যুগের নারায়ণগঞ্জ:
পুলিশকে অপরাধীদের ধরতে গেলে সোর্সের প্রয়োজন হয়। কিন্তু পুলিশকে সহযোগিতার নামে যদি সোর্সরাই নানামুখী অপরাধে জড়িয়ে পড়ে তাহলে সেক্ষেত্রে সাধারন জনগনের ভোগান্তির কোন শেষ থাকেনা। অতীতে কথিত সোর্সদের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা, চুরি, ব্ল্যাকমেইলিংয়ের অভিযোগ থাকলেও এবার নিজেদেরকেই পুলিশ পরিচয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে নগদ অর্থ, স্বর্নালংকার এমনকি মোবাইল ফোন। এমনই গুরুতর অভিযোগ উঠেছে ফতুল্লা মডেল থানার চিহ্নিত পুলিশ সোর্স আলমগীর এবং রনিসহ তাদের সহযোগী চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী নারু সোহেলের বিরুদ্ধে। গত ১৪ জুলাই রোববার দুপুরে ফতুল্লার চাঁদনী হাউজিং ওয়ালটন শোরুমের সামনে থেকে পুলিশ পরিচয়ে আমির নামের এক যুবককে মাদক ব্যবসায়ী আখ্য দিয়ে সাথে থাকা ৩৪,০০০/- টাকা নিয়ে হোন্ডাযোগে চলে আসেন ফতুল্লা পুলিশের চিহ্নিত সোর্স আলমগীর, রনি এবং তাদের সহযোগী নারু সোহেলের বিরুদ্ধে। ঘটনার সত্যতা ফতুল্লার চাঁদনী হাউজিং ওয়ালটন শোরুমের সিসি ক্যামেরা পর্যালোচনায় পাওয়া যাবে বলে ভোক্তভোগী যুবক জানান। এদিকে, বিষয়টি ভোক্তভোগী যুবক পুলিশ পরিচয়ে টাকা হাতিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশকে অবহিত করার চেষ্টা করলে পুলিশ সোর্স আলমগীর এবং রনি থানা গেইটের সামনে বিভিন্ন ধরনের হুমকি ধামকি প্রদান করে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এদিকে, পুলিশ পরিচয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়ে পুলিশ সোর্স রনি এবং আলমগীরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তাদের বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ অস্বীকার করেনো, তবে তাদের অপর সহযোগী মাদক ব্যবসায়ী নারু সোহেলের সাথে যোগাযোগ করা হলে পুলিশ পরচয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন এবং হাতিয়ে নেয়া অর্থ ফেরত দিবে বলেও জানান। (কল রেকর্ড এ প্রতিবেদকের সংরক্ষিত রয়েছে)।
সূত্রমতে, মাদক ও অপরাধ নির্মুলে পুলিশের পাশাপাশি সোর্সদের ভুমিকাও কোন অংশে কম নেই কিন্তু পুলিশের সাথে প্রচুর সখ্যতা থাকার সুবাদে সোর্সরাই এখন ফতুল্লা থানা এলাকাতে বিভিন্নস্থানে গড়ে তুলেছেন বিশাল মাদকের স্পট ও সিন্ডিকেট। এ যেন শর্ষের ভেতরে ভুতের বসবাস ? ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের সার্বিক সহযোগিতায় কথিত সোর্সদের অনৈতিক কর্মকান্ডগুলো সাধারন মানুষের মাঝে নাভিশ্বাসের কারন হয়ে দাড়িয়েছে। ডিউটিবিহীন কতিপয় পুলিশ সদস্যরা সিএনজি বাহিনীর মাধ্যমে আইনশৃংখলা বাহিনীর উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের অনুমতিবিহীন চালাচ্ছে ফতুল্লার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান। অভিযানে পুলিশ কর্মকর্তারা পুলিশ সদস্যদের চাইতে ব্যবহার করছে নিয়োজিত সোর্সদের। সোর্সদের নিকট অবৈধভাবে হ্যান্ডকাপ প্রদান করে ফতুল্লা থানার তালিকাভূক্ত বিভিন্ন অপরাধীদের গ্রেফতারে সক্ষম হলেও অবৈধপন্থায় অর্থের বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। ফলে একদিকে যেমন ক্ষুন্ন হচ্ছে পুলিশের ভাবমূতি সে সাথে ফতুল্লা মডেল থানার বিচক্ষন অফিসার ইনচার্জ কামালউদ্দিনের অর্জিত সুনাম বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ফলে অভিযানের নামে সিএনজি বাহিনীর অভিযান বন্ধ করাসহ সোর্সদের দৌরাত্ব বন্ধের জন্য জেলা পুলিশ সুপার মঙ্গনুল হক এবং ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নূরে আযমের জরুরী ভিত্তিতে হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
