বন্দর(নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন থেকে দুই চেয়ারম্যান পদ প্রার্থীকে সরে দাঁড়ানো নিদের্শ দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসামন। প্রার্থীরা হলেন, জেলা জাতীয় পার্টির সহ সভাপতি ও বন্দরের মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন ও দুই বারের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক (বহিস্কৃত) আতাউর রহমান মুকুল। এসময় উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা এমএ রশীদকে পুনরায় উপজেলা চেয়ারম্যান হতে সমর্থন দেন । শনিবার ধামগড় ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে জাতীয় পার্টির কর্তৃক আয়োজিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনী মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমপি সেলিম ওসমান প্রতিদ্বন্দ্বীদের এ হুশিয়ারি দেন। আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে এম এ রশীদকে একক প্রার্থী ঘোষণা করে পূর্ণ সমর্থন দিয়ে এমপি সেলিম ওসমান বিরুপ বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে বন্দর উপজেলা জনসাধারণ অসন্তোষ প্রকাশ করে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের কর্মী সমর্থকরা রয়েছে আতংকে।
এমপি সেলিম ওসমান বলেন, জাতীয় নির্বাচন শেষে সব চেয়ারম্যানকে নিয়ে আমি বসেছিলাম আমার অফিসে। সবাই উপজেলা নির্বাচন করতে চায়। আমি বলেছি পুরোনো দুই জনকে সমর্থন দেব। সেটা রশিদ ভাই আর সানু (বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান)। এখন দুই জন আমার অমতে নির্বাচন করার চিন্তা ভাবনা করছেন। একজন নিজেই বলেন ‘রাজাকার সন্তান’। আমি বলেছি, মানুষের জন্য কাজ করো, বাব দাদার পাপ ভুলে যাও। পাপে বাপেরেও ছাড়ে না। মাকসুদ সাহেব, আপনি আল্লাহর কাছে মাফ চান। নিজ দায়িত্বে ফিরে আসুন। আমি আপনাকে কিছু বলব না। তবে মনে রাখবেন আমরা মুক্তিযোদ্ধা। যদি ভালোয় ভালোয় কথা শোনেন তো শুনবেন, না হলে মুগুর কীভাবে বানাতে হয় সেটা আমরা জানি। মুগুরের মাধ্যমেই আপনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হবে। আপনি আগামীকাল নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন। আপনার সঙ্গে চারজন চেয়ারম্যান যেভাবে আমার কথা শুনেছে, আপনিও সেই পথে আসেন।
সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মুকুলের উদ্দেশ্যে এমপি সেলিম ওসমান বলেন, আরেকজন আমার অত্যন্ত প্রিয়। তিনি রশিদ ভাইয়ের আগে এখানে চেয়ারম্যান ছিলেন। উনাকে তার দল বহিষ্কার করেছে। উনি আমার কাছে গিয়ে শুনতে চেয়েছিলেন আমার মতামত। আমি তাকে বলেছি, আপনাকে মানুষ ভালোবাসে সন্দেহ নাই। আপনি মুরুব্বি হিসেবে থাকেন। আপনাকে বিভিন্ন স্কুলের সভাপতি বানিয়ে দিয়েছি। আপনি মানসম্মান নিয়ে বাকি জীবনটা কাটান। আর আপনি রাজনীতির পথে হাঁটিয়েন না। আমি সরাসরি বলছি, মুকুল আমার ছোট ভাই। আপনি এই পথ থেকে সরে দাঁড়ান।
দুই প্রার্থীকে প্রকাশ্যে সরে দাঁড়াতে বলার বিষয়টি নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার জন্ম দিয়েছে এবং প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে । এমপি সেলিম ওসমানের বক্তব্যের বিরুদ্ধে মাকসুদ হোসেন ও আতাউর রহমান মুকুল সাংবাদিকদের কাছে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি ধীমান সাহা জুয়েল বলেন, একজন আইনপ্রণেতা কিছুতেই দেশের কোনো নাগরিককে নির্বাচন থেকে সরে যেতে বলার নির্দেশনা বা চাপ দিতে পারেন না। দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যোগ্যতাসম্পন্ন সকলের নির্বাচন করার সুযোগ আছে। একজন আইনপ্রণেতার এমন বক্তব্যে স্পষ্ট যে তিনি চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে তার পছন্দের প্রার্থীকে জয়লাভ করাতে চাচ্ছেন। দেশের নির্বাচন কমিশন যে শক্তিশালী নয় তা এই ঘটনায় আরও বেশি সুস্পষ্ট হলো।
আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে আগ্রহী বেশ কয়েকজন। ইতিমধ্যে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। এদের মধ্যে রয়েছে, বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ রশিদ, সাবেক দুইবারের উপজেলা চেয়ারম্যান ও মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আতাউর রহমান মুকুল, জেলা জাতীয় পার্টির সহ সভাপতি ও বন্দরের মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফিয়ান।