#আজকের_প্রসঙ্গঃ মুরিদ কি?? এবং কাকে বলে??
“মুরীদ” হলো ﻣﺮﻳﺪ – ﻳﺮﻳﺪ - ﺍﺭﺍﺩ আভিধানিক #অর্থঃ ইচ্ছাপোষনকারী, সংকল্পকারী, আনুগত্য পোষন কারী। কুরআন ও হাদীস শরীফে মুরীদ হওয়ার বিষয়টি এসছে ﺑﻴﻌﺔ “বায়আত” নামে।
বায়আত প্রসঙ্গে কুরআনুল কারীমের মধ্যে আল্লাহ বলেন–
ﺇِﻥَّ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳُﺒَﺎﻳِﻌُﻮﻧَﻚَ ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﻳُﺒَﺎﻳِﻌُﻮﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻳَﺪُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻓَﻮْﻕَ ﺃَﻳْﺪِﻳﻬِﻢْ ﻓَﻤَﻦْ ﻧَﻜَﺚَ ﻓَﺈِﻧَّﻤَﺎ ﻳَﻨْﻜُﺚُ ﻋَﻠَﻰ ﻧَﻔْﺴِﻪِ ﻭَﻣَﻦْ ﺃَﻭْﻓَﻰ ﺑِﻤَﺎ ﻋَﺎﻫَﺪَ ﻋَﻠَﻴْﻪُ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻓَﺴَﻴُﺆْﺗِﻴﻪِ ﺃَﺟْﺮًﺍ ﻋَﻈِﻴﻤًﺎ
#অনুবাদঃ “যারা তোমার বাইয়াত গ্রহন করে তারা তো আল্লাহরই বায়আত গ্রহন করে। আল্লাহর হাত তাদের হাতের উপরে সুতরাং যে ওটা ভঙ্গ করে ওটা ভঙ্গ করার পরিনাম তারই এবং যে আল্লাহর সাথে ওয়াদা পূর্ন করে তিনি তাকে মহা পুরষ্কার দেন।”
#তথ্যসূত্রঃ [সূরা ফাতহ : ১০]
রাসূলে পাক (ﷺ) এর যুগে যে বাইয়াত ছিল তা হলো বাইয়াতে রাসূল (ﷺ)। খিলাফাতের যুগে ছিল বাইয়াতে খিলাফাহ। খিলাফাতের পর যে বাইয়াতের প্রচলন শুরু হয় তা হলো বাইয়াতে তাকওয়াহ। তাকওয়া অর্জনের জন্যে রাসূল (ﷺ) সাহাবীদেরকে এ ধরনের বাইয়াত করিয়েছেন। মুসলিম শরীফের হাদীস “আওফ ইবনে মালেক আসজাঈ (رضي الله عنه ) বলেছেন– আমাদের সাত বা আট বা নয়জন লোকের উপস্থিতিতে রাসূল (ﷺ) বললেন– তোমরা কেন রাসূল (ﷺ) এর নিকট বাইয়াত হচ্ছো না?? অথচ আমরা ইতিপূর্বে বাইয়াত গ্রহনের সময় আমরা তাঁর হাতে বাইয়াত গ্রহন করেছি। আমরা বললাম– আমরা তো আপনার কাছে বাইয়াত গ্রহন করেছি। তিনি আবার বললেন– তোমরা কেন রাসূল (ﷺ) এর নিকট বাইয়াত গ্রহন করছ না?? আমরা আবার বললাম– আমরা তো আপনার কাছে বাইয়াত গ্রহন করেছি। তিনি পুনরায় বললেন– তোমরা কেন রাসূল (ﷺ) এর নিকট বাইয়াত গ্রহন করছ না?? বর্ননা কারী বলেন– এবার আমরা হাত বাড়িয়ে দিলাম এবং বললাম– আমরা তো ইতিপূর্বে আপনার নিকট বাইয়াত গ্রহন করেছি এখন আবার আপনার কাছে কিসের বাইয়াত গ্রহন করব??” রাসূল (ﷺ) বললেন–
ﻗﺎﻝ ﻋﻠﻰ ﺃﻥ ﺗﻌﺒﺪﻭﺍ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﻻ ﺗﺸﺮﻛﻮﺍ ﺑﻪ ﺷﻴﺌﺎ ﻭﺍﻟﺼﻠﻮﺍﺕ ﺍﻟﺨﻤﺲ ﻭﺗﻄﻴﻌﻮﺍ ( ﻭﺃﺳﺮ ﻛﻠﻤﺔ ﺧﻔﻴﺔ ) ﻭﻻ ﺗﺴﺄﻟﻮﺍ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﺷﻴﺌﺎ
“তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো তার সাথে কাউকে শরীক করো না। পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করো এবং আল্লাহর আনুগত্য করো। তিনি আরো একটি কথা বললেন চুপে চুপে তা হলো লোকের কাছে কোন কিছুর জন্যে হাত পাতবে না।”