পুলিশকে একটি কাজ দিতে পারলেই শতকরা ২০ ভাগ অর্থ পাওয়া যায় অথ্যাৎ প্রতি লাখে ২০ হাজার টাকা। সম্পুর্ন বিনে পয়সার এ ব্যবসাটি অত্যন্ত আগ্রহের সাথেই লুফে নিচ্ছে সোর্স নামধারী চিহিৃত অপরাধীরা। ফতুল্লা থানাধীন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বিভিন্ন বয়সী মানুষের সাথে আলাপকালে জানা যায় ব্যতিক্রমধর্মী অনেক কথাবার্তা।
ফতুল্লা পাইলট স্কুলের এক বাসিন্দা জানান, উক্ত এলাকার আশপাশের মাদক বিক্রেতাদের না ধরিয়ে দিয়ে সাধারন সেবনকারীকে ধরিয়ে দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে পুলিশ সোর্স আলমগীর এবং রনি। তাদের অনেকের মতে সোর্সরাই যেন প্রজাতন্ত্রের দেশে নিরীহদেরকে হয়রানী করার জন্য আরেকটি বাহিনী যা কিনা শুধু অসাধু পুলিশরাই নিয়ন্ত্রন করে থাকেন তাদের আর্থিক সুবিধার্থে। সূত্রে জানা যায়, যেই পুলিশ সোর্স দিয়ে অপরাধ দমন করা হয় সেই পুলিশ সোর্সরাই অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। কার্যত এখন পুলিশ সোর্সরাই চালাচ্ছে ফতুল্লা থানার কার্য্যক্রম। ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ কর্মকর্তারা হয়ে পড়ছেন সোর্স নির্ভরশীল। ফতুল্লাা পুলিশের সোর্সদের দৌরাত্ব হয়রানি, চাঁদাবাজি উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে গেছে। এতে থানা পুলিশের ভাবমূর্তি মারাত্মক ক্ষুন্ন হচ্ছে। সোর্সদের দৌরাত্বে থানার কার্যক্রম বেহাল হয়ে পড়েছে। ফতল্লা থানার সোর্সরাই এখন বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজিতে নেমে পড়েছে। অনেক ক্ষেত্রে তারা নিজেদের পুলিশ সদস্য পরিচয় দেন। আর এ ক্ষেত্রে থানা এলাকার সাধারণ মানুষ তাঁদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। ফতুল্লাবাসী মনে করেন, পুলিশ সোর্সদের বিতর্কিত কর্মকান্ডে পুলিশের ভাবমূতি ক্ষুন্ন হচ্ছে তেমনী এর জন্য দায়ী পুলিশ সদস্যরাই। তাই বিতর্কিত উল্লেখিত সোর্সদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা পুলিশ সুপারের জরুরী ভিত্তিতে হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ ব্যাপারে ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ নূরে আযম জানান, সোর্সদের বিষয়ে এখনো কেউ অভিযোগ করেননি। তবে সুনিদিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। যেহেতু সোর্সদের বিষয়ে বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে তিনি জানান। এমনকি, পুলিশ পরিচয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়টি এমাত্রই তিনি জেনেছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে এই দুই সোর্সের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে এমনকি অভিযুক্ত এই দুই সোর্স থানার কোন অফিসারের সাথে কাজ করে কিনা তাও খোঁজ নেয়া হচ্ছে।