করায় এক দিক যেমন বাহবা কুড়াচ্ছেন, আরেক দিক সহ্য করতে হচ্ছে সমালোচনা। কারণ বিলুপ্ত হওয়া জেলা বিএনপির কমিটিতে সভাপতি পদ গিয়াসউদ্দিন নিজে ও ভোট নির্বাচিত হননি।
সম্মলনের আয়াজন করলেও কাউন্সিলররা ভোট দিতে পারেননি। সভাপতি পদ গিয়াসউদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক পদ গোলাম ফারুক খোকনের না সে দিন কেন্দ্রীয় নেতারা ঘোষণা করে দিয়ে গিয়েছিলেন। তার মেয়াদকাল বিভিন্ন উপজেলা, থানা ও পরে কমিটিগুলাতেও নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্র কোনো ভোট হয়নি। নিজের পছন্দের লোকদের দিয়ে ওয়ার্ড থেকে শুরু করে ইউনিয়ন কমিটি সাজিয়েছিলেন। ত্যাগীদর অবমূল্যায়নর অভিযোগ আছে গিয়াসউদ্দিনর বিরুদ্ধেও।
তাছাড়া তিনি নারায়ণগঞ্জে দলছুট পল্টিবাজ নেতা হিসেবেই সর্বমহলে পরিচিত। তিনি বিএনপি থেকে নমিনেশন পাবে না জেনে নিশ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র বা অন্য কোনো দল থেকে নির্বাচন করবে বলেই এ দলের বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করেছেন বলে তার ঘনিষ্ঠ একাধিকজন জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ জানান, তিনি (গিয়াসউদ্দিন) যে বক্তব্য দিয়েছেন তা তার ব্যক্তিগত এবং দলীয় গঠনতন্ত্রবিরোধী। তিনি দলের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন। দলীয় কেন্দ্রীয় নীতি নির্ধারকরা ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জেনেছেন। দলীয় শীর্ষ নীতি নির্ধারকরাই তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
সূত্র-নয়া দিগন্ত