এ হাদীস থেকে স্পষ্ট প্রমানিত হয় যে, ইসলামের হুকুম আহকাম পালনের ব্যাপারে দৃঢ় থাকতে এবং তাকওয়া অর্জন করে মুত্তাকী হতে বাইয়াত গ্রহন করা উচিত।
বুখারী শরীফ কিতাবুল আম্বীয়ার মধ্যে হাদীস এসেছে–
ﻻ ﻧﺒﻰ ﺑﻌﺪﻯ ﻭﺳﻴﻜﻮﻥ ﺧﻠﻔﺎﺀ ﻓﻴﻜﺜُﺮُﻭﻥ
“আমার পরে কোন নবী আসবে না বরং খলীফার আগমন ঘটবে?? তাদের সংখ্যা হবে অনেক।” সাহাবায়ে কেরামগন প্রশ্ন করলেন– ইয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ)!! তাহলে আমাদেরকে কি নির্দেশ দেন?? রাসূল (ﷺ) বলেন–
ﻓُﻮﺍ ﺑﺒﻴﻌﺔ ﺍﻻﻭﻝ ﻓﺎﻻﻭﻝ ﺃﻋﻄﻮﻫﻢ ﺣﻘﻬﻢ
“তাদের প্রথম জনের বায়আত পূর্ন করো তারপর পরবর্তী জনের বায়আত পূর্ণ করো এভাবে করে তাদের হক্ব পূর্ন করে দাও।”
এ হাদীসটি প্রমান করে সনদওয়ালা মুহাক্কেক আলেমদের নিকট বাইয়াত গ্রহন করতে হবে আর তাদের কাছ থেকেই দ্বীন শিখতে হবে। নতুবা পথভ্রষ্ট হওয়ার সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশী। মুসলিম শরীফের হাদীস–
ﺇﻥ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻌﻠﻢ ﺩﻳﻦ ﻓﺎﻧﻈﺮﻭﺍ ﻋﻤﻦ ﺗﺄﺧﺬﻭﻥ ﺩﻳﻨﻜﻢ
“নিশ্চই কুরআন হাদীসের জ্ঞান হলো দ্বীন। অতএব বিচার বিশ্লেষন করো কার কাছ থেকে তোমার দ্বীন শিখেছ।”
মুসলিম শরীফ কিতাবুল ইমারাত এর মধ্যে এসছে–
ﻭﻣﻦ ﻣﺎﺕ ﻭﻟﻴﺲ ﻓﻲ ﻋﻨﻘﻪ ﺑﻴﻌﺔ ﻣﺎﺕ ﻣﻴﺘﺔ ﺟﺎﻫﻠﻴﺔ
“যে ব্যাক্তি এমন অবস্থায় মারা যাবে যার ঘাড়ে বায়আত নেই। সে যেন জাহিলিয়্যাতের অর্থাৎ, অজ্ঞতার যুগের মৃত্যুবরণ করল।”
বায়আত গ্রহন তথা মুরীদ হওয়া ছাড়া মৃত্যুবরন করবে জাহিলিয়্যাতের মৃত্যু নসীব হবে। অতএব প্রশ্ন হলো আমরা কি অজ্ঞতার যুগের মৃত্যু চাই?? শুধু তাই নয় ফখরুদ্দীন রাযী (رحمه الله عليه) লিখেন– “যার পীর নেই তার দ্বীন নেই।”
উপরোক্ত আয়াতে কারীমা এবং হাদীস সমূহ প্রমান করে বাইয়াত গ্রহন করা শরীয়ত সম্মত কাজ। স্বনামধন্য মুহাদ্দিস আবদূল হক্ব মুহাদ্দেসে দেহলভী (رحمه الله عليه) তার “কওলুল জামিল” কিতাবের মধ্যে লিখেন বাইয়াত গ্রহন করা সুন্নাত। তাসাউফ শিখতে হলে অবশ্যই কামেল মুহাক্কেক পীরের নিকট বাইয়াত গ্রহন করতেই হবে। যত্র তত্র বাইয়াত গ্রহন করা নিষিদ্ধ।
#মুরিদ_হওয়া_ফরজঃ
মুসলিম শরীফের ২য় খন্ডে, ২০৯ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে, মুসলমান ঘরের ইসলামের প্রথম সন্তান, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের (رضي الله عنه) সাত অথবা আট বৎসর বয়সে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর হাতে মুরীদ হন।
