আজ আমরা ১০-২০-৫০ টাকা দান করে অহংকার অহমিকায় লিপ্ত হয়ে যাই। মনে ভাবি না জানি কত টাকা দান করে কত বড় দানবীর হয়ে গেছি। দুই চার হাজার দান করতে খুব কষ্ট অনুভব করি।
আমরা কি কখনো খোঁজ নিয়ে জানার চেষ্টা করেছি সাহাবীগণ কেমন দান সাদকা করতেন??
ইবনে উমার (رضي الله عنه) বলেন– “ইসলাম গ্রহনের সময় হযরত আবু বকর (رضي الله عنه)’র নিকট ৪০ হাজার দিরহাম বা ৫৫৬০০০০ টাকা ছিলো। (দিরহামের আজকের বাজার মূল্য ১৩৯ টাকা হিসেবে) আর হিজরতের সময় ৫ হাজারের বেশি ছিল না। বাকি সব দিরহাম তিনি ইসলামের সাহায্যে এবং মুসলমান গোলাম কিনে আযাদ করার পেছনে ব্যয় করেছেন।”
(ইবনে সাইদ সূত্রে তারিখুল খুলাফায় বর্ণিত)। অর্থাৎ, হিজরতের পূর্বে তিনি প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা ইসলামের জন্য ব্যয় করেন। সুবহানআল্লাহ!!
রুমা কূপ মদিনার সুপেয় পানি সরবরাহের সবচেয়ে বড় মাধ্যম ছিল। হযরত উসমান (رضي الله عنه) তা ৩৫ হাজার দিরহামের বিনিময়ে। অর্থাৎ, ৪৮ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছিলেন।
হযরত তালহা (رضي الله عنه) এবং হযরত উসমান (رضي الله عنه) থেকে ৫০ হাজার দিরহাম। অর্থাৎ, প্রায় ৭০ লক্ষ টাকার কর্জ নিয়েছিলেন যা পরে হযরত উসমান (رضي الله عنه) মওকুফ করে দিয়েছিলেন।
তাবুক যুদ্ধে হযরত উসমান (رضي الله عنه) তার সম্পদের ৩ ভাগের ১ ভাগ দান করে দিয়েছিলেন। ৯৪০ টি উট ও ৬০ টি ঘোড়ার পাশাপাশি ১০ হাজার দিনার দান করেছিলেন তিনি।
(১ দিনার এর স্বর্ণের আজকের বাজার মূল্য ১৫৩৩১ টাকা) ১০ হাজার দিনার অর্থাৎ, ১৫ কোটি ৩৩ লক্ষ ১০ হাজার টাকা।
সবচেয়ে ধনী মুসলিম সাহাবী আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (رضي الله عنه) তাবুক যুদ্ধে ৮ হাজার দিনার দান করেন। অর্থাৎ, ১২ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা।
তিনি তার একটি জমি ৪০ হাজার দিনারে অর্থাৎ প্রায় ৬১ কোটি টাকায় বিক্রয় করেন এবং পুরো অর্থ আল্লাহর রাস্তায় দান করে দেন। তিনি সাহাবীদের মধ্যে সবচেয়ে ধনী ছিলেন।
এছাড়াও তিনি ৪০ হাজার দিরহাম। অর্থাৎ, ৫৬ লক্ষ টাকা, মুজাহিদদের জন্য ৫০০ ঘোড়া, ১৫০০ উট দান করেছিলেন।
জীবিত বদরি সাহাবী ও আম্মাজানদের জন্য ৪০০ দিনার অর্থাৎ ৬২ লক্ষ করে হাদিয়া দিয়েছিলেন।
এছাড়াও তিনি ২০০ আউকিয়া বা অক্কা দান করেছিলেন। ১ অক্কা = ১২৮.৩ গ্রাম স্বর্ণ। সে হিসাবে তিনি প্রায় ১০ কোটি টাকা আল্লাহর রাস্তায় দান করেছিলেন। এসব হলো ইতিহাসে পাওয়া সাহাবীদের বদান্যতার উদাহরণ আর তাদের গোপনে দান করা টাকার পরিমান কত ছিল তা মহান আল্লাহ জানেন।
এতো দানের কারণে কি তার সম্পদ কমে গিয়েছিলো?? মোটেও না। বরং বেড়েছিলো পাহাড়ের সমান।
আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রাযিয়াল্লাহু আনহুর ইন্তেকালের সময় তার সম্পদের পরিমাণ এত বেশি ছিল যে আজকের যুগেও মানুষ অবাক হয়।
তিনি ইন্তেকালের সময় ৩১০,৩০,০০,০০০ (৩১০ কোটি ৩০ লক্ষ) দিনার রেখে যান। এটার বর্তমান মূল্য হল (৩১০,৩০,০০,০০০ × ১৫৩৩১) = ৪৭,৫১,০০৩,৩০,০০,০০০ (অর্থাৎ, ৪৭ লক্ষ ৫১ হাজার ৩ কোটি ৩০ লক্ষ) টাকা। ডলারের হিসাবে এটার মূল্য ৫০১ বিলিয়ন ডলার। ২০১৭ সালে বিল গেটসের মোট সম্পত্তি ছিল মাত্র ৮৬ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালের রিপোর্টে জেফ বেজস এর মোট সম্পত্তি ১৯৭ বিলিয়ন ডলার মাত্র।
সুতরাং আসুন!!
এই পবিত্র মাহে রমাদানে আমরাও আমাদের দান, যাকাত, ফিতরা ও নফল সাদাকার পরিমাণ বাড়িয়ে দেই।
আল্লাহ আমাদের সকলকে তাওফীক দান করুক।
#আমিন_সুম্মা_আমিন...🤲🥀