হায়াতুস সাহাবার ১ম খন্ডে, ১৫০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে, নবীর ঘরের দুই দুলাল হযরত ইমাম হাসান ও হযরত ইমাম হুসাইন (رضي الله عنه) ছোট বয়সে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর হাতে মুরীদ হন এবং নবীর বংশের ও নবীর চাচাতো ভাই হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এবং নবীর চাচাতো ভাতিজা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জাফর (رضي الله عنه) ছোট বয়সে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর হাতে মুরীদ হন, যখন তাঁদের দাড়ী গজায়নি ও তাঁরা বালেগও হন নি। অন্যদিকে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক করতে হলে মুরীদ হওয়া জরুরী তা তাঁরা জানতেন। কেননা তাঁরা আল-কুরআন পড়তেন এবং সে কোরআন তাঁরা ভালভাবে বুঝতেন, কোরআন পাকে বর্ণিত হয়েছে–
ﺍﻥ ﺍﻟﺬﻳﻦ ﻳﺒﺎﻳﻌﻮﻧﻚ ﺍﻧﻤﺎ ﻳﺒﺎﻳﻌﻮﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻳﺪﺍﻟﻠﻪ ﻓﻮﻕ ﺍﻳﺪﻳﻬﻢ ( ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﻔﺘﺢ )
#অর্থঃ যারা আপনার হাতে মুরীদ হচ্ছেন তাঁরা মূলতঃ আল্লাহর হাতে মুরীদ হচ্ছেন। কেননা আল্লাহর হাত তাঁদের হাতের উপর রয়েছে।
#তথ্যসূত্রঃ [সুরা ফাতাহ, ১০নং আয়াত]
সাহাবাগণ খূব ভালভাবে আরো জানতেন, আল্লাহ তাআলার নৈকট্য ও সন্তুষ্টি এবং তাঁর ভালবাসা পেতে হলে মুরীদ হওয়া জরুরী। যেমনঃ কুরআনে বর্ণিত হয়েছে–
ﻟﻘﺪﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻦ ﺍﻟﻤﺆﻣﻨﻴﻦ ﺍﺫ ﻳﺒﺎﻳﻌﻮﻧﻚ ﺗﺤﺖ ﺍﻟﺸﺠﺮﺓ ( ﺳﻮﺭﺓ ﻓﺘﺢ ﺍﻻﻳﺔ )
#অর্থঃ নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্ট হয়েছেন ঐ সকল মুমিন সাহাবাগণের প্রতি যারা গাছের নীচে আপনার হাতে মুরীদ হয়েছেন।
#তথ্যসূত্রঃ [সুরা ফাতাহ, ১৮ নং আয়াত]
সাহাবাগণ মুরীদ হওয়ার লাভ ও ক্ষতি ভালভাবে জানতেন, তাই তাঁরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর হাতে মুরীদ হতেন। যেমনঃ তিরমিযী শরীফের ২য় খন্ডে, ১১৫ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন– “গাছের নীচে যারা আমার হাতে মুরীদ হয়েছেন তাঁরা কেউ জাহান্নামে যাবেন না।”
অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, জাদ্দ্ ইবনে কায়েস মুরীদ হয় নাই সুতরাং সে জান্নাতে যাবে না। মুসলিম শরীফের ২য় খন্ডে, ১২৮ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে, যে ব্যক্তি মুরীদ না হয়ে মরবে সে জাহেলী যুগের বেঈমান কাফেরের মত মরবে।
#প্রচারেঃ “দক্ষিণ গোয়ালবন্দ জামে মসজিদ।”
সম্পাদক : রনি কুমার দাস, প্রকাশক : মোঃ আল আমিন মিয়া রকি কর্তৃক প্রকাশিত
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয় : পশ্চিম ভোলাইল মেলিটিরী বাড়ি কাশীপুর ফতুল্লা নারায়ণগঞ্জ।
যোগাযোগ : ০১৫১১-৭০৫৩৮৪, ০১৯১৬-১৮৭২৫৪.
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত